Wednesday, June 30, 2021

প্রলাপ

ইদানিং মুশকিল হচ্ছে। আগেও হতো মাঝে মাঝে।
বাঙালি চেহারা ফেসবুকের বাইরে খুব কম দেখি। তাতে মানুষগুলো কল্পনায় হাটাচলা শুরু করে। হয়তো পুরাতন ইটের রাস্তার ছবি দেখলাম, তাতে দূর্বাঘাসও দেখা হয়ে যায়। কল্পনার মানুষদের কথাবার্তা শোনার আগেই মাথা টনটন করে।
হলদে রঙের রাবার ব্যান্ড পরা কন্যার চুলের ঝুটি আমার কল্পনায় নড়তে শুরু করে। সংলাপহীন এই জ্যন্ত সব কল্পনারা মাথা খারাপ করে দিচ্ছে।
অন্তত ফেসবুকে বাঙালীর গভীর বেদনাভরা মুখের উপস্থিতি কম। রাস্তায় রাস্তায় দেখা হওয়া করুন মুখেরা এখনো ডিজিটাল ডিভাইডের অপর পাশে বেশি মনে হয়।
আপন দুঃখ পরকে দেখাব না বলে আমাদের দুঃখের মুহুর্তরা এখানে এই ভার্চুয়াল গঙায় ভাসে না।
যাদের কপাল বড় হতে হতে মাথার মাঝে চলে গিয়েছে, অথবা যাদের কপাল ঢেকে গেছে বেয়াড়া চুলে, যাদের চোখ খুশিতে ছোট হয়ে হাসছে, অথবা পৃথিবীর সামনে যাদের চোখে শান্তি ও স্থিরতা সাজানো সব বাঙালি চোখ ও কপাল কথা বলছে।
তাদের দেখে ফেসবুক আমাকে পরামর্শ দিচ্ছে তুমি হয়তো এদেরকে চেনো। আমার মনে হয় সবাই পরিচিত। তবু চিনতে পারি না। অনেকেই হয়তো কোন এক রোদে একই গাছের ছায়া দেখেছিলাম। অন্তত একই মেঘের বিভিন্ন ছায়ায় ছিলাম আমরা।
একই শীতে ভিন্ন রঙের উলের জামা পরেছি আমরা, একই গান শুনেছি ভিন্ন কোন দিনে, একই রঙের ফুল ভিন্ন ভিন্ন তীব্রতায় দেখেছি।
প্রলাপ/
জুন ২৯, ২০২১

Thursday, June 24, 2021

ক্লান্ত ইউনিকর্ন



তোমার ঘ্রাণ পেতে ব্যাকুল হয়ে ছিলাম বহুকাল।

যারা বৃক্ষের মতন স্থির
অপেক্ষায় তাদের শেকড় গজায়,
হয়তো তাদের ভোতা খুড়ে লুকানো থাকে অদৃশ্য শেকড়…
বৃক্ষের তপস্যা আমার হৃদয়ে নেই।
আমি সময় ভাঙি অনন্ত সময়ের দিকে চেয়ে
যেখানে উড়ে যায় নক্ষত্র অথবা ধ্রুবনক্ষত্রের স্বর –
অসংখ্য চন্দ্রগ্রস্থ রাতে
নির্লীপ্ত জোৎস্নাগলা নিঃসঙ্গতায়
ঘুরতে ঘুরতে ঘুরতে
নক্ষত্রের পানে তাক করা আমার কপালে গজিয়েছে একটি শিং
প্রতিটি একান্ত আলো-আধারির ক্ষণে
আমার আর হাত থাকে না
বাতাস কিংবা জোৎস্না ছুঁয়ে দেখার
আমার চোখে বাতাস লাগে
নাকে চাঁদের ঘ্রাণ
ঠোট শুধু কাঁপতে থাকে
তোমার জড়তার মত
অপেক্ষা অসংখ্য সবুজ ঘাস শুকনো খড়ের গাদা
তুমি অথবা প্রেম এক লুকানো সুঁই
আমার শ্বাস প্রশ্বাসের সুতারা যেন জানে কোথায় খুঁজতে হবে হবে তোমায়
অতঃপর অপেক্ষার ঘাসের মাঠে খুঁজতে খুঁজতে
তোমার ছায়া
আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন হই এবং দাঁড়িয়ে থাকি অলৌকিক অশ্বের মত
শুনেছি ইতিহাসের শৈশবে সিন্ধু নদীর পাড়ে
তোমার ঘর ছিল
ঢেউয়ে ঢেউয়ে দুলতে থাকা
গাঢ় অন্ধকারে
ফসলের সুখ পেরিয়ে
ডুমুর গাছের ছায়া
তোমাকে বসতে দিত
মায়ার হৃদয় পেতে
(হয়তো সেও অপেক্ষায় ছিল তোমার!)
শিকারী সমাজ যারা পোষে পালোয়ান
আমাকে বধ্য ভেবে ছুঁড়ে তীর হানে বর্শা পাতে ফাঁদ
তীক্ষ্ম ঈর্ষা, তীব্র ঘৃণা, গহন উপেক্ষায়
বধ করতে চায় তারা নিরন্তর;
তোমার প্রেম বা প্রেমাধিক প্রেম
আমায় ভুলিয়ে রাখে
প্রেমের ভিতর।
-
জুন ২৩, ২০২১
Image: Kitiara, 2018 / www.goodfon.com

Sunday, June 20, 2021

খড়ি মোল্লাদের মাসনা সুলাসা

ইদানিং কিছু ফাতরা টাইপের মোল্লার উদয় হয়েছে। এরা ইসলাম সম্পর্কে দুয়েক পাতা পড়লেও কাণ্ডজ্ঞানের দিক থেকে বেক্কল। এদের কাঠমোল্লাও বলা যাবে না, খড়ি মোল্লা বলা যেতে পারে বড় জোর। এরা মাসনা সুলাসার আলাপ করে বেড়ায়। এদের ইসলাম সম্পর্কে বুঝ কম, কাণ্ডজ্ঞানও খারাপ।

কোরআনের বিবাহ সংক্রান্ত আয়াতে ‘আমর’ বা আদেশসূচক ক্রিয়াপদ ব্যবহার করা হলেও তা আবশ্যক অর্থে ব্যবহৃত হয়নি। অধিকাংশ আলেম বিয়ে ফরজ হওয়ার বিষয়কে শর্ত সাপেক্ষ মনে করেন। বিয়ে ফরজ হওয়ার নিয়ম আর্থিক সক্ষমতা থাকার পর শারীরিক চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার উপর নির্ভরশীল। কারো শারীরিক চাহিদা আছে, কিন্তু পয়সা নাই – তার জন্য পরামর্শ হলো রোজা রাখা। (এখন রোজা না রেখে শারীরিক চাহিদা বাড়ায় এমন খাবার বর্জন করার মাধ্যমেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।) মজার বিষয় হচ্ছে – এই একই পরামর্শ বাংলাদেশে উতলা হয়ে যাওয়া কিছু ফাতরা মোসলমান পুরুষদের বেশি বেশি শোনা উচিত। তাদের যদি মনে হয় শরীর তাদের খুব উৎপাত করছে, তাদের উচিত রোজা রাখার মত মহতী ইবাদতে মশগুল থাকা। উত্তেজক খাবার না খাওয়া। সমাজে ফাতরামি ছড়ানোর দরকার নেই।

একাধিক বিয়ের বিষয়টি ব্যতিক্রমি নিয়ম। সাধারণ নিয়ম নয়। কেউ যদি বিয়ে করতে না চায়, তাও একটি ব্যতিক্রমি বিষয়।

এক স্ত্রী বিদ্যমান থাকা অবস্থায় দ্বিতীয়/তৃতীয়/চতুর্থ বিয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইনে বাধা নেই। পুরুষের জন্য বহুবিবাহ নিষিদ্ধ নয়। তবে বিবাহিত থাকা অবস্থায় আরো বিয়ে করতে চাইলে আইনগত পদ্ধতি ও শর্ত মানতে হবে। বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনগত পদ্ধতি ও শর্তগুলো শরীয়ার কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন এবং সুষম ব্যাখ্যা বলা চলে। কোরআনের সাবধান বাণী ‘আর যদি তোমরা ভয় পাও যে তোমরা ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে পারবে না’—র আইনি রূপ পাওয়া যায় এসব শর্ত ও পদ্ধতিতে।

শর্তগুলো কি?

১. সালিশের মাধ্যমে এমন বিয়ের অনুমতি পেতে হবে। কেউ যদি মনে করে বিবাহিত অবস্থায় তার আরো বিয়ে করা প্রয়োজন – এই সিদ্ধান্ত সে নিজে নিলে তার পক্ষপাতমূলক বা বায়াসড হওয়ার ঝুঁকি আছে। এছাড়া বর্তমান স্ত্রীর স্বার্থ জড়িত থাকায় তার প্রতিনিধিত্ব ছাড়া সিদ্ধান্ত ন্যায্য হতে পারে না। তাই সালিশ গঠিত হবে স্বামীর প্রতিনিধি, বর্তমান স্ত্রীর প্রতিনিধি নিয়ে। এই সালিশ যদি যৌক্তিক এবং প্রয়োজনীয় মনে করে তবে কারণ উল্লেখপূর্বক এবং যদি কোন পক্ষের কোন যৌক্তিক শর্ত থাকে সেই শর্ত সাপেক্ষে এমন বিয়ের অনুমতি দিতে পারে।

সালিশের সিদ্ধান্তে যদি কেউ সন্তুষ্ট না হয় তবে সে আদালতের কাছে যেতে পারে। এক্ষেত্রে আদালতের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।

২. প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বিদ্যমান স্ত্রী/স্ত্রীগণের অনুমতি। তাদের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করতে পারবে না।

শর্ত লঙ্ঘন করলে তাকে দুটি পরিণতি ফেইস করতে হবে – প্রথমত, তৎক্ষণাৎ স্ত্রীর দেন মোহর সম্পূর্ণ পরিশোধ করতে হবে; দ্বিতীয়ত, এক বছর কারাদণ্ড অথবা দশ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় ধরনের শাস্তি পেতে হবে।


মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১, ধারা ৬

বহুবিবাহ:

১) কোন ব্যক্তি বিবাহিত অবস্থায় সালিশী কাউন্সিলের লিখিত অনুমতি ছাড়া আর বিয়ে করতে পারবে না; বা এধরনের অনুমতি ছাড়া কোন বিয়ে ১৯৭৪ সনের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) আইন এর অধীনে নিবন্ধিত হবে না।

২) ১নং উপধারা অনুযায়ী অনুমতির জন্য নির্ধারিত ফিস-সহ চেয়ারম্যানের কাছে দরখাস্ত করতে হবে; এবং তাতে প্রস্তাবিত বিয়ের কারণ এবং এ বিয়ের ব্যাপারে বর্তমান স্ত্রী অথবা স্ত্রীগণের সম্মতি নেয়া হয়েছে কিনা তা উল্লেখ থাকবে।

৩) ২নং উপধারা অনুযায়ী দরখাস্ত পাওয়ার পর চেয়ারম্যান দরখাস্তকাী ও বর্তমান স্ত্রী অথবা স্ত্রীগণের প্রত্যককে একজন করে প্রতিনিধি মনোনীত করতে বলবেন। (প্রতিনিধিদের নিয়ে) গঠিত সালিসী কাউন্সিল প্রস্তাবিত বিয়ে প্রয়োজনীয় ও ন্যায়সঙ্গত মনে করলে যৌক্তিক শর্ত থাকলে তা সাপেক্ষে দরখাস্ত মঞ্জুর করতে পারেন।

৪) দরখাস্তের বিষয় নিষ্পত্তি করার ক্ষেত্রে সালিশী কাউন্সিল কারন উল্লেখ করবেন; নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যে কোন পক্ষ নির্দিষ্ট ফিস দিয়ে নির্দিষ্ট দফতরে সহকারী জজের নিকট রিভিশনের জন্য আবেদন করতে পারে; এ বিষয়ে তাঁর সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত বিবেচিত হবে এবং কোন আদালতে এ বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।

৫) কোন ব্যক্তি যদি সালিশী কাউন্সিলের অনুমতি ছাড়া অন্য বিয়ে করে তবে সে-

ক) বর্তমান স্ত্রী অথবা স্ত্রীগনের তলবী ও স্থগিত দেনমোহর সম্পূর্ণ তৎক্ষনাৎ পরিশোধ করবে। দেনমোহর পরিশোধ না করলে তা বকেয়া ভূমি রাজস্বরূপে আদায়যোগ্য হবে; এবং

খ) অভিযোগের ভিত্তিতে অপরাধী সাব্যস্ত হলে এক বৎসর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা দশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।


এই আইন ভাল না খারাপ সেই মোরালিস্ট আলোচনা এখানে করতে চাই না। তবে খড়ি মোল্লাদের যদি জিজ্ঞেস করেন, ইসলামে কি নারীদের দাসী হিসেবে রাখার বৈধতা আছে কিনা? তারা তখন আইসিসের মতন যৌনদাসী খুঁজতে কিতালের জন্য বেড়িয়ে পড়তে পারে।

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম পরষ্পরকে বিরোধী হিসেবে বয়ানের অন্তত দুইটা ধারা আছে। এই দুই ধারা একে অপরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। একদল মুক্তিযুদ্ধের দখল চায়...