যার যা কাজ, সে তা ঠিকঠাক করলেই ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ভাল থাকে। মানুষের সুখ-শান্তি বাড়ে। জীবনের জটিলতা কমে।
যার যা কাজ, সে যেন তা করে - এই কথা আমার জন্য তাই মোটিভেশনাল। নিজেরে লাইনে রাখার জন্য দরকারি কথা। নিজের কাজ যেন করি।
.
আমার একটা কাজ - আমি নিজেই ঠিক করেছি - চিন্তা করা। তাই এই বিষয়টা নিয়ে একটু চিন্তা করলাম।
.
যার যা কাজ, তা তো করতে হবে, কিন্তু -
কার কাজ কি?
একটু জটিল প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তর যারা সব সময় স্পষ্ট জানেন এবং মনে রাখেন তাদের জন্য জীবন শান্তির। মানে অশান্তি আসলেও আপনি তা সামলে নিতে পারবেন, যদি আপনি জানেন আপনার কাজটা কি।
দুঃখের ব্যাপার, অতিশয় দুঃখের ব্যাপার, অতি অতি অতিশয় দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে আমরা অনেকেই জানিনা আমাদের কাজটা কি!
কিভাবে জানবেন আপনার কাজ কি? বাঙালিরা এ ব্যাপারে খুবই হেল্পফুল। নিজের কাজ অনেকে না জানলেও আরেকজনের কাজ কি তা জানে। যদিও আমরা এটাকে বলি আরেকজনের জীবনে নাক গলানো, কিন্তু আপনি যদি নিজে না জানেন আপনার কাজ কি তাহলে এরকম অন্যের নাক গলানোর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন। অথবা যেচে দেয়া উপদেশ বার্তার মাধ্যমে আপনি আপনার কাজ জানতে পারবেন। তবে প্রজ্ঞাবান মানুষরা সচরাচর এই উপদেশ দেন না। কয়েকজন সেরা শিক্ষকের সাথে কথা বলেছিলাম কিশোর বয়সে। তারা উল্টো জানতে চাইতেন আমি কি চাই, তারপর সেই বিষয়ে বলতেন দরকারি কথা। সেইটাই হওয়া উচিত বলে মনে হয়।
.
কাজ ঠিক করা, বা কাজ থাকা যেমন ভাল, আপনার কাজ না থাকলেও জীবন ভুল হয়ে যায় না, শেষ হয়ে যায় না, নিরানন্দ হয়ে যায় না। কাজ যে থাকতেই হবে এমন কোন অলঙ্ঘনীয় বিধান কার্যকর নাই। জীবনের চাপে অথবা অপরের যাপনের চমকে আমরা হয়তো প্রায়ই দুঃখে পড়ি - কাজ নেই। যদি কাজ প্রয়োজন মনে হয়, আরা কাজ না থাকে - তবে কাজ খোঁজাটাই কাজ। কবি বলেছেন - ‘কাজ চাই, কাজ। ... দালালি থেকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ... ”
যেহেতু আমরা জানিনা আমাদের কাজ কি, তাই বিভিন্ন উৎসে গিয়ে আমরা সেই করনীয় খুঁজি।
বিভিন্ন বিশ্বাস ব্যবস্থা কাজ ঠিক করতে মানুষের গাইড বই হিসেবে সহায়তা করে। নাবালক মানবজাতির গাইড বই দরকার হয়। এই গাইডকে বিপদজনকভাবেও ব্যাখ্যা করেন। এক্ষেত্রে এটুকু উল্লেখ করা প্রয়োজন যে মানুষের জীবন শুধু পারলৌকিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তার ইহলৌকিক জীবন আছে। এমনকি পারলৌকিক জীবন ইহলৌকিক জীবনের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। পরকালসর্বস্ব চিন্তা আর পরকালীন চিন্তাও এক নয়। মানুষের সুখ-শান্তি শুধু পরকালেই পাওয়া যাবে, ইহকালে সুখ-শান্তি সম্ভব নয় - এমন চিন্তা পরকালসর্বস্ব। আর ইহকালে কল্যানকর কাজ, এবং তার মাধ্যমে সুখ শান্তি সম্ভব এমন ইহকালীন চিন্তা পরকাল সংক্রান্ত চিন্তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
মানুষের নিজের জীবনের কাজ ঠিক করার জন্য তার প্রজাতিগত অভিজ্ঞতা আরেক মূল্যবান উৎস। তাই মহামানব মহামানবীদের জীবনের কাছে অনেকেই যাতায়াত করেন। বন্দনা করেন সে যাত্রাকে - ‘মহাজ্ঞানী মহাজন, যে পথে করে গমন, হয়েছেন প্রাতঃস্মরনীয়।/ তাদের সে পথকে করে অনুসরণ, আমরাও হবো বরনীয়।’ তবে প্রাণী হিসেবে আমরা নিজেদের জীবনের কাজ ঠিক করার জন্য আমাদের যারা লালন-পালন করেন - যেমন আব্বা আম্মা - তাদের কাছে যাই বেশি; তাদের দ্বারা প্রভাবিত হই বেশি। মানুষের জ্বিনগত স্বভাব।
তবুও অনেক লোকেই নিজেদের কাজ ঠিক করতে পারে না। মানুষ যে কোন কিছু করতে পারে, কিন্তু সব কিছু পারে না। তাই তাকে বাছাই করতে হয়। কাজ বাছাই করা তাই জরুরি।
.
যার যা কাজ তা ঠিকমত করলে সমাজের সুখ যে বৃদ্ধি পায় এ কথা আধুনিক দুনিয়ায় ভালমতন বুঝেছেন এবং বুঝিয়েছেন অ্যাডাম স্মিথ। ডিভিশন অব লেবার নামক থিওররি কাজের দুনিয়ায় এখন প্রধান এক নিয়ম। সেই নিয়ম যে কেমন অ্যাবসার্ড এবং ভায়োলেন্ট হয়ে উঠে তা এসেছে কার্ল মার্কসের বড় বইয়ে। শুধু মজুরি প্রাপ্তি ছাড়া কাজের ভেতর আর কোন অর্থময়তা থাকে না - এমনই রিডাকশিও অ্যাড অ্যাসুর্ডুম টাইপের হাস্যকর বাস্তবতা তৈরি হয় অ্যাডাম স্মিথের ভাগাভাগি করা কাজের ফ্যাক্টরিতে।
আমরা সালমান এফ রহমান আর একজন গোয়েন্দা প্রধানের আলাপের মধ্যে এ বিষয়টা বুঝতে পারি। যেহেতু রাষ্ট্রের কাজের ভাগাভাগি আছে, গোয়েন্দাদের যা কাজ তার কিছুটা বাইরে (!) না গেলে তার সিকিউরিটি চেক করার কাজটি অর্থহীন এবং অ্যাবসার্ড হয়ে পড়তো। আর কাজের ভাগাভাগির সেই অ(অসৎ)সুবিধাই এনজয় করতে চেয়েছিলেন জনাব রহমান।
ভায়োলেন্সটাকে বলা যায় অ্যালিয়েনেশন। শ্রমিক থেকে শ্রমকে বিচ্ছিন্ন এক পণ্য আকারে হাজির করে এই কাজের ভাগাভাগি। দাস শ্রমে দাসকে যতটা তার শ্রমকে যতটা বিচ্ছিন্ন করা যায়, তার চেয়ে বেশি আলাদা করা যায় সম্মতিনির্ভর শ্রম ব্যবস্থায়। মানুষ আর মেশিন সমান সমান হয় প্রথমে, সেইটা হইলেই মানুষের চেয়ে ইফিসিয়েন্ট এবং বেশি শ্রমের মেশিনের মাধ্যমে মানুষকে কর্ম থেকে উৎখাত করা সম্ভব হয়। সেই অল্পবুঝা গভীর আলাপ আর বাড়ানোর ক্ষমতা আমার নাই।
কাজের শ্রেণিবিভাগকে নাকচ করা এক নান্দনিক ইউটোপিয়া হচ্ছে সকালে মিস্তিরি, বিকালে জেলে, সন্ধ্যায় একজন গায়ক হইতে পারার মত অর্থময়, অবিচ্ছিন্ন, এক কাজের মানুষের জীবন। মানুষের সেই সুখের সম্ভাবনা রয়েছে। মানব প্রজাতির অনেকেই তা কিছু কিছু ভোগ করেছেন। এখন যারা তা পারেন, তা হাজির হয় অল্প কিছু লোকের লাক্সারি হিসেবে। অথচ মানবজাতির সকলেরই জীবনের এই আনন্দময় কর্মময় এবং অর্থপূর্ণ জীবনের দর্শন বা অর্থনীতি এক নম্বরে আসার কথা।
যতদিনে পৃথিবীটা সেই স্বপ্নের দেশ না হচ্ছে ততদিন সুখ শান্তির এক টুকরা নিজের জন্য আদায় করতে হয়তো কোন একটা ভোকেশন বা প্রফেশন ঠিক করা দরকার। যে তা ঠিক করলো, সে যাতে সমাজের আর দশের সাথে মিলে দশের কাজে বিঘ্ন না ঘটায়ে কর্ম করিয়া বাঁচতে পারে তার নিশ্চয়তা রাষ্ট্রীয় জীবনের খুটা।
.
এইটার আরো অ্যাডভান্স দিক হচ্ছে স্পেশালাইজেশন।
.
জীবনের প্রবাহমান স্রোতে কত উথাল-পাতাল ঢেউ থাকবে। তবে নিজের ভেলা বেয়েই যাইতে হবে। আমাদের সময়ের একজন বড় কবি সায়ান তাই বলছেন, মাঝে মাঝে এমন হবে -
”হয়তো তোমার জন্যে এটা সু-সংবাদের লগ্ন
রেখো নিজের দু কান বন্ধ থেকো আপন ধ্যানেতে মগ্ন
এটা নতুন কিছুই নয়তো এ যে সকাল বিকাল ঘটছে
কতো সোনা দিয়ে বাঁধা ঝকঝকে নাম তাতেও তো জং ধরছে”
.
নিজের দুকান বন্ধ রেখে আপন ধ্যানেতে মগ্ন থাকার উপদেশ তিনি দিয়েছেন। তবে আপন ধ্যানে মগ্ন থাকার রাষ্ট্রীয় আয়োজন যেহেতু এখনো অসম্পূর্ণ তাই মাঝে মাঝে চোখ-কান খুলে আমাদের মিছিলে নামতে হয়। আমরা নামি। মিছিলের ভিতর দিয়ে বদলে যাওয়া মানুষ হয়ে ঘরে ফিরি, হাসপাতালে কাতরাই, কবরে ঘুমাই।
.
(জীবন যদি অন্য দিকে নিয়ে যায়, হয়তো যাব; মানুষের ঠিক করার বাইরেও জীবন আছে।) মাঝে মাঝে মনে হতে পারে খুবই ফ্রাজাইল, আনবিয়ারেবল মিনিংলেসনেস অব বিয়িং তথা অর্থহীনতার চতুর আমন্ত্রণও আসতে পারে, বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে শ্রম এবং জীবন...
তবু কাজ ঠিক করো
‘থেকো আপন ধ্যানেতে মগ্ন’
..
কাজের শ্রেণিবিভাগকে নাকচ করা এক নান্দনিক ইউটোপিয়া হচ্ছে সকালে মিস্তিরি, বিকালে জেলে, সন্ধ্যায় একজন গায়ক হইতে পারার মত অর্থময়, অবিচ্ছিন্ন, এক কাজের মানুষের জীবন। মানুষের সেই সুখের সম্ভাবনা রয়েছে। মানব প্রজাতির অনেকেই তা কিছু কিছু ভোগ করেছেন। এখন যারা তা পারেন, তা হাজির হয় অল্প কিছু লোকের লাক্সারি হিসেবে। অথচ মানবজাতির সকলেরই জীবনের এই আনন্দময় কর্মময় এবং অর্থপূর্ণ জীবনের দর্শন বা অর্থনীতি এক নম্বরে আসার কথা।
যতদিনে পৃথিবীটা সেই স্বপ্নের দেশ না হচ্ছে ততদিন সুখ শান্তির এক টুকরা নিজের জন্য আদায় করতে হয়তো কোন একটা ভোকেশন বা প্রফেশন ঠিক করা দরকার। যে তা ঠিক করলো, সে যাতে সমাজের আর দশের সাথে মিলে দশের কাজে বিঘ্ন না ঘটায়ে কর্ম করিয়া বাঁচতে পারে তার নিশ্চয়তা রাষ্ট্রীয় জীবনের খুটা।
.
এইটার আরো অ্যাডভান্স দিক হচ্ছে স্পেশালাইজেশন।
.
জীবনের প্রবাহমান স্রোতে কত উথাল-পাতাল ঢেউ থাকবে। তবে নিজের ভেলা বেয়েই যাইতে হবে। আমাদের সময়ের একজন বড় কবি সায়ান তাই বলছেন, মাঝে মাঝে এমন হবে -
”হয়তো তোমার জন্যে এটা সু-সংবাদের লগ্ন
রেখো নিজের দু কান বন্ধ থেকো আপন ধ্যানেতে মগ্ন
এটা নতুন কিছুই নয়তো এ যে সকাল বিকাল ঘটছে
কতো সোনা দিয়ে বাঁধা ঝকঝকে নাম তাতেও তো জং ধরছে”
.
নিজের দুকান বন্ধ রেখে আপন ধ্যানেতে মগ্ন থাকার উপদেশ তিনি দিয়েছেন। তবে আপন ধ্যানে মগ্ন থাকার রাষ্ট্রীয় আয়োজন যেহেতু এখনো অসম্পূর্ণ তাই মাঝে মাঝে চোখ-কান খুলে আমাদের মিছিলে নামতে হয়। আমরা নামি। মিছিলের ভিতর দিয়ে বদলে যাওয়া মানুষ হয়ে ঘরে ফিরি, হাসপাতালে কাতরাই, কবরে ঘুমাই।
.
(জীবন যদি অন্য দিকে নিয়ে যায়, হয়তো যাব; মানুষের ঠিক করার বাইরেও জীবন আছে।) মাঝে মাঝে মনে হতে পারে খুবই ফ্রাজাইল, আনবিয়ারেবল মিনিংলেসনেস অব বিয়িং তথা অর্থহীনতার চতুর আমন্ত্রণও আসতে পারে, বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে শ্রম এবং জীবন...
তবু কাজ ঠিক করো
‘থেকো আপন ধ্যানেতে মগ্ন’
..

This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.