রাজাবাজারের গলি শেষ হয় না
আমি হাটতে থাকি
অনিঃশেষ আকরাবাকরা মোচড়ানো গলি
জাম-লটকন-আমের ভ্যান
লালসবুজ শাকের দোকান
আছে ঘন আর হালকা, ভারী আর পাতলা
কোকড়ানো আর সরল - বিভিন্ন রকম সবুজ শাক
আর ছোট ছোট পাতার লাল শাক
দেখতে কচি আমপাতার মতন লাল কিংবা আরেকটু কাছে থাকলে যতটুকু বেশি লাল দেখা যায় ততটুকু.
মোড় ঘুরলেই
একটা শোকার্ত ব্যানার।
কোণা ছেড়া, ভাঙা ফ্রেম, রোদে পোড়া
একটা ব্যানার শোকার্ত না হয়ে পারে না।
যদিও মা কালীর নিয়মে ব্যানারে আগামী মাসের তারিখ....
এই আগাম শোক কখনো শেষ হয় না।
আমাদের সকল গত হওয়া শোক ঝুলতে ঝুলতে
বাঁদুরের মতন ধরে রাখে আমাদের সব আগামীর শাখা প্রশাখা
বৃক্ষ কিংবা সিমেন্ট আসল কিংবা নকল বাস্তব কিংবা ভার্চুয়াল
সব শাখায় ঝুলতে থাকে ব্যানার এমবেলিশমেন্ট অব মহামান্য শোক
গলিটার শোক হইতে থাকে আম গাছের চারাটার জন্য
বয়স বেশি হয় নাই তার
অথচ বছর ধইরা সে শোক গলায় ঝুলায়ে দাঁড়ায়ে আছে
জংধরা মোটা তারের বন্ধন থেইকা মুক্তি চাইতে চাইতে সে ক্লান্ত হয়ে গেছে
মনে হয় কয়েক বছরের করুন মেডিটেরিনিয়ান দাস
জীবনের শোকচক্র অতিক্রম করার জন্য জন্মাইছিল গাছ হয়ে
রাজাবাজারের এই গলিতে
ফলবান হইলেই তার মিলবে মুক্তি
এমন ছিল গাছেদের ঈশ্বরের সাথে তার বাইলেটারাল ট্রিটি
সে এখন গলায় বানছে নতুন জিআই তারের শোক
তবু শক সইতে পারলেও শোকমুক্তি ঘটে নাই তার...
এসব ভাবতে ভাবতে দেখি
কিছু লোক আয়েস কইরা টানতেছে বিদেশি বিড়ি
(হালার মেশিন ছোয়াইলে তামাক হয় টোবাক্কু আর জাহাজে চড়লে বিড়ি হয় সিগারেট)
ফুটপাথ দখল করার মতন চেগায়া দাঁড়ায়ে আছে
ধইঞ্চা গাছের মতন নির্ভীক
মনে হয় তাগোরে জাগ দিলে ধইঞ্চা গাছ থেইকাও বাইর হইবো পাট!
এরই মাঝখান দিয়া একটা হ্যাংলা পাতলা লোক
(চেহারায় যেন মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ কিংবা জহির রায়হান)
চলে গেল হাঁচতে হাঁচতে
আমার খালি মনে হইতে থাকে
হাঁচতে হাঁচতে যেই লোক ইগনোর কইরা হাইটা গেল
তার ভেতরেও আছে অনেক জিআই পেচায়ে বানানো ইন্টারনাল সাপোর্ট
শক হজম করতে পারে এমন ব্যাকবোন
লোকটা মিলায়ে গেল এই রাজাবাজারের গলিতেই।
আরো কত গলি আছে!
আছে হাঁচতে হাঁচতে হাইটা যাওয়া হ্যাংলা পাতলা লোক
(নাকি ভাবছিলাম শুধু আমি
আসলে সবাই হইতে চায় আমগাছ -
গলায় জিআই তারে ঝুলানো থাকে শোক)
~শোক~