Friday, September 23, 2022

পাগলা ডুমুর ২


ঈশপের এক ব্যাঙ ছিল। ব্যাঙের মাথায় মনি কিংবা সাতরাজার ধন ছিল কি ছিল না, তা তিনি বলে যাননি। বরং নীতির গল্প বলে গিয়েছিলেন। যখন পৃথিবীতে হাতুড়ে ডাক্তারদের আগমন ঘটেনি তখনকার কথা। সেই কুয়োর ব্যাঙ গ্যাঙর গ্যাঙর গ্যাঙ - নিজেরে ঘোষণা দিল মহাকবিরাজ হিসেবে। ব্যাঙের ভাষা ব্যাংরেজিতে সে বক্তিমা দিয়ে দিয়ে বিদ্যে জাহির করলো। কঠিন অস্পষ্ট ধ্বনিসমষ্টির ভাণ্ডার নিয়ে বন-জলের সকল পশুপাখিমৎসকূলের রোগনিরাময়ের ঘোষণা দিল সে। এমন কোন অসুখ বিসুখ নেই যা তার বিদ্যা ও নিরাময়ের অতীত। কেউ মানতে না চাইলে ব্যাংরেজির কঠিন পরিভাষা অপরিচিত শব্দবাক্য হাজির করে ভড়কে দিয়ে তবে স্বীকৃতি আদায় করে ছাড়তো। উত্তরাধুনিক গম্ভীর-জটিল-সজারুকাটা দর্শনের সাথে সেসবের সামান্য মিল থাকতে পারে। আর বহুকালের শাস্ত্রশ্লোক অনর্গল উচ্চারণের রীতির সাথে তার দূরত্ব বেশি নয়। এইভাবে মহাকবিরাজ কুয়োর ব্যাঙের চিকিৎসাপদ্ধতি চলছিল বনপ্রাণে। মহাকবিরাজকে প্রশ্ন করে সেই সাধ্য কারো নেই।


একদা এক শেয়াল, তখনো তার নামের পরে পণ্ডিত উপাধি যুক্ত হয়নি, সেই মহাকবিরাজকে জিজ্ঞাসিল - কবিরাজ মশায়, আপনে ত সকলের রোগবালাইবদসুরতের দাওয়াই জানেন, তবে এমন এবড়ো দেহ, থেবড়ো মুখ, ডেঙা ল্যাটকা ঠ্যাং আর বিশ্রি স্বরের গ্যাঙর গ্যাঙর গ্যাঙ কণ্ঠস্বর নিয়ে আপনকার করুন জীবনের দাওয়াই কি কিছু পেয়েছেন? মানে আপনে সকলের রোগ সারান, আপনার নিত্যজ্বর সারবে কিভাবে?


সেই থেকে ব্যাঙেরা মহাকোবরেজ বা সব্বার ডাক্তার হওয়ার দাবি ছেড়ে দিয়েছেন। আর মানুষেরা কিংবা ঈশপেরা বুঝে গিয়েছে যে নিজের ব্যামো সারাইতে পারে না, তার কাছ থেকে সমাধান নেয়ার বেলায় সতর্ক থাকতে হবে। অন্তত শিয়ালের মত, আজ্ঞে শিয়াল পণ্ডিতের মত, সন্দেহ জানায়ে রাখতে হবে।

-
ঈশপের ব্যাঙ/ পাগলা ডুমুর ২
জ্যামাইকা, ০৯/২২/২০২২

Thursday, September 8, 2022

আকবর আলি খান


বিতর্ক চর্চার জন্য তাঁর চিন্তার সাথে পরিচয় হয়। 'পরার্থপরতার অর্থনীতি' অর্থনীতি বিষয়ক বিতর্কের জন্য অনেকটা রেফারেন্স হিসেবে পড়তাম।

ফোর্থ ইয়ারে চিনলাম তার বই Discovery of Bangladesh: Explorations into the dynamics of a hidden nation. ইংরেজি বই পড়ে হজম করা তখন দুঃসাধ্য ছিল। ২০১৪ তে সে বইয়ের বাংলা পড়লাম - 'বাংলাদেশের স্বত্তার অন্বেষা'। বাংলাদেশের গ্রাম বিষয়ে তার পর্যবেক্ষণ যেন কতকিছু একসাথে দেখায়ে দিল। জাতিবাদ বুঝতে পারলাম যেন। বহুজাতির ভারতকে একমাত্রার মহাভারতীয় ঐতিহ্য হিসেবে প্রচারের ফাঁকফোকর দেখা গেল। (বাংলায় ইসলাম ধর্মের প্রসার বিষয়ে তার তত্ত্ব খুব কনভিন্সিং না হলেও ইউনিক। তিনি নিজে তা আপডেট করেছেন কয়েক বছর আগে। তবে তার ডিসকভারি অব বাংলাদেশ থেকে খুব পরিবর্তন করেছেন বলে মনে হয় না।)

তার বক্তব্য শোনার সুযোগ হয়েছে দুয়েকবার। আইন বিভাগে এথিকস ক্লাব থেকে দিনব্যাপী ওয়ার্কশপ আয়োজন করেছিলাম আমরা। সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত সেই ওয়ার্কশপে বিচার বিভাগের করাপশন নিয়ে শিরোনাম ফোটানো মন্তব্য করেছিলেন: 'বিচার বিভাগ জুয়ার আড্ডায় পরিণত হয়েছে'।

বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের বন্ধ্যাত্বের সময়ে তিনি কখনো কথা ও চিন্তায় আপোষ করেননি, নীরবতার পাপে পাপী হননি। তার কলিজাভরা সাহস মুক্তিযুদ্ধের ভিতর দিয়ে পাকাপোক্ত হয়েছে, যে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে কারাদণ্ডের রায় হয়েছিল।

বাংলাদেশের দুঃখ হচ্ছে বাংলাদেশে আরো আরো পেশাদার আমলা বুদ্ধিজীবীদের সাথে তার তুলনা করলে মেরুদন্ড আর কলিজার জায়গায় আপোষ আর হতাশা পাওয়া যাবে।

জীবনের শেষ পর্যন্ত এত প্রোডাক্টিব ছিলেন তিনি, তা অসাধারণ অনুপ্রেরণার। কয়েকমাস আগে পড়লাম তাঁর 'অবাক বাংলাদেশ' বই থেকে। প্রধানমন্ত্রী পদে কতবার থাকা যাবে তা সীমিত করার মাধ্যমে নির্বাহী ক্ষমতা এবং তার এবিউজ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে - এমন প্রস্তাবের পক্ষে গেইম থিওরি থেকে যুক্তি দিয়েছেন।

লেখক হিসেবে তার রসবোধ আর গবেষণা দক্ষতা সৈয়দ মুজতবা আলীর মতো অসাধারণ। সৈয়দের সাথে তফাৎ - তিনি সাহিত্য সমালোচনা লিখলেও ক্রিয়েটিভ রাইটিং প্রকাশ করেননি।

আকবর আলি খানের জীবন সুন্দর জীবনের নমুনা। লোকেরা বলে 'এমন জীবন করিবে গঠন, মরনে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন;' তাঁর জীবন তেমনি সুন্দর।

খোদা, আমাদের বুদ্ধিজীবীদের আকবর আলি খানের মত কলিজাভরা সৎসাহস দিও; সুন্দর জীবন দিও…

(পুনশ্চ: Freakonomics আর Superfreakonomics এর অনুবাদ 'আজব ও জবর আজব অর্থনীতি'তে যেসব ক্রিটিক বাংলায় হাজির করেছেন তা বহু পাঠককে ইকনোমিকসে আর গবেষণায় উৎসাহিত করবে।)

_

৮ সেপ্টেম্বর ২০২২



মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম পরষ্পরকে বিরোধী হিসেবে বয়ানের অন্তত দুইটা ধারা আছে। এই দুই ধারা একে অপরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। একদল মুক্তিযুদ্ধের দখল চায়...