Friday, September 20, 2024

আবু বকর থেকে তোফাজ্জল ও বাংলাদেশ ২.০

১.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট থাকার সময়ে আমাদের পাশের হল - এফ রহমান - এর আবু বকর নামে এক স্টুডেন্ট নিহত হন। ছাত্রলীগের দুইপক্ষের মারামারিতে গুলির আঘাতে নিহত হন আবুবকর। তখন শুনেছি গুলি লেগেছিল তার মাথায়। প্রায় সাত বছর পর জানা যায় আবু বকরকে কেউ খুন করেনি। (প্রথম আলো ২৬/০১/২০১৮)।
নক্ষত্রের দোষেই জগতে বহু ঘটনা ঘটে!
ছাত্রলীগের ১০ নেতাকর্মী সবাই খালাস পেয়েছেন সেই মামলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এতো এতো গৌরবের অগোচরে মামলার আপিলের তারিখও নাকি পার হয়ে গিয়েছে। তারো কয়েকবছর পর একটি উপন্যাস হয়েছে, ‘আমি আবু বকর’ নামে, পড়ি নাই, আইনের অধ্যাপকদের এ বিষয়ে গবেষণা হলে পড়তাম!
তবে আবু বকরের মৃত্যুর মাস খানেক পর তার ফাইনাল ইয়ারের রেজাল্টে তিনি প্রথম হন। রেজাল্টের খবর পেয়ে আবু বকরের মা রাবেয়া খাতুন বলেছিলেন, ‘আমার নির্দোষ বাবারে যারা হত্যা করল, তাগো বিচার হইলো না! এইডা ক্যামন দেশ!’
২.
২০১৩ সালে আমার একজন বন্ধুকে কনভোকেশনের আগের দিন মারধোর করার পর হলের ছাদ থেকে ফেলে দিতে চেয়েছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হলের একজন কর্মচারী সেখানে তার জীবনের উছিলা হয়ে হাজির না হলে ভয়ংকর কিছু ঘটতো। যা ঘটেছে তাও কম ভয়ংকর নয়।
একই সময়ে একরাতে একজনকে মেরে চোয়াল ফাটিয়ে দিয়েছিল আমাদের সেইম ফ্লোরের একজনকে। যদিও আমি নিজে ভিক্টিম ছিলাম না, কিন্তু সেই ভয়ংকর স্মৃতি (ট্রমা মে বি) থেকে বের হতে আমার প্রায় ৪ বছর লেগেছে।
৩.
আমরা বের হওয়ার দুই/তিন বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খুবই মর্মান্তিক লেগেছিল হাফিজুর নামে একজনের মৃত্যুর খবর শুনে। হাফিজুর হলে উঠেছিলেন ছাত্রলীগের ‘বড় ভাই’দের মাধ্যমে। শীতের রাতে বারান্দায় থাকতে হতো তার। নিউমোনিয়া ও টাইফয়েড আক্রান্ত হয়ে মারা যান হাফিজুর।
কেউ তো দায়ী না, সেই মৃত্যুর জন্য!
নক্ষত্রেরই দোষ!
৪.
চোর সন্দেহে ফজলুল হক হলে পিটিয়ে মেরে ফেলায় হয় তোফাজ্জল নামের এক ব্যক্তিকে। আপনারা সবাই জানেন এ ঘটনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মামলা করেছে। এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আশা করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সকলের জন্য নিরাপদ হবে; বিশ্ববিদ্যালয় সেই সংস্কার সত্যিই করতে পারবে।
৫.
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে প্রায় ৮৭৫ জন নিহত হয়েছেন। হাজারের বেশি আহত। চোখ হারিয়েছেন অনেকে। মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন এমন লোকও অনেক।
এসব অপরাধ যারা করেছেন তাদের বিচারও হবে বাংলাদেশে।
-
৬.
এমন মৃত্যু, প্রাণের অপচয়, অনিরাপদ জীবন অতিক্রম করতে পারলেই তা বাংলাদেশ ২.০; তার আগে নয়।
-
মহানগর
১৯/৯/২০২৪
Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

Thursday, September 19, 2024

মাইর নিষিদ্ধ


একজন মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত অপরাধীকেও আঘাত করার অধিকার কারো নাই।
~
এ কথা অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। কিন্তু এইটাই আমাদের রাষ্ট্রীয় জীবনের একটি মূলনীতি। আমরা কেউ কাউকে মারবো না।
কেউ যত বড় অপরাধ করুক না কেন তাকে মারা যাবে না। তাকে টর্চার করার অধিকার কারো নাই। পুলিশের নাই, আদালতের নাই, জেলখানারও নাই। প্রমাণিত চোর, ডাকাত এমনকি খুনিকেও মাইর দেয়ার অধিকার নাই।
আঘাত করা অপরাধ। আঘাতের ধরন অনুযায়ী তা ভিন্ন মাত্রার অপরাধ। আঘাত করে মেরে ফেলা আরো গুরুতর অপরাধ।
আরো স্পষ্ট করছি। তিনটা ক্ষেত্রে মাইরের উপক্রম বা ঘটনা ঘটতে পারে। (যদিও আরো অনেক অপরাধের সাথেই এ ব্যাখ্যা প্রযোজ্য হবে।)
১. অভিযুক্ত বা আসামি
কারো বিরুদ্ধে কোন অপরাধের অভিযোগ যদি থাকে তবুও তাকে মাইর দেয়া যাবে না। অপরাধের তথ্য জানলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা যেতে পারে, কিন্তু হামলা নয়। তাকে গ্রেফতার করে আইন শৃংখ্যলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে দিতে হবে, আঘাত করা যাবে না।
একজন আসামিকে আইনশৃংখ্যলাবাহিনীও মারতে পারবেন না। কোন সাক্ষ্য প্রমাণ বের করার জন্যও না। টর্চার নিষিদ্ধ। বাংলাদেশে আইন শৃংখ্যলা বাহিনী কর্তৃক বিভিন্ন টর্চারের খবর আপনারা এতদিন শুনেছেন,দেখেছেন, এখনো মাঝে মাঝে দেখেন - এসব টর্চার - মাইর, হত্যা - তখনো বে-আইনি ছিল, এখনো বেআইনি। যত রিমান্ডে টর্চারের কথা শুনেছেন, তা যে কোন ভয়ংকর আসামির ক্ষেত্রেই হোক না কেন, তা বেআইনি। সংশ্লিষ্ট আইন শৃংখ্যলা রক্ষাকারী সদস্য(গণ) বেআইনি কাজ করেছেন, অপরাধ করেছেন।
কোন নাগরিকের কাউকে আঘাত করার অধিকার তো নাই, এমনকি কোন রাষ্ট্রীয় বাহিনীরও পিটানোর বা মাইর দেয়ার কোন অধিকার নাই। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এসব কাজ অপরাধ।
২. প্রমাণিত অপরাধের শাস্তি
অনেকের মনে হতে পারে শাস্তি হিসেবে মাইর দেয়া আইন সম্মত। কিন্তু বাংলাদেশে শাস্তি হিসেবেও কাউকে টর্চার করা যাবে না; আঘাত করা শাস্তি হিসেবেও আইনসম্মত নয়। বাংলাদেশে বৈধ শাস্তি হচ্ছে কারাদণ্ড, জরিমানা, আর মৃত্যুদণ্ড। বেত্রাঘাত কিংবা কোন ধরনের শারীরিক আঘাত বাংলাদেশে বৈধ শাস্তি নয়।
সশ্রম কারাদণ্ডও টর্চার বা শারীরিক আঘাত নয়।
(মৃত্যুদণ্ড শাস্তি হিসেবে থাকলেও অনেকেই মনে করেন, এ ধরনের শাস্তি থাকা উচিত নয়।)
শাস্তি হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও মাইর নিষিদ্ধ।
৩. আত্মরক্ষা
তবে মাইর একটা অবস্থায় বৈধ হতে পারে। তা হচ্ছে আত্মরক্ষার প্রয়োজনে। সেইটা তখন আর মাইর থাকে না। হয়ে যায় মারামারি। একপক্ষ মারলে তা মাইর, আর পরস্পর মাইর দিলে তা মারামারি। একজন শুরু করলে অন্যজন নিজেরে রক্ষার জন্য মাইর দিতে পারে।
আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে আইনের নির্দিষ্ট গ্রাউন্ড রয়েছে। তা কতটুকু বিস্তৃত হবে, তাও বলা আছে আইনে।
এছাড়া আইন-শৃংখ্যলা বাহিনীর কিছু কিছু ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগের অনুমতি রয়েছে। কিন্তু তাও আইনের বাইরে গিয়ে বল প্রয়োগের অনুমতি নেই। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমরা বেআইনি বলপ্রয়োগের ঘটনা দেখেছি।
-
বাংলাদেশের একাধিক আইন (যেমন ৭২ এর সংবিধান, ১৮৬০ এর দণ্ডবিধি, ২০১৩ সালের নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন) এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার দলিলে (যেমন UN CAT) অনুযায়ী নির্যাতন বা মাইর বা টর্চার নিষিদ্ধ।
-
রাষ্ট্র মানে আমাদের যৌথ জীবন। রাষ্ট্রীয় জীবনের মূলনীতি হচ্ছে নাগরিকরা অপরাধের বিচারের জন্য আদালতে যাবে। নিজেরা মারামারি করবে না। একজন আইন লঙ্ঘন করলে তাকে মাইর দিবে না, কিন্তু আদালতের মাধ্যমে তার বিচার নিশ্চিত করতে।
-
এনএসইউ
১৯/০৯/২০২৪l rea
Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম পরষ্পরকে বিরোধী হিসেবে বয়ানের অন্তত দুইটা ধারা আছে। এই দুই ধারা একে অপরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। একদল মুক্তিযুদ্ধের দখল চায়...