Thursday, September 19, 2024

মাইর নিষিদ্ধ


একজন মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত অপরাধীকেও আঘাত করার অধিকার কারো নাই।
~
এ কথা অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। কিন্তু এইটাই আমাদের রাষ্ট্রীয় জীবনের একটি মূলনীতি। আমরা কেউ কাউকে মারবো না।
কেউ যত বড় অপরাধ করুক না কেন তাকে মারা যাবে না। তাকে টর্চার করার অধিকার কারো নাই। পুলিশের নাই, আদালতের নাই, জেলখানারও নাই। প্রমাণিত চোর, ডাকাত এমনকি খুনিকেও মাইর দেয়ার অধিকার নাই।
আঘাত করা অপরাধ। আঘাতের ধরন অনুযায়ী তা ভিন্ন মাত্রার অপরাধ। আঘাত করে মেরে ফেলা আরো গুরুতর অপরাধ।
আরো স্পষ্ট করছি। তিনটা ক্ষেত্রে মাইরের উপক্রম বা ঘটনা ঘটতে পারে। (যদিও আরো অনেক অপরাধের সাথেই এ ব্যাখ্যা প্রযোজ্য হবে।)
১. অভিযুক্ত বা আসামি
কারো বিরুদ্ধে কোন অপরাধের অভিযোগ যদি থাকে তবুও তাকে মাইর দেয়া যাবে না। অপরাধের তথ্য জানলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা যেতে পারে, কিন্তু হামলা নয়। তাকে গ্রেফতার করে আইন শৃংখ্যলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে দিতে হবে, আঘাত করা যাবে না।
একজন আসামিকে আইনশৃংখ্যলাবাহিনীও মারতে পারবেন না। কোন সাক্ষ্য প্রমাণ বের করার জন্যও না। টর্চার নিষিদ্ধ। বাংলাদেশে আইন শৃংখ্যলা বাহিনী কর্তৃক বিভিন্ন টর্চারের খবর আপনারা এতদিন শুনেছেন,দেখেছেন, এখনো মাঝে মাঝে দেখেন - এসব টর্চার - মাইর, হত্যা - তখনো বে-আইনি ছিল, এখনো বেআইনি। যত রিমান্ডে টর্চারের কথা শুনেছেন, তা যে কোন ভয়ংকর আসামির ক্ষেত্রেই হোক না কেন, তা বেআইনি। সংশ্লিষ্ট আইন শৃংখ্যলা রক্ষাকারী সদস্য(গণ) বেআইনি কাজ করেছেন, অপরাধ করেছেন।
কোন নাগরিকের কাউকে আঘাত করার অধিকার তো নাই, এমনকি কোন রাষ্ট্রীয় বাহিনীরও পিটানোর বা মাইর দেয়ার কোন অধিকার নাই। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এসব কাজ অপরাধ।
২. প্রমাণিত অপরাধের শাস্তি
অনেকের মনে হতে পারে শাস্তি হিসেবে মাইর দেয়া আইন সম্মত। কিন্তু বাংলাদেশে শাস্তি হিসেবেও কাউকে টর্চার করা যাবে না; আঘাত করা শাস্তি হিসেবেও আইনসম্মত নয়। বাংলাদেশে বৈধ শাস্তি হচ্ছে কারাদণ্ড, জরিমানা, আর মৃত্যুদণ্ড। বেত্রাঘাত কিংবা কোন ধরনের শারীরিক আঘাত বাংলাদেশে বৈধ শাস্তি নয়।
সশ্রম কারাদণ্ডও টর্চার বা শারীরিক আঘাত নয়।
(মৃত্যুদণ্ড শাস্তি হিসেবে থাকলেও অনেকেই মনে করেন, এ ধরনের শাস্তি থাকা উচিত নয়।)
শাস্তি হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও মাইর নিষিদ্ধ।
৩. আত্মরক্ষা
তবে মাইর একটা অবস্থায় বৈধ হতে পারে। তা হচ্ছে আত্মরক্ষার প্রয়োজনে। সেইটা তখন আর মাইর থাকে না। হয়ে যায় মারামারি। একপক্ষ মারলে তা মাইর, আর পরস্পর মাইর দিলে তা মারামারি। একজন শুরু করলে অন্যজন নিজেরে রক্ষার জন্য মাইর দিতে পারে।
আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে আইনের নির্দিষ্ট গ্রাউন্ড রয়েছে। তা কতটুকু বিস্তৃত হবে, তাও বলা আছে আইনে।
এছাড়া আইন-শৃংখ্যলা বাহিনীর কিছু কিছু ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগের অনুমতি রয়েছে। কিন্তু তাও আইনের বাইরে গিয়ে বল প্রয়োগের অনুমতি নেই। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমরা বেআইনি বলপ্রয়োগের ঘটনা দেখেছি।
-
বাংলাদেশের একাধিক আইন (যেমন ৭২ এর সংবিধান, ১৮৬০ এর দণ্ডবিধি, ২০১৩ সালের নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন) এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার দলিলে (যেমন UN CAT) অনুযায়ী নির্যাতন বা মাইর বা টর্চার নিষিদ্ধ।
-
রাষ্ট্র মানে আমাদের যৌথ জীবন। রাষ্ট্রীয় জীবনের মূলনীতি হচ্ছে নাগরিকরা অপরাধের বিচারের জন্য আদালতে যাবে। নিজেরা মারামারি করবে না। একজন আইন লঙ্ঘন করলে তাকে মাইর দিবে না, কিন্তু আদালতের মাধ্যমে তার বিচার নিশ্চিত করতে।
-
এনএসইউ
১৯/০৯/২০২৪l rea
Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

No comments:

Post a Comment

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম পরষ্পরকে বিরোধী হিসেবে বয়ানের অন্তত দুইটা ধারা আছে। এই দুই ধারা একে অপরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। একদল মুক্তিযুদ্ধের দখল চায়...