Saturday, August 31, 2024

Give us some dignity, please

Give us some dignity, please.
যারা বাংলাদেশের জুলাই গণঅভ্যুত্থান-এর লেজিটিমেসিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান তাদের শুরুর দিকের একটি বক্তব্য ছিল যে এটি পাকিস্তানের আইএসআই-এর কাজ। ভার/তীয় এক মিডিয়া (ডেইলি স্টার সম্পাদক জনাব) মাহফুজ আনামকে এই প্রশ্নটি করেছিলেন। মাহফুজ আনাম খুব সুন্দর উত্তর দিয়েছেন। তার উত্তর হুবহু কোট করতে পারছি না। তবে আমি শুধু একটা ইংরেজি বাক্যাংশ হুবহু রেখে কাছাকাছি রিপ্রডিউস করছি।
তিনি বললেন - দেখেন আমাদের প্রায় ১৭০ মিলিয়ন মানুষের দেশ। এখানে প্রায় ৩০ মিলিয়ন সাইজের একটা মিডল ক্লাস রয়েছে। আমাদেরকে অন্তত এই মর্যাদাটুকু দেন যে (‘Give us some dignity’) আমরা একটা স্বৈরাচারি ব্যবস্থাকে সরিয়ে দিয়েছি। (ইংরেজি বাক্যাংশ ছাড়া বাকি কথায় – যেমন সংখ্যাগুলো – ভিন্ন হতে পারে।)
এই শব্দগুলো কনভিন্সিং একটা পয়েন্ট তৈরি করে। এইটা মূলত এজেন্সির প্রশ্ন। মানুষের কর্তা শক্তির প্রশ্ন। অনেকেই তখন আইএসআই এর সম্পৃক্ততা অনুমান করেছেন, এখন আবার কেউ কেউ মার্কি/ন যুক্ত/রাষ্ট্রকে সব ক্রেডিট দিচ্ছেন। বিষয়টা হচ্ছে একাধিক স্টেক হোল্ডারের ইন্টারেস্ট ওভারলেপ করতে পারে। যেমন ১৯৭১ সালে ভার/তের চাওয়ার সাথে বাংলাদেশের জনগণের চাওয়া মিলে গিয়েছিল। ভার/ত চেয়েছিল একটি দুর্বল পাকি/স্তান আর বাংলাদেশের মানুষ চেয়েছিল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র; একই সময়ে পাকি/স্তান চেয়েছিল লাখ লাখ শরনার্থীর চাপে বিপর্যস্ত এক ভারত। এছাড়া আরো বিভিন্ন রাষ্ট্রের চাওয়া – বিভিন্ন পক্ষে – মিলে গিয়েছিল।
এখন ইন্ডি/য়ান এমন ন্যারেটিব রয়েছে অথবা পাকি/স্তানেরও এমন ন্যারেটিব রয়েছে যেখানে আসলে বাংলাদেশের জনগণের আত্ম-নিয়ন্ত্রণের অধিকার চাওয়ার মত যে ডিগনিটি তা ডিনাই করা হয়। যেনবা ইন্ডি/য়ার কারনেই বাংলাদেশের জনগণ তা চেয়েছিল এমন একটা বয়ান বাংলাদেশেও অনেকে ভ্যালিডেইট এবং সাবস্ক্রাইব করেন। কি অবমাননাকর!
বাংলাদেশের জনগণ যে নিজেরা স্বাধীনতা চাইতে পারে তা অস্বীকার করা হয়। একটা ঘটনা শেয়ার করি।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মার্কি/ন যুক্ত/রাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যের মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করতেন একজন বাংলাদেশি যুবক। ২৫ মার্চে লাঞ্চের সময় বাসায় ফিরে রেডিও শুনতে শুনতে কাপড় চেইঞ্জ করছিলেন। তখন শুনলেন পাকি/স্তান সরকার রাজনৈতিক বিরোধীদের থামানোর জন্য আর্মি মুভ করিয়েছে। কাপড় আর চেইঞ্জ করলেন না। আরেক বাঙালির সাথে আলাপ করে প্রায় ৫০ মাইল দূরে ন্যাশভিলে তার বাসায় গেলেন। কাছাকাছি তখনকার পূর্ব পাকি/স্তানের ছয়জন বাঙালি জড়ো হলেন সে বাসায়। কি করা উচিত সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য তারা সব সোর্স থেকে খবর নিলেন। বিষয়টা স্পষ্ট ছিল। পাকি/স্তান আর্মি বাঙালিদের চিরতরে শেষ করে দিতে চেয়েছে। তাদের একজন – জামাত ঘেষা – তিনি জানালেন অপেক্ষা করতে, কারন এখনো বিস্তারিত জানা যাচ্ছে না কি হয়েছে।
মিডল টেনেসির সেই মাস্টার বিষয়টা আর নিতে পারলেন না। বললেন ’আমাদের প্রয়োজনীয় সব ডিটেইলসই আমাদের কাছে আছে। বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। এখন আমাদের ডিসিশন নিতে হবে যে আমরা নিজেদেরকে এই নতুন রাষ্ট্রের নাগরিক মনে করি কিনা। সবাই তার নিজের চয়েস ঠিক করার হকদার। আমি আমার চয়েস জানাচ্ছি। আমার চয়েস হচ্ছে বাংলাদেশ।’
তারপর তারা সবাই বাংলাদেশকে তাদের চয়েস হিসেবে ঠিক করলেন। ’বাংলাদেশ সিটিজেন’স কমিটি’ গঠন করলেন। তিনটা সিদ্ধান্ত নিলেন। ১. নিউজ-পেপার টিভিতে বাংলাদেশের পক্ষে প্রচারণা করবেন/ জনমত তৈরি করবেন; ২. প্রত্যেকে তৎক্ষণাৎ ১০০০ (এক হাজার) ডলার করে দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যু/দ্ধের জন্য ফান্ড তৈরি করলেন; ৩. প্রত্যেকে দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত বেতনের ১০ পার্সেন্ট এই ফান্ডে দিবেন।
সেই তরুণদের সেদিনকার ডিসিশনকে কেউ যদি মনে করে যে ইন্ডি/য়ার ষড়যন্ত্রে করেছে, তাহলে অনেক বিষয়ের মধ্যে একটা ব্যাপার ঘটে যে তাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাকে অস্বীকার করা হয়। তাদের ডিগনিটি বা মর্যাদাকে অস্বীকার করা হয়। তাদের এজেন্সিকে নাকচ করা হয়।
একইভাবে অনেক কিশোর-তরুণ এবার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। তাদের অভিভাবকরা যোগ দিয়েছেন। সকল শ্রেণী পেশার মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। এই সকলের সিদ্ধান্তকে শুধু আইএস/আই বা সি/আইএ-র ষঢ়যন্ত্র বললে কিংবা বিএনপি-জামাতের চক্রান্ত বললে তাদের হিউম্যান ডিগনিটিকে অস্বীকার করা হয়। সরকার পতনের মধ্যে অনেক দল বা রাষ্ট্রের স্বার্থের সম্মিলন ঘটতে পারে, সেটা অস্বাভাবিক নয়। তবে জনগণের চয়েস এবং এজেন্সিকে অস্বীকার করাটা তাদের জন্য অমর্যাদার। তাতে তাদের ডিগনিটি অস্বীকার করা হয়। এরকম কুফরি না করে, Give us some dignity, please.
(পুনশ্চঃ ১. – জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামি লিগের এজেন্সিকে ভার/তের আড়ালে ঢেকে দেয়াও তার এজেন্সিকে খাটো করে দেখা। এসব বিষয়ে প্রথমেই এজেন্সি স্বীকার করে, পরবর্তীতে অন্য কারো ভূমিকা খোঁজ করা যেতে পারে।
পুনশ্চঃ ২. – মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটির সেই তরুণ মাস্টার ছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।)
_
রেফারেন্স –
১. মাহফুজ আনামের ইন্টারভিউর লিংক হারায়ে ফেলছি। ভিডিও ছিল। কেউ পাইলে কমেন্টে শেয়ার দিয়েন।
২. Banker to the Poor. Muhammad Yunus with Alan Jolis. UPL 2022.

(১২ অগাস্ট ২০২৪ ফেসবুকে প্রকাশিত।)

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

No comments:

Post a Comment

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম পরষ্পরকে বিরোধী হিসেবে বয়ানের অন্তত দুইটা ধারা আছে। এই দুই ধারা একে অপরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। একদল মুক্তিযুদ্ধের দখল চায়...