Friday, August 23, 2024

ধারাবাহিকতা, গঠন, ও পুনর্গঠন

১.
বাংলাদেশে সাংবিধানিকতাবাদ ব্যর্থ হয়েছে। সেই ব্যর্থতা ওভারকাম করার জন্য ১৯৯০ এর constitutional moment বা রাষ্ট্র গঠনের মুহূর্ত ভুলভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। নতুন গঠনতন্ত্র রচনা না করে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা নামক আইডিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। এতে রাষ্ট্রের constitutional crisis কে শুধু ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রশ্নে সঙ্কোচন করার মাধ্যমে বিষয়টিকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একই চিন্তা পরবর্তীতে সংবিধানে একটি অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তথা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংযুক্ত করাকে সমাধান হিসেবে দেখে। মূলতঃ constitutional crisis মোকাবেলার ক্ষেত্রে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা একটি ভুল আইডিয়া। ন্যূনতম ব্যর্থ আইডিয়া।
একইসাথে আশার এবং দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হচ্ছে আমরা আরেকটি constitutional moment পার করছি। জুলাই গণঅভ্যুত্থান এখনো আমাদেরকে সঠিক রাস্তায় নিয়ে যেতে পারে। সেই সুযোগ তৈরি হয়েছে।অর্থ্যাৎ আমরা constitutional design ঠিক করার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় জীবনকে পুনর্গঠন করতে পারি। এই মুহর্তকে কাজে লাগানোর জন্য এটাই আমাদের সবচে আশার কথা। আর দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হচ্ছে এ ধরনের পরিবর্তনের বিষয়ে কনভিন্সড হলেও অনেকের মধ্যে inertia থাকে। তা ছাড়া অধিকাংশ বাংলাদেশি লিগাল স্কলার constitutional continuityকে ক্রিটিক্যালি দেখেন না, এমনকি ইভালুয়েট করার আগ্রহ দেখান না। তাদের বুঝা উচিত যে, তাদের চিন্তার কমফোর্ট বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অসাধারণ মুহূর্তকে ধ্বংস করে দিতে পারে। আবার তাদের চিন্তার সাহস বাংলাদেশকে তার সকল সম্ভাবনাসহ বিকশিত হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে।
আমাদের কিশোর তরুণদের সক্রিফাইসকে ঠিক চ্যানেলে চালান না করলে জানবেন আপনাদের ভুলেই ভবিষ্যতের রাস্তায় অনেক কাটা জন্মাবে আপনাদের বিদ্যাবুদ্ধির বেলুন ফুটা করার জন্য।
২.
পুনর্গঠনের দুটি মাত্রা ধরা যেতে পারে। মূলত একটা স্কেল আমরা কল্পনা করতে পারি। মিনিমাম টু ম্যাক্সিমাম।
যেটুকু না করলে একই ধরনের constitutional crisis চলতে থাকবে তা ঠিক করা হচ্ছে মিনিমাম। যেমন - ১. দুই মেয়াদের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না। ২. অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন ছাড়া কেউ সরকার গঠন করতে পারবে না। ৩. বিচার বিভাগকে কার্যকরভাবে স্বাধীন করতে হবে। ৪. সংসদ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। ৫. বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যাবে না। ৬. রাষ্ট্রীয় আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। ৭. গণভোট ব্যতীত সংবিধান সংশোধন করা যাবে না।
এসবের সাথে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেরামত করার বিকল্প নেই।
এই মিনিমাম পুনর্গঠনের কাজ সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করে তথা বিদ্যমান সংবিধানের সংশোধনের মাধ্যমে করা বিপদজনক। ১৯৯০ এর পর যে বিপদ বাংলাদেশে constitutionalismএর ক্ষেত্রে হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি ঠেকানোর আর কোন উপায় থাকবে না। ১৯৯০ এ যদি সংবিধানের ধারাবাহিকতা নামের দুর্বল রাজনৈতিক সমাধান পরবর্তীতে একাধিক জটিলতা তৈরি করেছে। আর জুডিশিয়ারি রাজনৈতিক গঠনের প্রশ্নে সম্পৃক্ত হওয়ায় constitutional crisis এবং political crisis আরো তীব্র হয়েছে। কাজেই এই মিনিমান পুনর্গঠনও আমাদের নতুন গঠনতন্ত্রের মাধ্যমেই করতে হবে। এই মিনিমান পুনর্গঠনে অনাগ্রহী হলে constitutional moment মিস তো করবোই, একই সাথে পুনরায় constitutional crisis এর মধ্যে প্রবেশ করবো। কাজেই এই মিনিমাম পুনর্গঠনের বিকল্প নেই আমাদের।
কিন্তু আমাদের তরুনরা সম্ভবত আরো অ্যাম্বিশাস, ইমাজিনিটিব, এন্ড ক্রিয়েটিব। অল্পে তুষ্ট হওয়ার বাঙালি দুর্বলতা তারা অতিক্রম করে ফেলছে। অন্তত জুলাই বিপ্লব তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। কাজেই ম্যাক্সিমাম একটা গঠন নিয়ে আমাদের চিন্তা করার সুযোগ রয়েছে। (আমি পুনর্গঠন বলছি কারন ৭১ এর অসমাপ্ত বা বেহাত গঠনকে আমি গঠনই মনে করি।)
ম্যাক্সিমাম পুনর্গঠন যদি চিন্তা করি তাহলে আমাদের আরো নতুন কিছু বিষয় অ্যাড্রেস করতে হবে। জনগোষ্ঠী হিসেবে রাজনৈতিক সৃজনশীলতার পরীক্ষা দিতে হবে। পৃথিবীকে প্রেরণার অধিক কিছু দেবার সময় বাংলাদেশের জনগণের হাতে এই মুহূর্তে রয়েছে। নতুন যেসব বিষয় অ্যাড্রেস করতে হবে তার মধ্যে - digital constitutionalism আর ecological constitutionalism দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তথ্য প্রযুক্তির অগ্রগতিকে রাষ্ট্রীয় জীবনের মূলনীতিতে কিভাবে রাখা যায়, আর পৃথিবীর জীবাশ্মজ্বালানি নির্ভর সভ্যতাকে কিভাবে অতিক্রম করে রাষ্টৗয় জীবন পুনর্গঠন করা যায় তার নমুনা বাংলাদেশ পৃথিবীকে দেখাতে পারে। নিশ্চয়ই এই ইমাজিনিটিব শক্তিকে ব্যবহার করতে গেলে আমাদের বিদ্যমান অনেক র‌্যাডিকাল প্রস্তাব এবং ধ্যান-ধারনার মুখোমুখি হতে হবে। সেগুলোকে অ্যাড্রেস করে একটা রাষ্ট্রীয় জীবনের ঐকমত্যে পৌছানো সময় সাপেক্ষ বা জটিল মনে হতে পারে। কিন্তু জটিলও কাজও জরুরি। সবচে কম জটিল ছিল অটোক্রেটিক রাষ্ট্রকাঠামোর হাতে মুখবুজে ধুঁকতে ধুঁকতে মৃত্যুবরণ করা!
বাংলাদেশের সামনে পৃথিবীর বহুজনপদকে পথ দেখানোর সুযোগ হতে পারে সেই বন্ধুর পথ। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার গলি এই জনগোষ্ঠীর জন্য খুব ছোট। এই জনপদ অবিরাম লড়াই করে করে তাদের আকাংখ্যা, কল্পনা, এবং সৃজনশীলতার সময়ে পৌঁছেছে। এই মুহুর্ত হারাবো?
-
মহানগর
১৬ অগাস্ট ২০২৪

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

No comments:

Post a Comment

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম পরষ্পরকে বিরোধী হিসেবে বয়ানের অন্তত দুইটা ধারা আছে। এই দুই ধারা একে অপরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। একদল মুক্তিযুদ্ধের দখল চায়...