Saturday, August 31, 2024

রিকশা - প্যাডেল ও মোটর


প্যাডেল রিকশা মোটর রিকশার সাথে কম্পিটিশনে হারায়ে যাবে। এইটা কঠিন বাস্তবতা। আগে মোটর রিকশা ঢাকার কিছু জায়গায় ঢুকতে পারতোনা। নিষিদ্ধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল।
এই নিষিদ্ধকরণের ক্ষেত্রে ইঞ্জিন রিক্সার কিছু রিস্কের কথা বলা হয়ে থাকে। যেমন এ রিকশার ডিজাইনের সাথে গতির সামঞ্জস্য নেই। সামঞ্জস্যহীন গতির কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি থাকে। ডিজাইন এবং গতির সামঞ্জস্যতা না থাকার কারণে অনেকে এ ধরনের রিক্সায় চড়তে ভয় পান; সে হিসেবে এগুলো অনেকটা যাত্রীবান্ধব নয়। তাছাড়া অন্য যানবাহনের চালকরা এসব রিকশার গতি প্রেডিক্ট করতে পারে না। দেখতে রিকশা, কিন্তু স্পিড মোটরের। অন্যান্য মোটরযানের মত ইন্ডিকেটর নেই। এতে করে অন্য যানবাহনের জন্যেও চলাচলের ঝুঁকি তৈরি হয়।
যদিও এসব বিষয়ে বিশদ তথ্য প্রমাণ ভিত্তিক কোন গবেষণা প্রতিবেদন সম্ভবত নেই।
তবে মোটর রিকশা নিষেধের সমালোচনায় একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। যে প্যাডেল রিক্সা একটি অমানবিক যানবাহন। একজন লোক শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে আরো এক বা একাধিক লোককে টেনে নিয়ে যাচ্ছে - বিষয়টি এক ধরনের নিষ্ঠুর এবং অমর্যাদাকর শ্রম ব্যবস্থা। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে অনেকে ইঞ্জিন রিক্সার সমর্থন করেছেন। এমনকি সব ধরনের রিক্সায় কিভাবে ইঞ্জিন যুক্ত করা যায় বা ডিজাইন কিভাবে চেঞ্জ করা যায় সেই প্রস্তাব করেছেন অনেক সংবেদনশীল মানুষ। এই এমপ্যাথি বা সংবেদনশীলতা এখনো আমাদের সকল শ্রম ব্যবস্থায় প্রধান হয়ে ওঠেনি।
বর্তমানে ঢাকা শহরের বাইরে সমগ্র বাংলাদেশে প্যাডেল চালিত রিক্সা নেই। অর্থাৎ ঢাকার বাইরে সব রিকশাই মোটর রিক্সা বা ইঞ্জিন রিক্সা। এবং অনেক এলাকায় সেই রিকশাগুলোর ডিজাইন খুব মজবুত। মোটরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ রিক্সার বডির ডিজাইন। গুগলে সার্চ দিলেই রাজশাহী কিংবা মুন্সীগঞ্জ এলাকার রিকশার ছবি দেখলে এটা বোঝা যাবে।
তবে ঢাকা শহরে প্যাডেল চালিত রিক্সা এখনো রয়েছে। প্যাডেল চালিত রিক্সাকে ঢাকা তার মধ্যবিত্তের গৌরব হিসেবে এবং ঢাকার একটি সিগনেচার হিসেবে রেখে দিয়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় তাই শুধু প্যাডেল চালিত রিকশা চলছে এবং মটর চালিত রিক্সা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ইঞ্জিন চালিত রিক্সা নিষিদ্ধের সমালোচনায় শ্রমের নিষ্ঠুর এবং অমার্যদাকর দিকটি আসলেও ইঞ্জিন চালিত রিক্সার সাথে প্যাডেল চালিত রিক্সার যে প্রতিযোগিতা তা অনুপস্থিত থেকে গিয়েছে।
৫ ই আগস্টের পর থেকে ঢাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে যে শিথিলতা বা ব্যবস্থাপনার ঘাটতি দেখা দিয়েছে সে সুযোগে ঢাকা শহরে ইঞ্জিন চালিত রিক্সা সব জায়গায় চলছে। এমনকি যেসব রাস্তায় কোন ধরনের রিক্সা চলাচল নিষিদ্ধ সেসব রাস্তায়ও ইঞ্জিন চালিত রিক্সা চলছে।
ভাড়ার ক্ষেত্রে ইঞ্জিন চালিত রিক্সা তুলনামূলক সস্তা হওয়ায় প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন প্যাডেল চালিত রিকশা চালকগন। রিক্সার বাজারে এই প্রতিযোগিতা প্যাডেল চালিত রিক্সা চালকদের জন্য আকস্মিক ছিল।
বাজারের আকস্মিক পরিবর্তন তাদের জীবিকার জন্য বিপদজনক। কাজেই তাদের দাবি দাওয়া মনোযোগ দিয়ে শোনা প্রয়োজন। এবং যতক্ষণ পর্যন্ত সঠিকভাবে তাদেরকে পুনর্বাসন করা না যায় ততক্ষণ পর্যন্ত ইঞ্জিনের রিকশাকে পূর্ব ঘোষিত নিষিদ্ধ এলাকায় চলতে দেয়া যাবেনা।
ঢাকা শহরে রিক্সার মালিকানা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রিক্সা চালকদের নেই। রিকশাচালকরা অনেক বৈষম্যের শিকার হন। যার ফলাফল শেষ পর্যন্ত ভোগ করতে হয় যাত্রীদেরকে; বেশি ভাড়া গুনতে হয়। অনেক চড়া দামে রিক্সার নাম্বার প্লেট সংগ্রহ করা, বিভিন্ন স্থানে চাঁদা দেওয়া, অতিরিক্ত পরিমাণে দৈনিক জমা তথ্য রিক্সার ভাড়া দেওয়া - এসব তার কিছু উদাহরণ।
দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে প্যাডেল রিক্সা বিলুপ্ত করতে হবে। রিক্সা একটি ভাসমান অর্থনীতি হওয়ার কারণে জটিলতা কম হওয়ার কথা। বিভিন্ন রকমের রিক্সা চালক আছেন। যেমন কেউ কেউ সিজনাল। তবে সিজনাল হোক আর নিয়মিত হোক, পেশাগত পুনর্বাসন না করে, কিংবা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে এবং যথাযথ ক্ষতিপূরণ না দিয়ে প্যাডেল রিক্সা বিলুপ্ত করা যাবে না।
আর দীর্ঘমেয়াদে রিকশা প্রতিস্থাপনে মোটর রিকশার কিছু নির্দিষ্ট ডিজাইন ঠিক করে দিতে হবে কিংবা ডিজাইনের ক্ষেত্রে কিছু মানদন্ড নির্ধারণ করতে হবে। নয়তো ইঞ্জিনের রিকশা আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ থেকে যাবে। বলার অপেক্ষা রাখে না ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় লেন নির্ধারণ করে দেওয়া সমাধানের অংশ।
বর্তমানে যে আকস্মিক প্রতিযোগিতার মধ্যে প্যাডেল রিকশার চালকরা পড়েছেন সে বিষয়টি সমাধান করতে হবে। তাৎক্ষণিক সমাধান হচ্ছে ৫ ই আগস্ট এর আগে যেসব এলাকায় ইঞ্জিনের রিক্সা চলাচল নিষিদ্ধ ছিল সেসব এলাকায় ইঞ্জিনের রিক্সা চলাচল নিষিদ্ধ রাখা।
-
মহানগর
২৬ অগাস্ট ২০২৪

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

No comments:

Post a Comment

Delulu and Danger of Innocence of Law

The persistent political crisis in Bangladesh is often framed as a binary dilemma: is the nation suffering from a flawed political culture, ...