Friday, March 12, 2021

টর্চার, শিক্ষা, ও সেক্যুলারিজম

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শারীরিক শাস্তি বন্ধে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ (BLAST and ASK versus Bangladesh, Writ Petition No.5684/2010) ২০১১ সালের শুরুতে রায় দিয়েছিল। রায়ের প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিমালা প্রণয়ন করেছে একই বছর।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শারীরিক শাস্তি বাংলাদেশের অল্প কিছু প্রতিষ্ঠান বাদে সর্বত্র ছিল। রায়ের ১০ বছর পার হয়েছে। ১০ বছরে অগ্রগতি ভাল বলা যায়। আশা করা যায় ২০৩০ এর দিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের টর্চারের মানসিকতা থাকবে না।
যদিও টর্চার যে নিষেধ এই কথা আমার স্টুডেন্টদেরকে বুঝাতে কষ্ট হয়েছে। বাংলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে টর্চার বিদায় করার জন্য যে নৈতিক সাপোর্ট পরিবার এবং রাষ্ট্র থেকে আসবে – সেই পরিবার এবং রাষ্ট্র টর্চার জারি রাখলে তা হবে না। পরিবার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে টর্চারমুক্ত করার জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের টর্চার বন্ধ করতে হবে। কারন যে মৌলিক অধিকার (সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৫ এবং অন্যান্য) প্রয়োগের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শারীরিক ও মানসিক শাস্তি (টর্চার) নিষিদ্ধ সেই মৌলিক অধিকার রাষ্ট্র তার আইন শৃংখ্যলা বাহিনীর মাধ্যমে লঙ্ঘন করতে পারে না।
উল্লেখ্য, যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শারীরিক মানসিক শাস্তি বন্ধ করা হয়, তখন ক্বওমী মাদরাসা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিল না। মাদরাসা (আলিম পর্যন্ত) এবং অন্যান্য সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ থাকলেও মন্ত্রণালয়ের নীতিমালায় ক্বওমী মাদরাসার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল না। যদিও ‘অন্যান্য সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’ বলতে ক্বওমী মাদরাসাকেও অন্তর্ভূক্ত করা হয়; এবং সে হিসেবে ক্বওমী মাদরাসা উক্ত নীতিমালার বাইরে নয়।
২০১০ এর দশকে বাংলাদেশে তথ্যের গতি বেড়েছে ইন্টারনেটের কারনে। তাতে এই ধরনের টর্চারসহ আরো সব ডেভিয়েন্সের খবর আমরা জানতে পারছি। ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া সমাজের এবং রাষ্ট্রের ছবি দেখায়ে দিচ্ছে খুব সহজেই। ২০১১ সালের এই ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ বাড়লেও ক্বওমী মাদরাসায় মোবাইল ফোন ব্যবহারের পরিমান বেড়েছে সম্ভবত অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরে। তথ্য প্রযুক্তির সাথে সমাজের এই পরিবর্তনের সংযোগ আছে। সমাজে যে ডিজিটাল ডিভাইড বিরাজমান তা আরো বড়সড় অর্থনৈতিক বৈষম্যের বাচ্চা। এই বৈষম্যের নানান রকম প্রকাশের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটি।
এছাড়া বাঙালি মোসলমান এখনো বিদ্যা বিতরনে কৃপণ। বিশেষত আধুনিক শিক্ষিত কিংবা সেক্যুলার বাঙালি শিক্ষা বিস্তারে ততটা আগ্রহী বা সফল নয়। শিক্ষার ভার পীর সাহেব আর দুনিয়াদারির খোঁজ না রাখা মাওলানা-মৌলবিদের হাতে দিয়ে মানুষের সুন্দর দুনিয়াবি জীবন হবে না। আপনারা সেক্যুলারিজমকে শুধু মন্ত্র হিসেবে বিশ্বাস করলে অন্যের ইহকাল ভাল হবে না। অন্তত সকলের ইহকাল বা দুনিয়ার জীবনকে সহজ সুন্দর করে তোলার চেষ্টা না থাকলে আপনি বরং সেক্যুলারিজমকে এন্টিরিলিজিয়াস এক্সট্রিমিজিম থেকে মুক্ত করতে পারবেন না। বাংলাদেশে সেক্যুলারিজমের এই স্ববিরোধী হয়ে উঠার দায় পুরাটা নন-সেক্যুলারদের নয়, সেক্যুলারিজমের সমর্থকদেরও।
গত কয়েকবছরে অনেকেই দরদী হয়ে উঠছেন। অন্তত ক্বওমী মাদরাসায় পড়ুয়া শিশুদের নিজেদের শিশু হিসেবে ভাবতে পারছেন অনেকে। আরো বেশি দরদী হয়ে উঠলে এই সমাজে ধর্মের সত্যিকার পর্যালোচনা সম্ভব হবে।
টর্চার, শিক্ষা, সেক্যুলারিজম। মার্চ ১১, ২০২১/ নরমাল, ইলিনয়

No comments:

Post a Comment

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম পরষ্পরকে বিরোধী হিসেবে বয়ানের অন্তত দুইটা ধারা আছে। এই দুই ধারা একে অপরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। একদল মুক্তিযুদ্ধের দখল চায়...