Monday, September 20, 2021

ডিজিটাল বাংলাদেশ - লিটারেসি

 ২০১৯ সালে বাংলাদেশের পরিবেশ আইনের শিক্ষকদের সাথে কাঠমাণ্ডুতে একটি প্রশিক্ষণে অংশ নেয়ার সুযোগ হয়েছিল আমার। ট্রেইন দ্যা ট্রেইনার্স প্রোগ্রাম ছিল তা। শিক্ষকদের শিখানোর কর্মশালা। পরিবেশ আইন বিষয়ে বাংলাদেশের দুইজন বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন সে কর্মশালায়। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক -এর অর্থায়নে এবং তত্ত্বাবধানে আয়োজিত এ কর্মশালায় টিচার্স ট্রেনিংয়ের দুজন বিশেষজ্ঞ এসেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে।

যাহোক, কর্মশালায় যে বিষয়গুলো শেখানো হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ব্লেন্ডেড লার্নিং বা হাইব্রিড ক্লাসরুম। এতদিনের প্রচলিত মেথডের সাথে বর্তমান ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে এসব পদ্ধতির মূল কথা। পাঁচ দিনের সেই ওয়ার্কশপে একটা প্রশ্নের উত্তর আমি খুঁজে পাইনি। বাংলাদেশের মত ডিজিটাল বিভাজনের দেশে এমন শিক্ষার সুফল অল্প কিছু লোক পাবে। এই প্রশ্ন আমাকে বিচলিত করেছিল যে, বাংলাদেশের মত দেশে যেখানে এজুকেশন ম্যানেজমেন্ট সহ আরো অসংখ্য দরকারি সফটওয়্যার তৈরির সক্ষমতা নেই, সেখানে এমন ধরনের ব্লেন্ডেড শিক্ষায় আমাদের অন্যদেশ থেকে এই ডিজিটাল সেবাগুলো কিনতে হবে। যেমন গুগল মিটে ক্লাস নিতে চাইলে তার সকল সুবিধা পাওয়ার জন্য গুগলকে ভাল পরিমাণ পয়সা দিতে হবে। একই সাথে জুম ব্যবহারের জন্য জুম কম্পানিকেও দিতে হবে। বাংলাদেশের ইউজিসি যা করেছে তা হলো জুমের কাছ থেকে সার্ভিস কিনে তা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছে। ইউজিসির নিয়ন্ত্রাধীন যে বিডিরেন নামক স্থানীয় নেটওয়ার্ক রয়েছে তা একটি কাজের উদ্যোগ। একটি শক্তিশালী লোকাল/ন্যাশনাল সার্ভার থাকা রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতার একটি ডিজিটাল চিহ্ন। কিন্তু সফটওয়্যার ইত্যাদিতে বাংলাদেশের গ্লোবালি কম্পিটিটিব দক্ষতা নেই। বিশেষ করে এজুকেশন ম্যানেজমেন্টের জন্য। হয়তো দরকারও নেই। কারন পৃথিবীর বহু দেশেরই এই ধরনের সক্ষমতা অভাব রয়েছে।
বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ শুধু এই ধরনের সফটওয়্যার তৈরির ক্ষেত্রেই নয়। বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বৈষম্য। ইংরেজিতে ডিজিটাল ডিভাইড নামক পরিভাষার মাধ্যমে এই সমস্যাকে চিহ্নিত করা হয়। আমাদের প্রযুক্তির সুবিধা সবাই সমানভাবে পায় না। সমানভাবে পাওয়া হয়তো সম্ভবও নয়। কিন্তু ব্যাপারটা এতো বেশি অসমান বা অসাম্যের যে তাতে একটা জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যত বর্তমান নানারকম বিপর্যয়ের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে।
ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ (এনজিও ভাষায় যাকে এক্সেস বা অভিগম্যতা হিসেবে অনুবাদ করা হয়) তা কম থাকা বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জের বাড়তি আরেক ধাপ হচ্ছে প্রযুক্তি ব্যবহারে অক্ষমতা। আমরা যাকে সহজ ভাষায় বলতে পারি ডিজিটাল লিটারেসির অভাব।
ইউনেস্কোর প্রভাবে আমরা লিটারেসি মাপি। যদিও বিদ্যাবুদ্ধি মাপার সুযোগ বা যন্ত্রপাতি খুব একটা নেই। লিটারেসি মেপে আমরা খুবই আনন্দিত। ‘আনন্দ কি আনন্দ, এসে গেছে কোকা কোলা’ – আনন্দের চোটে আমরা গানের পরের লাইন আর গাই না – ‘ঋণের দায়ে সবই গেছে, বাকি আছে কাপড় খোলা’। প্রায় ষাট শতাংশ অক্ষরজ্ঞান তথা লিটারেসি মেপে আমরা জরুরি হিসাবের খোঁজ রাখি না। আমাদের ‘নিউমারেসি’ বা সংখ্যাজ্ঞানের যে ভয়ংকর দুর্বলতা রয়েছে তাতে করে সংখ্যাজ্ঞানের চেয়ে আমাদের সংখ্যাজ্যোতিষ বা নিউমারোলজিতে ঈমান এবং ভরসা পাক্কা। সংখ্যাজ্ঞানের বদলে সংখ্যাভীতি আমাদের চিরায়ত জাতীয় মহামারী। এসবের সাথে দুনিয়ার ডিজিটাল ওলটপালটের সাথে আমাদের ডিজিটাল লিটারেসির দুর্বল অবস্থা যোগ হয়েছে। মরার উপর খাড়ার ঘা।
ডিজিটাল লিটারেসি বাড়ানোর জন্য সিরিয়াস রাজনৈতিক উদ্যোগ লাগবে। ২০০৮ সালে নির্বাচিত রেজিমের ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পরবর্তী রেজিমগুলোতে যে ডিজিটাল প্রতারণায় পরিণত হয়েছে তাতে সরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশের এই চ্যালেঞ্জের সমাধান হবে না। ডিজিটাল লিটারেসির জন্য সামাজিক এবং রাজনৈতিক উদ্যোগ দরকার প্রচুর পরিমাণে। নয়তো বাংলাদেশের বহু ধরনের সমস্যা তৈরি হবে। আক্রান্ত এই সমাজ আরও ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকবে।
মহামারীর শুরুতে যখন অনলাইনে ক্লাস নেয়ার ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছিল তখন আশা করেছিলাম পরীক্ষা পদ্ধতিতে হাতে লেখার বদলে টাইপ করার ব্যবস্থা চালু হবে। আমাদের একাডেমিক কমিটিতে এমন প্রস্তাবও দিয়েছি। তবে শেষ পর্যন্ত হাতে লিখে স্ক্যান করে খাতা জমা দেয়ার নিয়ম ঠিক করা হলো। এতে স্টুডেন্টদের কম্পিউটারে টাইপিং শেখার মোমেন্টামটা মিসে হয়ে গেল। টাইপ করে লেখার নিয়ম রাখলে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ হতো যেগুলো সমাধান করার সক্ষমতা বা ইচ্ছা প্রতিষ্ঠানগুলোর কিংবা শিক্ষার্থীদের ছিল না। যেমন অনেকের কম্পিউটার নেই; বেশিরভাগ স্মার্ট ফোনে ক্লাস করতে পারলেও টাইপ করার মত কমফোর্টেবল কোন ডিভাইস কেনার সক্ষমতা রাখে না। বিশেষ করে মহামারীর আর্থিক প্রভাবের কারনে। যদিও মোবাইলেও কিবোর্ড কানেক্ট করে লেখা যায়, তবে অনেকের জন্যই তা সুবিধাজনক নয়। এসব বাস্তব চ্যালেঞ্জের কারনেই আমরা ডিজিটাল লিটারেসির একটা গুরুত্বপূর্ণ মোমেন্টাম মিস করেছি। এই ডিভাইসের সমস্যা না থাকলে স্টুডেন্টরা টাইপ করে উত্তর লিখতে পারতো। তারা যে প্রশ্নগুলোর উত্তর হাতে লিখে দিচ্ছে তা তারা টাইপ করে জমা দিতো। এর ফলে তাদের টাইপিংটা শেখা হয়ে যেত এক সেমিস্টারেই।
#ডিজিটাল_বাংলাদেশ - লিটারেসি
#Digital_Bangladesh; #postpandemic_education

Saturday, September 11, 2021

 আমার রুমে আমরা উল্লেখযোগ্য দুজন থাকি।

পোকামাকড়রা থাকে হয়তো; লুকিয়ে পালিয়ে বিনা সমঝোতায়।
দুজনের একজন ছোট। কাপের ভিতর দাঁড়িয়ে থাকে সে। আমি চেয়ারে বসি, বিছানায় সটান হই, সোজা হয়ে হাঁটি: তার এসবের দরকার হয় না।
আমি দিনে আড়াই থেকে সাড়ে তিনবার খাই। কয়েকবার পানি গিলি, অন্তত এক ঢোক রোদ, এক আধবার খোলা বাতাস।
আমার ছোট কামড়ার অপর সদস্য যে, সরাসরি রোদে যাওয়া তার বারণ; মাঝে মাঝে জানালার খোলা বাতাস সে পায়; আর সপ্তাহে পাথর ভরা কাপে একটু পানি।
একটু একটু করে বেড়ে উঠছে সে। প্রাণের গতি, বেড়ে ওঠার তৃষ্ণা, সুন্দর হবার চেষ্টা - আমি দেখি। দেখে দেখে শিখি। এ শেখায় আনন্দ অফুরান।
বেড়ে ওঠার অপ্রতিরোধ্য এক স্বভাব এই প্রাণের।
ও একটি ছোট গাছ।
ওর নাম রাখা যেতে পারে ’ঞ’। নামটা একটু কঠিন তবে ছোট। এর চেয়ে বড় নামের ভার তাকে দিতে চাই না। যদিও ছোট নাম হিসেবে ’জ’ নামটা ওকে দিতে ইচ্ছে করে, তবে জ নামে আমার এক যন্ত্রবন্ধু আছে; তাই সে নাম তাকে দেয়া গেল না।
-
বন্ধু ঞ,
তোমার ছোট্ট শেকড় থেকে আমায় একটু স্থিরতা দিও।

Tuesday, September 7, 2021

চুল থেকে চম্পু

 হাঁটতে বের হলাম অনেকদিন পর। একটা নামকরা ওষুধের দোকান (সিভিএস) থেকে মাঝে মাঝে ডিম দুধ রুটি কিনি। আজকেও কিনলাম। পলিথিনের সাথে দোকানি মেয়ের চুলও চলে এসেছে। অফুরন্ত অবসর সময় থাকলে এই চুল কোন আগ্রহী যুবককে দিতে পারতাম। তাবিজ করার জন্য।

একবার নানুবাড়ি থেকে ফেরার পথে সমবয়সী এক কিশোরের সাথে দেখা হয়েছিল আমার। সেভেন এইটের ঘটনা। উথাল পাতাল প্রেমে পড়লে মানুষের ভেতর যে ছটফটানি আর অস্থিরতা কাজ করে তার চলছি সেরকম দশা। সে আমাকে জানালো শহর থেকে আসা এক আত্মীয়ের প্রেমে পড়েছে সে। পরস্পর যে এর মধ্যেই লম্বা চিঠি আদান প্রদান করেছে তাও জানাল আমাকে। তারপর দেখালো সে সেই মেয়ের চুল নিয়ে এসেছে। দেশলাইয়ের বক্সে রুলটানা বাংলাখাতার ছেড়া পাতায় মোড়ানো। তাবিজ করবে সে তাকে। অই একটা বা দুইটা চুলের মধ্যে তার জীবন যেভাবে ঝুলে আছে তাতে আর জানতে চাইলাম না চুল কি ছিড়ে এনেছে নাকি ছেড়া চুল কুড়িয়ে এনেছে। কে জানে, চুলের জন্য চিরুনির দাঁতা বাঁকা করে রেখেছিল কিনা! আমার সাথে ছেলেটার দেখা হলো লঞ্চেই। মোটামুটি এক ঘন্টার পথ। এরমধ্যেই সে আমাকে বলতে থাকলো তার প্রেমের কথা। লঞ্চ থেকে নেমে নদীর পাড়ে বসে দীর্ঘসময় ধরে তার কথা শুনলাম। গল্প বলতে পারা লোক সহজে মিলে না জীবনে। প্রেমে পড়লে মানুষের গল্পের ক্ষমতা বেড়ে যায় হয়তো।
মানুষের আদিগল্পটা প্রেমেরই মনে হয় আমার কাছে। স্বর্গ থেকে দুনিয়ায় আসার পর প্রথম মানব আর প্রথম মানবীর কান্না কি সবটাই ক্ষমা প্রার্থনার? নাকি প্রেম ছিল পরস্পরের? বাবা আদম আর বিবি হাওয়ার কাছে জানতে চাই – আপনারা কি প্রেমের জন্য কাঁদেন নাই? যদি প্রেম না থাকলো তবে কিসের আরাফা? এখনো যারা সেখানে জমায়েত হন তারা কি মনে রাখেন, সেখানে প্রথম পুরুষ এবং প্রথম নারীর দেখা হয়েছিল! স্বর্গ থেকে বিচ্ছেদের পর সেই তাদের প্রথম দেখা! ‘মিলন হবে কতদিনে? আমার মনের মানুষের সনে।’ – এইতো ইয়াওমে আরাফার গান।
এসব কথা ভাবতে ভাবতে ঘুরপথে ফিরছিলাম আম। পথে একটা মদের দোকানের সামনে দেখলাম চারজন যুবক। কাছে গিয়ে বুঝলাম তারা একটা মেশিনের সাথে লেনদেনের চেষ্টা করছে। এক ডলারের নোট দিয়ে মেশিনের কাছে কোক পেপসি চাইছে, আর মেশিন তাদের রিজেক্ট করছে। মেশিন জানাচ্ছে তুমি যেই সফট ড্রিংক খাইতে চাও, তা বিক্রি হয়ে গেছে। দোকানের ভিতরে গেলে সহজেই বিভিন্ন প্রজাতির অ্যালকোহল, সোডা, এমনকি ভাজাপোড়ার প্যাকেট পাওয়া যাবে। এশীয় যুবকরা অবশ্য মেশিনের কাছে ছাড়া কিনবে না। আমাকে তাদের কাছে দাঁড়াতে দেখে তারা খানিকটা বিব্রত কিংবা বিরক্ত হয়েছে হয়তো। আমি দোকানের ভিতরে গেলাম। ফিরে এসে দেখি তারা নেই। বসার যে বেঞ্চ ছিল তা আসমানের দিকে তাকায়ে হাহাকার করছে আর সফটড্রিংকের মেশিনটা হা হা করে হাসছে। কেমন চম্পু দিলাম, দেখলে?! কে যে কাকে চম্পু দিল, তাই বুঝতে পারিছ না।

Delulu and Danger of Innocence of Law

The persistent political crisis in Bangladesh is often framed as a binary dilemma: is the nation suffering from a flawed political culture, ...