Tuesday, September 7, 2021

চুল থেকে চম্পু

 হাঁটতে বের হলাম অনেকদিন পর। একটা নামকরা ওষুধের দোকান (সিভিএস) থেকে মাঝে মাঝে ডিম দুধ রুটি কিনি। আজকেও কিনলাম। পলিথিনের সাথে দোকানি মেয়ের চুলও চলে এসেছে। অফুরন্ত অবসর সময় থাকলে এই চুল কোন আগ্রহী যুবককে দিতে পারতাম। তাবিজ করার জন্য।

একবার নানুবাড়ি থেকে ফেরার পথে সমবয়সী এক কিশোরের সাথে দেখা হয়েছিল আমার। সেভেন এইটের ঘটনা। উথাল পাতাল প্রেমে পড়লে মানুষের ভেতর যে ছটফটানি আর অস্থিরতা কাজ করে তার চলছি সেরকম দশা। সে আমাকে জানালো শহর থেকে আসা এক আত্মীয়ের প্রেমে পড়েছে সে। পরস্পর যে এর মধ্যেই লম্বা চিঠি আদান প্রদান করেছে তাও জানাল আমাকে। তারপর দেখালো সে সেই মেয়ের চুল নিয়ে এসেছে। দেশলাইয়ের বক্সে রুলটানা বাংলাখাতার ছেড়া পাতায় মোড়ানো। তাবিজ করবে সে তাকে। অই একটা বা দুইটা চুলের মধ্যে তার জীবন যেভাবে ঝুলে আছে তাতে আর জানতে চাইলাম না চুল কি ছিড়ে এনেছে নাকি ছেড়া চুল কুড়িয়ে এনেছে। কে জানে, চুলের জন্য চিরুনির দাঁতা বাঁকা করে রেখেছিল কিনা! আমার সাথে ছেলেটার দেখা হলো লঞ্চেই। মোটামুটি এক ঘন্টার পথ। এরমধ্যেই সে আমাকে বলতে থাকলো তার প্রেমের কথা। লঞ্চ থেকে নেমে নদীর পাড়ে বসে দীর্ঘসময় ধরে তার কথা শুনলাম। গল্প বলতে পারা লোক সহজে মিলে না জীবনে। প্রেমে পড়লে মানুষের গল্পের ক্ষমতা বেড়ে যায় হয়তো।
মানুষের আদিগল্পটা প্রেমেরই মনে হয় আমার কাছে। স্বর্গ থেকে দুনিয়ায় আসার পর প্রথম মানব আর প্রথম মানবীর কান্না কি সবটাই ক্ষমা প্রার্থনার? নাকি প্রেম ছিল পরস্পরের? বাবা আদম আর বিবি হাওয়ার কাছে জানতে চাই – আপনারা কি প্রেমের জন্য কাঁদেন নাই? যদি প্রেম না থাকলো তবে কিসের আরাফা? এখনো যারা সেখানে জমায়েত হন তারা কি মনে রাখেন, সেখানে প্রথম পুরুষ এবং প্রথম নারীর দেখা হয়েছিল! স্বর্গ থেকে বিচ্ছেদের পর সেই তাদের প্রথম দেখা! ‘মিলন হবে কতদিনে? আমার মনের মানুষের সনে।’ – এইতো ইয়াওমে আরাফার গান।
এসব কথা ভাবতে ভাবতে ঘুরপথে ফিরছিলাম আম। পথে একটা মদের দোকানের সামনে দেখলাম চারজন যুবক। কাছে গিয়ে বুঝলাম তারা একটা মেশিনের সাথে লেনদেনের চেষ্টা করছে। এক ডলারের নোট দিয়ে মেশিনের কাছে কোক পেপসি চাইছে, আর মেশিন তাদের রিজেক্ট করছে। মেশিন জানাচ্ছে তুমি যেই সফট ড্রিংক খাইতে চাও, তা বিক্রি হয়ে গেছে। দোকানের ভিতরে গেলে সহজেই বিভিন্ন প্রজাতির অ্যালকোহল, সোডা, এমনকি ভাজাপোড়ার প্যাকেট পাওয়া যাবে। এশীয় যুবকরা অবশ্য মেশিনের কাছে ছাড়া কিনবে না। আমাকে তাদের কাছে দাঁড়াতে দেখে তারা খানিকটা বিব্রত কিংবা বিরক্ত হয়েছে হয়তো। আমি দোকানের ভিতরে গেলাম। ফিরে এসে দেখি তারা নেই। বসার যে বেঞ্চ ছিল তা আসমানের দিকে তাকায়ে হাহাকার করছে আর সফটড্রিংকের মেশিনটা হা হা করে হাসছে। কেমন চম্পু দিলাম, দেখলে?! কে যে কাকে চম্পু দিল, তাই বুঝতে পারিছ না।

No comments:

Post a Comment

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম পরষ্পরকে বিরোধী হিসেবে বয়ানের অন্তত দুইটা ধারা আছে। এই দুই ধারা একে অপরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। একদল মুক্তিযুদ্ধের দখল চায়...