Sunday, October 3, 2021

টাইপিং: অভ্র ও বিজয়

গতমাসে বাংলা ভাষার জাতীয় কিবোর্ড (লে আউট) চিনতে পারলাম। এতদিন যে বিজয় কিবোর্ড ব্যবহার করেছি তার চেয়ে ৩-৪টি কি আলাদা। বাকি সব একই রকম। জনাব মোস্তাফা জব্বারের বিজয় লেআউট শুরুর দিকের কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়েছিল। এটি তাঁর সাফল্য। বাংলা ভাষার জন্য তার অবদান গুরুত্বপূর্ণ।

অবশ্য তার অবদান বাংলা ভাষার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায় কিনা সেটা হয়তো বিজয় প্রস্তুত এবং বাজারজাতকারী কম্পানি হিসাব করে না। শুনেছি বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি অফিসে বিজয় (পুরনো কোডিং এবং লেআউট) ব্যবহার করা ম্যান্ডাটরি করা হয়েছিল; এমনটা কোন বিচারে করা হয়েছে তা জানিনা। তাছাড়া যদি ম্যান্ডাটরি করতেই হয়, তাহলে বাংলাদেশের জাতীয় লে আউট রেখে বিজয় কেন ম্যান্ডাটরি হবে?

যাহোক, বর্তমানে টাইপিংয়ে অন্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা বিজয় কিবোর্ডের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব না। যেমন কিছু রিসেন্ট সফটওয়ারে বিজয় দিয়ে লেখা যায় না। কারন বিজয়ের কোডিং পুরনো আমলের; প্রায় অপ্রচলিত।

এই লম্বা ভূমিকা বললাম আরেকটি বিষয় জানানোর জন্য। অভ্রর জনপ্রিয়তা থেকে অনুমান করা যায় যে, অভ্র বাংলা টাইপের বড় উপকার করেছে। বাংলা লেখাকে সহজ করে দিয়েছে তার ফোনেটিক লেআউটের মাধ্যমে। তাতে লোকেরা অভ্র দিয়ে লিখতে পারেন খুব সহজে।

বিজয়ের মামলা বা হয়রানির পর অভ্র আর বিজয় লে আউট ব্যবহার করে না। তবে তাদের সফটওয়ারে বাংলাদেশের জাতীয় লে আউট রয়েছে। বিজয়ের লেআউটের সাথে জাতীয় (ন্যাশনাল) লেআউটের পার্থক্য মাত্র ৩-৪টি কি।
 
অভ্র তাদের সাম্প্রতিক ভার্সনে একটি অসাধারণ কাজ করেছে। আপনি একটি কিবোর্ড লেআউট নিজের মত করে তৈরি করে নিতে পারবেন। যে লেআউটগুলো আছে তাকে সামান্য মডিফাই করে কাজটি করতে পারবেন।

আমি প্রথমে বিজয় লেআউটে টাইপ করা শিখেছি। তাই বিজয় লেআউটে লিখতে অভ্যস্ত। গতবছর একটা সফটওয়্যারে বিজয় কাজ করছিল না। সেই সমস্যা থেকে বের হওয়ার জন্য খুঁজতে খুঁজতে গত মাসে এই চমৎকার সমাধান আবিষ্কার করলাম।

সপ্তাহখানে কষ্ট করে ৩-৪টি কি শিখে নিলে জাতীয় লেআউট শেখা হয়ে যাবে। যদিও বহুদিনের অভ্যাস আনলার্ন করা কঠিন। এছাড়া সামান্য মডিফাই করে জাতীয় লেআউটকে বিজয়ের মত বানানো যাবে। (৫ থেকে ১০ মিনিটের কাজ। এক্সপার্ট হলে আরো কম সময় লাগবে।)

অভ্র টপবারে সেটিংস থেকে কিবোর্ড লেআউট এডিটর অপশন ব্যবহার করে কাজটি করতে হবে। এবং বিজয় শুধুমাত্র পুরাতন ডকুমেন্ট পড়ার জন্য ব্যাকআপ হিসেবে থাকবে।

(ইংরেজি QWERTY লেআউট নিয়ে এমন জটিলতা নেই। এর সম্ভাব্য কারন হয়তো আমাদের বাংলা ছাপাখানার চেয়ে বাংলা টাইপিংয়ের কয়েকশ বছরের ধীর গতি। যেহেতু বলপয়েন্ট আবিষ্কার না হলে আমাদের অনেকেই আজো কলম দেখতে পেতাম না, তাই টাইপরাইটার দেখা দুর্লভ ব্যাপার; টাইপরাইটারে লেখা আরো দুর্লভ। অবশ্য এসব জিইয়ে রাখা ব্যারাম কিনা আমি জানিনা।)

দারিদ্র্য ও চৈতন্য

অমর্ত্য ইউনুস আবেদের ভাষায় যে আর্থিক জীবনের নাম দারিদ্র্য তা বুঝতে বুঝতে আমার জীবনের অনেকগুরুত্বপূর্ণ সময় পার হয়ে গিয়েছে। আমার মনে হয় দারিদ্র্যের অভিজ্ঞতায় সৎ মানুষের মনে অর্থের আকাঙ্খা জন্মায় না। অন্তত বাঙালি মোসলমানের সৎ-অসৎ বিচারের যে মানদণ্ড তাতে দারিদ্র্যের দোর্দণ্ড প্রতাপ। আমাদের সততা দারিদ্র্যের সাথে সমার্থক হয়ে যাওয়াটাই আমাদের চেতনা ও মূল্যবোধের ঘরে বড় ধরনের কেলেংকারি। আমাদের অর্থের আকাংখ্যা তাই হয়ে ওঠে অসৎ, প্রাচুর্য মাত্রই হয়ে উঠে অসুখ এবং অভিসম্পাৎ, আর দারিদ্র্য হয় মহৎ।

(চৈতন্যের এই গোঁজামিল বুঝতে পারার পরেও কাটিয়ে উঠতে পারার ক্ষমতা সকলের হয় না। অনেকেই এই দ্বিধা কাটাতেই পারে না।)

দারিদ্র্য মোকাবেলার যেসব উদ্যোগ আমাদের আছে, সেখানে এই অর্থবিত্ত সম্পর্কিত চেতনা পরিবর্তনের কৌশল সম্ভবত থাকে না। পুঁজিবাদী কৌশলের সাথে বাংলার দারিদ্র্য মোকাবেলার চিন্তা – দান-খয়রাত-সওয়াব ও পরকালের মধ্যে একত্রিত হয়েছে। সম্ভবত পশ্চিমে পুঁজির সাথে সমাজের এবং চেতনার যে সম্পর্ক সেখানে এই ধরনের কেলেংকারি নেই।

অর্থকে সাফল্যের মানদণ্ড হিসেবে যদি সমাজে বিবেচনা করা হয়, তবে সেই মানদণ্ড সম্পর্কে স্পষ্টতা রাখতে হবে। তাকে যত ট্রান্সফারেন্ট রাখা যায় ততই কল্যান। তাকে মানদণ্ড না মানার অজুহাতে দারিদ্র্যর মত অবিচারকে টিকিয়ে রাখা বা উপেক্ষা করা আরো ভয়ানক শয়তানি।

সম্পদ জমানো, সম্পদ গড়া – পুঁজির বিচারে এসব সমস্যা নয়। তবে লিবারেল ব্যবস্থার মধ্যে প্রতারণাকে সমস্যা হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়। অন্যকে ঠকিয়ে সম্পদ অর্জন করাকে লিবারেলিজমের সাধারণ পরিণতি বিবেচনা করে লিবারেলিজম নামক তত্ত্বের বিরোধিতা দিনশেষে প্রতারকদেরই সুবিধা দেয়।

(অর্থনীতি কম বুঝি। তার ইতিহাস বুঝি আরো কম।) জমিদারি যতদিন আইনত বৈধ ছিল ততদিন তার ক্ষতিকে স্পষ্টভাবে মোকাবেলা করাও সহজ ছিল। কিন্তু জমিদারির ক্ষতি আর জমিদারি বিরোধিতা দুইটা এক হয়ে যাওয়ার মধ্যেই যে দারিদ্র্য মহান টাইপের ঘোর বা চেতনার ঘরে কেলেংকারি তৈরি হলো তা থেকে বাঙালকে মুক্ত করা না গেলে দারিদ্র্য দূর করা সহজ নয়। এই সমস্যা শেষমেশ চৈতন্যের। অর্থ যে ভাল, সে কথা আমাদের বুঝা দরকার। তাহলে জাতীয় অর্থ-সম্পদের হিসাবটা আরো স্বচ্ছ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

(পুনশ্চঃ - নজরুলের দারিদ্র্য কবিতাকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। সম্পূর্ণ কবিতাকে না পড়ে তার অংশ থেকে দারিদ্র্যকে মহান করা নজরুলের সাথে টিটকারি। বোকামি করে ছাড় না দিলে এমন ব্যাখ্যাকে সাহিত্যের শয়তানি ব্যাখ্যা বলা যায়। দারিদ্র্য কাউকে মহৎ করে না। মহৎ লোকেরা মাঝে মাঝে দরিদ্র হয়ে জন্মায়। মূলত যে জীবন জীবনের প্রাচুর্যকে বুঝতে পারে তাকে আর্থিক বা অন্যকোন প্রাচুর্য দিয়ে আর মাপা যায় না, আটকানো যায় না। দারিদ্র্য অভিশাপ; দারিদ্র্য দূর না করার চেষ্টা আরো বড় অভিশাপ।)

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম পরষ্পরকে বিরোধী হিসেবে বয়ানের অন্তত দুইটা ধারা আছে। এই দুই ধারা একে অপরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। একদল মুক্তিযুদ্ধের দখল চায়...