অমর্ত্য ইউনুস আবেদের ভাষায় যে আর্থিক জীবনের নাম দারিদ্র্য তা বুঝতে বুঝতে আমার জীবনের অনেকগুরুত্বপূর্ণ সময় পার হয়ে গিয়েছে। আমার মনে হয় দারিদ্র্যের অভিজ্ঞতায় সৎ মানুষের মনে অর্থের আকাঙ্খা জন্মায় না। অন্তত বাঙালি মোসলমানের সৎ-অসৎ বিচারের যে মানদণ্ড তাতে দারিদ্র্যের দোর্দণ্ড প্রতাপ। আমাদের সততা দারিদ্র্যের সাথে সমার্থক হয়ে যাওয়াটাই আমাদের চেতনা ও মূল্যবোধের ঘরে বড় ধরনের কেলেংকারি। আমাদের অর্থের আকাংখ্যা তাই হয়ে ওঠে অসৎ, প্রাচুর্য মাত্রই হয়ে উঠে অসুখ এবং অভিসম্পাৎ, আর দারিদ্র্য হয় মহৎ।
(চৈতন্যের এই গোঁজামিল বুঝতে পারার পরেও কাটিয়ে উঠতে পারার ক্ষমতা সকলের হয় না। অনেকেই এই দ্বিধা কাটাতেই পারে না।)
দারিদ্র্য মোকাবেলার যেসব উদ্যোগ আমাদের আছে, সেখানে এই অর্থবিত্ত সম্পর্কিত চেতনা পরিবর্তনের কৌশল সম্ভবত থাকে না। পুঁজিবাদী কৌশলের সাথে বাংলার দারিদ্র্য মোকাবেলার চিন্তা – দান-খয়রাত-সওয়াব ও পরকালের মধ্যে একত্রিত হয়েছে। সম্ভবত পশ্চিমে পুঁজির সাথে সমাজের এবং চেতনার যে সম্পর্ক সেখানে এই ধরনের কেলেংকারি নেই।
অর্থকে সাফল্যের মানদণ্ড হিসেবে যদি সমাজে বিবেচনা করা হয়, তবে সেই মানদণ্ড সম্পর্কে স্পষ্টতা রাখতে হবে। তাকে যত ট্রান্সফারেন্ট রাখা যায় ততই কল্যান। তাকে মানদণ্ড না মানার অজুহাতে দারিদ্র্যর মত অবিচারকে টিকিয়ে রাখা বা উপেক্ষা করা আরো ভয়ানক শয়তানি।
সম্পদ জমানো, সম্পদ গড়া – পুঁজির বিচারে এসব সমস্যা নয়। তবে লিবারেল ব্যবস্থার মধ্যে প্রতারণাকে সমস্যা হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়। অন্যকে ঠকিয়ে সম্পদ অর্জন করাকে লিবারেলিজমের সাধারণ পরিণতি বিবেচনা করে লিবারেলিজম নামক তত্ত্বের বিরোধিতা দিনশেষে প্রতারকদেরই সুবিধা দেয়।
(অর্থনীতি কম বুঝি। তার ইতিহাস বুঝি আরো কম।) জমিদারি যতদিন আইনত বৈধ ছিল ততদিন তার ক্ষতিকে স্পষ্টভাবে মোকাবেলা করাও সহজ ছিল। কিন্তু জমিদারির ক্ষতি আর জমিদারি বিরোধিতা দুইটা এক হয়ে যাওয়ার মধ্যেই যে দারিদ্র্য মহান টাইপের ঘোর বা চেতনার ঘরে কেলেংকারি তৈরি হলো তা থেকে বাঙালকে মুক্ত করা না গেলে দারিদ্র্য দূর করা সহজ নয়। এই সমস্যা শেষমেশ চৈতন্যের। অর্থ যে ভাল, সে কথা আমাদের বুঝা দরকার। তাহলে জাতীয় অর্থ-সম্পদের হিসাবটা আরো স্বচ্ছ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
(পুনশ্চঃ - নজরুলের দারিদ্র্য কবিতাকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। সম্পূর্ণ কবিতাকে না পড়ে তার অংশ থেকে দারিদ্র্যকে মহান করা নজরুলের সাথে টিটকারি। বোকামি করে ছাড় না দিলে এমন ব্যাখ্যাকে সাহিত্যের শয়তানি ব্যাখ্যা বলা যায়। দারিদ্র্য কাউকে মহৎ করে না। মহৎ লোকেরা মাঝে মাঝে দরিদ্র হয়ে জন্মায়। মূলত যে জীবন জীবনের প্রাচুর্যকে বুঝতে পারে তাকে আর্থিক বা অন্যকোন প্রাচুর্য দিয়ে আর মাপা যায় না, আটকানো যায় না। দারিদ্র্য অভিশাপ; দারিদ্র্য দূর না করার চেষ্টা আরো বড় অভিশাপ।)
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Delulu and Danger of Innocence of Law
The persistent political crisis in Bangladesh is often framed as a binary dilemma: is the nation suffering from a flawed political culture, ...
-
মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম পরষ্পরকে বিরোধী হিসেবে বয়ানের অন্তত দুইটা ধারা আছে। এই দুই ধারা একে অপরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। একদল মুক্তিযুদ্ধের দখল চায়...
-
যার যা কাজ, সে তা ঠিকঠাক করলেই ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ভাল থাকে। মানুষের সুখ-শান্তি বাড়ে। জীবনের জটিলতা কমে। যার যা কাজ, সে যেন তা করে - এই ক...
-
১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট থাকার সময়ে আমাদের পাশের হল - এফ রহমান - এর আবু বকর নামে এক স্টুডেন্ট নিহত হন। ছাত্রলীগের দুইপক্ষের মারামারি...
No comments:
Post a Comment