Wednesday, April 12, 2023

মেমরি

মনে রাখা মাঝে মাঝে খুবই বাজে ব্যাপার।
মানে - মেমরি - প্রশ্নাতীত গৌরবের বিষয় না মোটেই।
যেমন - ধইন্যা পাতা -
আমার ত মনে আসে এর অন্য নাম -
যখনই দেখি এই সোয়াদি পাতা
যখনই ধুইতে যাই বেসিনে
যখনই তারা থাকতে চায়না হাতের মইধ্যে
তারপর কুচি কুচি করি তাদের
আর ছুরির নিচে যেন হঠাৎ চমকায়ে ওঠে মেমরি
আর কথা কয় ধইন্যাপাতা: 'আমার নাম অন্য কিছু...'
আমি তখন কই - মনে থাকা কোন ভাল ব্যাপার না।
মানে - মেমরি - প্রশ্নাতীত অহম না মোটেই।
তারো আগে আগে ভুল করে একবার -
মুগডাল আর চাল - হালকা ভাজা হয়ে যায় বিভিন্ন মশলার ভেতর
তারা যে উৎপাত করে ঘ্রাণে -
আমি বলি এইভাবে ত মুগডালের ঘ্রাণ ছড়ানো উচিত না আর কোনদিন
কেননা এই সুবাস প্রেমের মতন প্রাচীন
তারপর পানি ঢালি, মিশায়ে দেই বরফজমা রঙিন সবজি
তবু ভাজা মুগডালের ঘ্রাণে যেনবা জাতিস্মরের মতন
আমারে ভাসায়ে দেয় পুনর্জন্মের স্মৃতি
আমি তখন কই - এই ইমোশনের বিচিত্র পুনর্জন্ম কোন ভাল ব্যাপার না।
মানে - মেমরি - প্রশ্নাতীত কোন খাবার না মোটেই।
যেহেতু সময় কম মাঝে মাঝে
এবং যেহেতু ইতর-কিংবা-বিশেষ সকলরই আহার প্রয়োজন
আর চিকেন কোন পাখি না, তাই তারা টুকরা টুকরা হয়ে
ইতালিয়ান সিজনিং, গোলমরিচের গুড়া, ম্যায়ো এবং লেবুর রসে জিরায়
তারপর তারা গরম তাওয়ায় কিংবা গ্রিল প্লেটে পোড়া গন্ধ ছড়াইতে থাকে
রোজমেরি - যেনবা মশলার বাইরে তার কাজ মেমরি খোচানো -
সে কেমনে কেমনে যেন আসর করে মাথার ভিতর
আমি কই - এই রোজমেরির আসর কোন ভাল ব্যাপার না।
মানে- রোজ রোজ মেমরি - নিরূপদ্রব কোন মশলা না মোটেই।
ধইন্যা পাতার কসম,
ভাজা মুগডালের কসম,
কসম রোজমেরি এবং তার সখিদের -
আমি জানি মেমরি মাঝে মাঝে খুবই বাজে ব্যাপার।
_
মেমরি/
এপ্রিল ১১, ২০২৩

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

Saturday, April 8, 2023

ফিনিক্স দাঁড়কাক শকুন ও অন্যান্য পাখিরা

ফিনিক্স পাখি নিয়া অনেক বই পুস্তক আছে। প্রাচীন গ্রিক আমল থেকে শুরু করে রোমানদের লাতিন, আরব জাহানের আরবি এবং বাংলার চেয়ে বয়সে ছোট ইংরেজী ভাষায় অনেক বই পুস্তক অনেক কাইজ্জা।

আমাদের বন্ধুবর হজরত Ferdows AL Hasan একদা ফিনিক্স পাখির প্রেমে পড়েছিলেন। জগন্নাথ হলের এক বিতর্কে তিনি ফিনিক্স পাখির পক্ষে বারোয়ারি বিতর্ক করেছিলেন। তারপর থেকে ফিনিক্স পাখির কথা পড়লে ফেরদৌসের কথা মনে পড়ে। ব্রেইন এইভাবে বিভিন্ন বিষয় জোড়া দিয়ে রাখে বলেই আমরা মনে রাখতে পারি।

যাহোক, ফিনিক্স পাখি প্রাচীন মিসরে সূর্য দেবতার আশীর্বাদ। এই পাখি আরব জাহানের উপর দিয়া উড়ে এসে মিসরে মৃত্যুবরণ করতো। তারপর তার ভস্ম হওয়া দেহ থেকে আবার জন্ম নিত নতুন পাখি।

ফিনিক্স পাখি আসলে কেউ দেখেছে কিনা এই নিয়া সন্দেহ আছে। দ্বন্ধ আছে ফিনিক্সের মালিকানা নিয়া। ঐতিহাসিক পি কে হিট্টি বিশ্বাস করতেন ফিনিক্স আরবের পাখি। ইউরোপ আম্রিকা তথা পাশ্চাত্যের আরব আবিষ্কারের যেই গ্রন্থের নাম তিনি দিয়েছেন - হিস্ট্রি অব দ্যা আরবস সেই গ্রন্থ তার বিশ্বাসের সাক্ষী।

ফিনিক্স পাখির সাথে উড়াউড়ি করে নিজের অজ্ঞানতা আবিষ্কার করার পর খানিকটা মোলায়েম দুঃখ হইলো বাঙালের পাখিরাও কি দুর্বল আর ছোট। ঈগল কিংবা বাজ পাখিদের বাঙাল মনে হয়না শিকারের জন্য কোন কালে পোষ মানিয়েছে। মাছ খাওয়ার জন্য দুয়েকটা মাছরাঙা, বক, কিংবা পানকৌড়িকেও ট্রেনিং দেয় নাই।

দাঁড়কাক কিংবা Raven ভুটানের জাতীয় পাখি। এতো বুদ্ধিমান এর সাহসী একটা পাখির সাথে বাঙালির খাতির আরেকটু বেশি হওয়ার দরকার ছিল। শকুন কেন বাঙালীর অভিশাপ আর ঘৃণার শিকার হলো তা বুঝতে গেলে বাঙালী বিচারজ্ঞান নিয়ে সন্দেহ আরো শক্তিশালী হয়। শকুন নামক পাখিটা বাঙালীর কাছ থেকে যে অন্যায্য ‍দুর্নামের শিকার হয়েছে তার প্রায়শ্চিত্য না করলে বাঙালের শিক্ষা পূর্ণ হবে না।

মহাভারতের রামগরুড় বাংলায় উড়েছিল নাকি সংস্কৃত শ্লোকেই কেবল দুলেছিল তা জানি না।

পেঁচাকেও বাঙাল খুব পছন্দ করে না। বাঙালের সাম্প্রদায়িকতা অন্যায়ভাবে পেঁচাকে আক্রমণ করেছে। অল্পবয়সে আমরা ভাইবোনরা পেঁচাকে ভয় পেতাম। বিশেষত রাতে পেঁচার ডাক শুনলে ভয়ে কলিজা কেঁপে উঠতো। অবশ্য এই ভয় সম্ভবত শিখানো হয়েছিল। অথচ পেঁচার ডাকেও আমি ডাহুকের ডাকের মতন আনন্দের দিন পেতে পারতাম! বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে জীবনানন্দ এবং তারপরে পৌরাণিক ইউরোপে পেঁচার আধিপত্য, মহত্ত্ব, জ্ঞান বিজ্ঞান নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেখে এবং ইউটিউবে পেঁচাদের নিঃশব্দ উড়ালে মুগ্ধ হয়ে পেঁচাকে বেশিরকম ভালবেসে ফেলি। এছাড়া হেগেলের কাব্যিক বয়ান: মিনার্ভা দেবীর পেঁচা, ডানা মেলে সূর্য ডোবার পর - শুনতে বড় ভাল লাগে।

বাদ দেই এসব কথা। ফিনিক্স আসলে বাংলার পাখি না। ফিনিক্সের সাথে বাংলার ঐতিহাসিক কিংবা পৌরাণিক কোন সম্পর্কও নাই। বাংলার দাঁড় কাক দরকার। সাহসী, বুদ্ধিমান, উপকারী - দাঁড়কাকের বড় অভাব বাংলায়।

আর বাংলার কবি সাহিত্যিকদের উচিত অন্তত কয়েক শ বছর শকুনের কাছে ক্ষমা চাওয়া। শকুনের মত একটা নিরপরাধ এবং উপকারী পাখির প্রতি তারা যে অজ্ঞতাপ্রসূত ভাষাগত জুলুম করেছে তার জন্য তাদের উচিত ক্ষমা চাওয়া এবং বন্দনা লিখে দায় শোধ করা।

-
মে ২০২০
লালমাটিয়া, ঢাকা
(আমার পুরাতন ফেসবুক আইডিতে প্রকাশিত)


Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

গুরুত্ব

পরীক্ষার খাতায় ‘... এর গুরুত্ব অপরিসীম’ অথবা '... is very important ...' জাতীয় লাইন ছাড়া বেশিরভাগ পরীক্ষার্থীর লেখা বের হয় না। যেমন মহামারী বিষয়ে কোন প্রশ্ন করলে প্রথম বাক্যটি হতে পারে ‘পৃথিবীতে মহামারীর গুরুত্ব অপরিসীম’ (Epidemic is very important in the world).

(আপনারা ভুল ধইরেন না আপাতত; বাঙ্গালী স্টুডেন্টদের world মানে পৃথিবী। Earth চিনানোর ভুগোল শাস্ত্র কিংবা world কে বিশ্ব বানানোর অনুবাদ শাস্ত্র এখনো বিকশিত হয় নাই। পাবলিক মানে সরকারি আর সরকার বিরোধিতা মানে রাষ্ট্রদ্রোহ - এমনসব ভাষিক জটিলতা ভাষাবিজ্ঞানীরা সমাধান করতে না পারলেও হাতিরা পারে। হাতির চারটি পা, আর সমাসের নিয়মে যার হাত আছে সেই হাতি। এইবার বুঝেন, হাতের তলায় পাদপিষ্ট এই ভাষায় সম্ভব। সম্ভব না হলে ননসেন্সও সম্ভব না।)

আপনাদেরকে সার্কাস ছাড়াই হাতি দেখায়ে এইবার ‘হাতি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী’ আলোচনায় ফেরত আনি। এমন বাক্য স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় আমি লিখেছি কিনা দয়া করে তা জানতে চাইবেন না। তবে মাস্টার হিসেবে আমি স্টুডেন্টদের এমন বাক্য না লেখার পরামর্শ দেই। পরীক্ষার খাতায় মাস্টারদের বিরক্ত না করার সাথে নম্বরের কার্যকারন বিষয়ক অনুমেয় সম্পর্কের কারনে স্টুডেন্ট লাইফে মাস্টারের পরামর্শ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

উত্তর লেখা সংক্রান্ত কিংবা মৌখিক বক্তব্যে এই ‘গুরুত্বপূর্ণ’ স্বভাব ত্যাগ করা সহজ কাজ নয়। লোকেরা স্কুল কলেজ ভার্সিটি ত্যাগ করিতে পারে, কর্ম জীবনে অনেকে মাস্টার কিংবা বিভিন্ন প্রকার স্যার মহোদয় হইতে পারে। তবু এই ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বানান এবং উচ্চারণ ছাড়িতে পারে না।

গুরুত্ব বাড়ায়ে তুললে লঘুত্বও তীব্র হয়। আর গুরুত্ব যদি মাপার উপায় না থাকে তবে পাটখড়িও চন্দনকাঠ। সম্ভবত চিন দেশীয় প্রবাদ শুনেছি - মহৎ লোকদের অতিরিক্ত মহৎ করে তুললে সাধারণেরা আরো ছোট হয়ে পড়ে। মনের মধ্যে সংকোচ এবং আরো আরো সংকোচের চাপে দেহের চেয়েও ছোট জীবন নিয়ে এদেশে মানুষেরা দিনাতিপাত করে। জড়ো হতে হতে জীবন এখানে জড় বস্তুর নির্ভরতা ছাড়া আর অবশিষ্ট নাই। ন্যাংটা জীবন ওরফে জীববিজ্ঞানের জীব মাত্র হিসেবের মানুষেরা লঘু জীবনের খামতি মেনে লঘুতর এবং লঘিষ্ট সাধারণ গুনিতকের জীবনে নামিয়াছে।

ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র প্রত্যেকের লঘু গুরুর আলাদা হিসাব আছে।

লঘু-গুরু না মানলে লাঞ্চনার হুশিয়ারি ছোটবেলায় শুনেছি। জীবনে কোনটা লঘু আর কোনটা গুরু তা চিনতে না পারলে সামাজিক যন্ত্রনা অনেক। তবে কোন কোন সমাজে লাঞ্চনা তৈরির ক্ষমতা আর লাঞ্চনা সয়ে যাওয়ার দুর্ভাগ্য লঘু-গুরু নির্ধারক। যতই লাঞ্চিত হবে ততই লঘিষ্ট জীবন; অপরকে যতই লাঞ্চিত করিবে তোমার জীবন ততই গরিষ্ট হয়ে উঠবে। এমনই সামাজিক নিয়মে ভ্যাবাচেকা খাইতে খাইতে এখন আর খাওয়ার জায়গা নাই।

(খাইতে চাই নাই তবুও জীবনে দুইটা চড় আর ধরতে চাই নাই তবু দুইবার দুজনের পা ধরার পর এই সামাজিক শিক্ষা আমার হয়েছে। সামাজিক জীব হিসেবে ‍দুর্বল উপস্থিতি আমি তারপর মেনে নিয়েছি। লঘু-গুরুর সামাজিক বণ্টন আর আমার মূল্যবোধ ও শিক্ষার সাথে মিলে নাই।)

সমাজের কথা বললাম। পরিবারের কথা বলব না। রাষ্ট্রেরটা বলি। রাষ্ট্র তার লঘু গুরু হিসেবের জন্য সংবিধানের ঘোষণা ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ’ মেনে চলতে বাধ্য। রাষ্ট্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তার ক্ষমতার মালিকরাই হবে এমনটাই সংবিধানের বক্তব্য। লঘু-গুরু মাপাতে রাষ্ট্র যদি সংবিধান না মানে তবে বুঝতে হবে রাষ্ট্রের বড় কোন অসুখ বিসুখ আছে।

রাষ্ট্রের যে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স বা অর্ডার অব প্রিসিডেন্স ওরফে পদমানক্রম আছে তা শুধু অফিসারদের অনুষ্ঠানে প্রয়োগযোগ্য। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অফিসারদের কে কাকে সালাম দিবেন আর কে আগে বসবেন সেই গুরুত্ব নির্ধারনে এই পদমানক্রম অনুসরনীয়। পদমানক্রম শুধু পদমানক্রমে উল্লেখিত অফিসারদের পরস্পরের অগ্রাধিকার নির্ধারনে ব্যবহৃত হবে। নন-অফিসিয়াল কম্যুনিটিতে পদমানক্রম কাউকে কোন অগ্রাধিকার দিবে না; বরং এমন কম্যুনিটির রীতি অনুযায়ী তা নির্ধারিত হবে। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স রাষ্ট্রের কাজে নির্বাচিত এবং নিয়োজিতদের গুরুত্ব নির্ধারক। জনগণের সাথে তুলনীয় কোন বিষয় নয়। জনগণের সাথে তুলনা করলে সংবিধান সর্বোচ্চ আইন, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারে না। জনগণের সম্মিলিত ক্ষমতার সাংবিধানিক জিম্মাদার হিসেবেই রাষ্ট্রের কাজে নির্বাচিত এবং নিয়োজিতগণ পদমানক্রম মেনে চলেন।

গুরুত্বে পূর্ণ নয় কারা এমন কোন তালিকা কি কোথাও পাওয়া যায়? লঘুত্বের চাপে আছি।

লঘু-গুরু চিনলাম না এখনো। ফেসবুকের লঘুত্ব জীবনের গুরুত্ব নিয়া টানাটানি করে। আমি এই লঘু ও হালকা পোস্ট লেইখা সময় গুরুত্বের সাথে মশকরা করি।
-

মে ২০২০
/লালমাটিয়া, ঢাকা

(ফেসবুকে প্রকাশিত)

Tuesday, April 4, 2023

বিকল্প

রডের বিকল্প বাঁশ,
বেগুনের বিকল্প কুমড়া,
মাংসের বিকল্প কাঁঠাল,
এভাবে আমরা বহু বিকল্প সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করি...
এসবের পরেও স্মার্ট লোকেরা যখন চ্যালেঞ্জ করে - 'পারলে বিকল্প দেখান'
তখন এক হাজার বছর ভেবে বিনীতভাবে বলি -
মানুষের ইতিহাসে আলীর বিকল্প কোথায় পাব, বলেন?

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম পরষ্পরকে বিরোধী হিসেবে বয়ানের অন্তত দুইটা ধারা আছে। এই দুই ধারা একে অপরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। একদল মুক্তিযুদ্ধের দখল চায়...