Saturday, December 12, 2020

কচুরি পানা

 বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে বাংলাদেশে একটা আগাছা মুসিবত তৈরি করে। এর আগমন নিয়ে একাধিক গল্প আছে। প্রধান গল্পটা হচ্ছে নারায়নগঞ্জের পাট ব্যাবসায়ী অস্ট্রেলিয়া থেকে এটি বাংলায় এনেছেন। জন্মসূত্রে স্কটিশ অভিবাসী জর্জ মরগান এই আগাছাটির ফুলের সৌন্দর্য আর পাতার রূপ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। আপনারাও এর ফুল পাতা দেখে মুগ্ধ হয়ে থাকেন। আগাছাটির নাম কচুরি পানা।


আরেক গল্প হচ্ছে ঊনিশ শতকের শেষে কলকাতা বোটানিক্যাল গার্ডেনে এটি আনা হয়। সেখান থেকে কোন এক পানামুগ্ধ মানুষ সেটিকে ঢাকায় নিয়ে আসেন।

তৃতীয় গল্প হচ্ছে এটি আসাম থেকে ব্রহ্মপুত্র দিয়ে গড়িয়ে ভেসে বাংলায় পড়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে এই আগাছা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে জার্মান ষড়যন্ত্রও আবিষ্কার হয়েছে। ভারতীয় প্রজাদেরকে দুর্বল করার মাধ্যমে বৃটিশ রাজকে নাজেহাল করার জন্য জার্মানি এই পানা ছড়িয়ে দিয়েছে - এমন তত্ত্বও পাওয়া যায়। সে কারনে লোকেরা এর নাম দিয়েছিল জার্মান পানা। অন্য বর্ণনা হচ্ছে এক বহুজাতিক কম্পানি উদ্দেশ্য প্রণোধিতভাবে বাংলায় কচুরিপানা এনেছে।

কচুরিপানা মোটেও স্বস্তিদায়ক কোন অভিজ্ঞতা ছিলনা। যদিও আমরা কৃষি শিক্ষা বইয়ে এর সার বিষয়ক উপযোগিতার কথা জেনেছি তবে আমার বন্ধুর সাথে একবার বাজি ধরে হেরে গিয়েছিলাম। চারপাঁচটা বড় কচুরিপানা একসাথ করে সে বলল সে এগুলোর উপর দাঁড়াতে পারবে। হাটুর উপর শরীর ভিজবে না। (আমরা গ্রামের পোলাপান অল্প বয়সেই সাঁতার জানতাম। কাজেই ডুবে মরার ভয় ছিল না।) আমি ভাবলাম গভীর খালের পানি এইকয়টা পানার উপর সে ভাসতে পারবে কিন্ত কোমর পর্যন্ত ভিজবে নিশ্চয়ই। আমাকে অবাক এবং পরাজিত করে সে খালের পানিতে কচুরিপানার উপর দাঁড়ালো। একটাকা বাজিতে আমি হারলাম। সে পাওনা রইল। অবশ্য একটাকা দিতে হয় নাই। কারন সমপরিমাণ বাজিতে আমি জিতে গিয়েছিলাম।

(মাঝ পুকুরে ডুব দিয়ে পুকুরের তলার মাটি উঠানোর বাজি। আমার ভয় হয়েছিল দম বন্ধ হয়ে যায় কিনা, শিকলে টেনে ধরে কিনা। সেসব অতিক্রম করলে তুললাম মাটি। সেকি অনন্য জিত। ওরকম জিত না হলে এতদিন বাঁচতাম কেমন করে! আমার বন্ধু কচুরি পানাকে আমার চেয়ে ভাল চিনত। আমার বন্ধুকে অবশ্য আমি হারিয়ে ফেলেছি। বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর, আর অক্ষর আক্রান্ত মানুষের সাথে মিশতে মিশতে আমার ভাষা কিছুটা বদলে যাওয়ায় কিংবা অন্য কোন অনাবিষ্কৃত সাধারণ কারনে আমার বন্ধু আমাকে ”আপনি” বলে অন্যরকম ভাবে বড় হয়ে যাওয়ায়... সুযোগ পেয়ে নিজের কথা আপনাদের শুনিয়ে দিলাম।)

কচুরি পানা ছুটতে পারে অসাধারণ। জলমাতৃক বাংলাদেশে স্রোত আর বাতাসের গতিতে ছুটতে পারার আনন্দ পেয়ে পেয়ে সারা দেশ দখল করল সে। কৃষি জমির এক বিরাট অংশ। নৌকার পালের মত পাতা আর জলের সাথে প্রায় ভাসমান শেকড় আর ওড়ার মত পাতলা শরীর - সবমিলে চেঙ্গিস খানের অশ্বারোহীদের মতন গতি পেল এই মুসিবত।

দেখতে সুন্দর এই আগাছা বাংলার জনপদকে নাজেহাল করে ছাড়ল। ফসলি জমির দখল নিয়ে ফসলের বারোটা বাজিয়ে দিল। ময়মনসিংহ খুলনা কুমিল্লা সহ দেশের বিভিন্ন বিলে ধান চাষ অসম্ভব হলো। বর্ষায় ভেসে ভেসে এসে জমিতে বসলে বর্ষার শেষে কচুরি পানার হাত থেকে জমি উদ্ধার করে চাষ করার শক্তি কই পাবে কৃষক! আর সেই শক্তি পেলেও পরের বর্ষায় আবার দখল নেয়ার জন্য জমিদারদের জমিতে বিনা পয়সার দলবাজ গুন্ডার মত রায়ত থাকত কিছু কচুরি পানা। কৃষক কিছু জমি পরিষ্কার করলেও সব জমি পরিষ্কার করা অসাধ্য। আর সামগ্রিকভাবে তাকে না ঠেকালে আবার দখল করার ক্ষমতা ছিল কচুরি পানার। কারন অন্যান্য গুনের পাশাপাশি সন্তান উৎপাদনের গতি ও ক্ষমতা অন্যান্য ফুল্ল-পত্রশোভিত উদ্ভিদের চেয়ে কচুরিপানার বেশিই ছিল।

বৃটিশ সরকার এই সমস্যাকে বিপ্লবী আন্দোলনের (বৃটিশরা যাদের সন্ত্রাসবাদী বলতো) বিপদের পরে সর্বোচ্চ আপদ হিসেবে বিবেচনা করেছিল। মহামারিতে ম্যালেরিয়া তুল্য এই পানা ম্যালেরিয়া ছড়ানোর মশার জন্য চমৎকার আবাস গড়ে তুলেছিল। শুধু ফসল উৎপাদনে ক্ষতি সীমিত না। ইকোলজির নষ্ট করেছে। জনস্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছে।

ফসল উৎপাদন কমাতে শুধু মানুষের খাবারেই নয়, গবাদি পশুর খাদ্যেও সংকট তৈরি হয়েছে। ধান চাষ বন্ধ হলে গরুর জন্য খড়বিচালিও বন্ধ। তারপর মহেশের গল্প। আপনারা জানেন সেটা। (এই গানও শুনতে পারেন চাইলে: https://bit.ly/2Hx5Kxn) খাবার হিসেবে গবাদি পশুর জন্য কচুরিপানা ক্ষতিকর। আমার যে বন্ধুর সাথে বাজিতে হেরে গিয়েছিলাম সে বন্ধু গরুকে খাওয়ানোর জন্য কচুরি পানা আনতো। নিয়মিত বা বেশি খাওয়ানো যায় না। গরু দুর্বল হয়ে পড়ে। খুব বিপদে না পড়লে কৃষক গরুকে কচুরি পানা খাওয়াতে রাজি হবেন না। কচুরিপানা খাওয়া গরুরা তখন দুর্বল হয়েছে। কচুরি পানা খেয়ে গরুর স্বাস্থ্য নষ্ট হয়েছে। অসুখ বিসুখ হয়েছে। কৃষকের জন্য যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা।

আমাদের দেশ নদীমাতৃক সে কথা আপনারা জানেন। এটা কম বলা হলো। জলমাতৃক বললে আরো ঠিক হয়। (তবে প্লাস্টিক আর বাণিজ্যিক আবর্জনা ফেলে বাংলার মাতা তথা নদীকে হত্যা ও দখলের চেষ্টায় কোন ত্রুটি কিংবা দায়িত্ব অবহেলা বা আন্তরিকতার ঘাটতি কোনটাই দেখায়নি কাণ্ডজ্ঞানে দরিদ্র-ফকিন্নিরা। বাংলা কেমন রাক্ষস জন্ম দেয় যে রাক্ষস নদীও হজম করে ফেলতে পারে। বাংলার রূপ কথায়ও এমন রাক্ষস নাই।) মশকরার চুড়ান্ত হচ্চে জলমাতৃক দেশের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হিসেবে সড়ক পথকে পলিসিতে রাখা! অবশ্য বৃটিশ বাধ নির্মাণ ব্যবস্থা, রেললাইন তৈরি এই প্লাবনভূমির প্রতিবেশের বারোটা বাজানোর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের শুরু। এবং প্রতিবেশ বিরোধী রাষ্ট্রীয় জীবন ব্যবস্থা এখনো চলছে। অবশিষ্ট বনজলাশয় বৃটিশদের দেখানো পথে আরো ভয়ংকরভাবে ধ্বংস করার নাম রেখেছি আমরা উন্নয়ন।

বিশ শতকের শুরুর দশকগুলোতেও প্রধান যোগাযোগ ব্যবস্থা নদী-নালা খাল-বিল ছিল। খাল-বিলে কচুরি পানা যোগাযোগ ব্যবস্থার নষ্ট করে দিয়েছিল। দল বাধা কচুরি পানা যোগাযোগ বন্ধ অথবা জলযানের গতি অনেক কমিয়ে দিয়েছিল।

ক্ষতি যত মারাত্মক হয়েছিল ততটা হতো না যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে জনগণের জন্য ঠিক সময়ে কৌশল নির্ধারণ করা হতো। কচুরিপানাকে নির্মূল করা হবে নাকি বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হবে এ ব্যাপারে দোলাচালের মধ্যে ছিল তখনকার রাষ্ট্র। ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত কচুরিপানা দূর না করে তা নিয়ে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট চালানো হয়েছে। পটাসিয়াম উৎপাদন কিংবা শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার কিংবা ছাই উৎপাদন ইত্যাদি নানা উপায়ে তা ব্যবহারের চিন্তা করা হয়েছে।

বাংলার জনগণের সাথে তামাশার বিরতি হয় ১৯৩৬ কচুরিপানা আইনের (Water Hyacinth Act 1936 shorturl.at/nCFUV) আওতায় নির্মূলের উদ্যোগ নেয়ার মাধ্যমে। অথচ একই উদ্দেশ্যে ১৯০৮ সালে কোচিন চায়নাতে (তখনকার ফরাসি কলোনি বর্তমান ভিয়েতনামের অংশ) এবং ১৯১৭ সালে বার্মাতে (তখন বৃটিশ কলোনি, এখন রোহিঙ্গা জেনোসাইডার রাষ্ট্র মায়ানমার) আইন তৈরি করা হয়। ১৯৩৭ এ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি এবং রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কচুরিপানা দূর করার এজেন্ডা যোগ হয়। ১৯৩৯ সালে উপনিবেশি রাষ্ট্র ও জনগণের যৌথউদ্যোগে কচুরিপানা সপ্তাহ পালন করে কচুরিপানার বিরুদ্ধে দুর্বার অভিযান চালায় বাঙালি। কিছুটা সাফল্যও আসে। কিন্তু কচুরিপানা আজো মীর জাফরদের মত রয়ে গেছে। যদিও কন্ট্রোলে আছে অনেকটা তবে বাংলা থেকে নির্মূল হয় নাই। আর নির্মূল হয় নাই বৃটিশ মানসিকতার রাষ্ট্রীয় নীতি। রাষ্ট্র চিরদিন জনগণকে উদ্যমী করার বদলে কচুরিপানা খাওয়া গবাদি পশুর মতন দুর্বল করে রাখে।
....
কচুরি পানা/১৭.০২.২০২০

[রেফারেন্স: কচুরি পানার ইতিহাস লিখেছেন ইফতেখার ইকবাল। “Fighting With a Weed: Water Hyacinth and the State in Colonial Bengal, c. 1910–1947” শিরোনামের লেখা: shorturl.at/fikOW । এই পোস্টের তথ্য উক্ত প্রবন্ধ থেকে নেয়া হয়েছে। আর সাথে বাংলাপিডিয়ার ছোট ভূক্তি shorturl.at/cxPX2 এবং ভেলাম ভ্যান শেন্ডেলের এ হিস্টরি অব বাংলাদেশ।

সতর্কতা: গবেষণাভিত্তিক তথ্য প্রমাণের স্টাইলে এই পোস্ট লেখা হয় নাই। আবেগের যথেষ্ট চিহ্ন আছে শব্দে বাক্যে। কত আর কচুরিপানা খাওয়া যায়। কচুরি ত নয়, এ যে কচুরি পানা।]

Tuesday, July 14, 2020

সাদা মন

এমন শ্যামল মেঘরঙা ভোরে,
কেন আমার কুসুমের কথা মনে পড়ে?

শৈশব থেকে অলি-গলি জনতার পথ পার হয়ে
কত ঘাস লতা পাতা মাটি ও পাথর হজম করেছে এই মন,
তবু মগজের গরু জাবর কাটতে কাটতে সেই দিনক্ষন ... ডেকে আনে ভোর এক সকালের ঘুমের ভেতর ... মাঝেমাঝে হেটে যায় সামান্য লালরঙা ফর্সা কুসুম৷

শিশুদের গ্রামীণ রাতে পেঁচারা সাতঘুটি খেলে আসমানে দাগ কষে নক্ষত্র ছড়িয়ে দিয়ে...
নক্ষত্রের আর কি কাজ, পেঁচার সাতঘুটি হওয়া ছাড়া!
হয়তো এখনো তাদের দাম আট আনার বুট ভাজা এবং কোকোলা লজেন্সের চেয়ে কম;
সপ্তর্ষির দাম গল্পের এক লাইন -
ঋষি নয়, ‘সাত বোন - তারকা হয়ে আসমানে হাসে' ...
অথবা জিকিরে রাতজেগে বড়পীর কিংবা শাহজালাল হতে চাওয়া মাউন ফকিরের ইশারা -
তারকা ধরে ধরে আঁকে নূহের কিশতি আর আদম সুরত৷

আমি কবিতা লিখতে চাই-
দাউদের সহিংস সব কবিতার পরে
আদম সুরতের কবিতা,
নূহের কিশতির কবিতা,
আদমের পুত্র কাবিলের কবিতা৷

ইউরোপের বরফের চাপে ঈসাও সাদা হয়ে যায়৷
তাই শতকে শতকে পৃথিবীতে গতিময় হয় আজ্রাঈলের প্রাণঘাতী পাখা৷
মুহম্মদকে ডাকা হয় ‘চকচকে সিন্ধুর তরবারি’!

অথচ আদমের সুরতে ছিল হাওয়ার প্রেম
নূহের নৌকায় ছিল প্রাণের সুরক্ষা
নাজারাতের দয়ালু নবি ঈসার চেহারা ছিল বাঙলার মতই শ্যামল ...

সবকিছু তলোয়ারে চেঁছে এবং সাদা ক্রিম মেখে আমাদেরে একাকার একঘেয়ে সাদানত করেছে পশ্চিমে উদয় হওয়া নিষ্ঠুর ফর্সা দুনিয়া!
তাই হাবিল আর কাবিলের গল্পে কেন কাবিল ফর্সা ছিল না? - সে কথা ইউরোপ জানে আর জানে লিভার ব্রাদার্স...

...

এই সকালে আমি কুসুমকে দেখি, এখনো ততটা সাদা, পুরুষের সমাজে যতটা টারজানের বোন৷

কি অদ্ভুত!
শৈশবে অনেকই পানকৌড়ির প্রেমে পড়ে,
জলের ভেতর ডুবসাঁতার দিয়ে সময় চোখ তোলে - ‘কবিদের পানকৌড়ি ভালবাসা সাদা স্বপ্নে মাংসের গন্ধে অন্ধ; তারা কখনো সৌন্দর্যের চোখ খোলে না!’

তাই দারুন মশলাদার কবিতার মত এখনো বহুজাতি-কম্পানিগণ
বিচিত্র পরের কাছে এমন সৌন্দর্য বেচে, যা শুধু তাদেরই বিষ-দন্ত-নখর ভরা সহিংস আপন৷

বাজার প্রভু, রেসালাত নয় প্রফিটের প্রফেট পাঠায়,
ভোগ-ধর্মে হেদায়াত পেয়ে দলে দলে কলমা পড়ে - ‘বাজার ছাড়া প্রভু নাই’ এবং আমরা সকলেই বিশুদ্ধ কনজ্যুমার ...

জিব্রাইল ক্লান্ত এবং ভীত; মুনাফার স্বর্গসুখ পেতে বিজ্ঞাপনী অহি আসে- সাদাই সুন্দর নয়; ফ্রেশ মানে সুন্দর ...

ভবিষ্যতে জিব্রাইল ফর্সা না হোক ফ্রেশতো হবেই...

কেন তবু কুসুমের কথা ‘মনে’ পড়ে?
হাজার বছরের বিষ্ঠায় গড়া ‘সাদা মন’ কিভাবে পরিষ্কার হবে?
ঠিক কোন অর্গানিক মন্ত্রে আমাদের ‘মন’ আর্য-আশরাফ-সাদা পশ্চিমকে অতিক্রম করবে?

_
(ডিসেম্বর ২০১৫/ এডিট: জুলাই ২০২০)

Tuesday, May 5, 2020

ছোট্ট সন্ধ্যা (অনুবাদ)

ছোট্ট সন্ধ্যা (مساء صغير)
মূল: মাহমুদ দারবিশ

অনুবাদ: লোকমান বিন নুর
_____

এক তুচ্ছ গ্রামে নামল ছোট্ট সন্ধ্যা
আর চোখ দুজন ছিল ঘুমন্ত

আমি রোমন্থন করলাম তিরিশটি বছর এবং পাঁচটি যুদ্ধ
এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এই সময়
আমার জন্য লুকিয়ে রেখেছে একটি গমের শীষ

গায়ক গাইছে
অগ্নি এবং অপরিচিতদের গান

আর সন্ধ্যা ছিল অন্ধকার
এবং গান গাইছিল গায়ক

এবং তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে -
“তুমি কেন গাইছ?”
সে তাদের জবাব দিল-
“কারন আমি গাই”

এবং তারা তার বক্ষ তল্লাশি করলো
অতঃপর সেখানে তাঁর হৃদয় ছাড়া আর কিছুই পেলো না

এবং তারা তার হৃদয় তল্লাশি করলো
অতঃপর সেখানে তার আপনজন ছাড়া আর কিছুই পেলো না

এবং তারা তার কণ্ঠস্বর তল্লাশি করলো
অতঃপর সেখানে তার দুঃখ ছাড়া আর কিছুই পেলো না

এবং তারা তার দুঃখসমূহ তল্লাশি করলো
অতঃপর তারা কারাগার ছাড়া আর কিছুই পেলো না

এবং তারা সেই কারাগার তল্লাশি করলো
অতঃপর তারা কারাগারের ভেতর নিজেদের ছাড়া আর কিছুই পেলো না

আর সন্ধ্যা ছিল অন্ধকার
এবং গান গাইছিল গায়ক
-

অনুবাদ - ২৯/০২/২০২০

পলায়ন

Bird In Cage Drawing at GetDrawings | Free download

পলায়ন
_____


আমি পা‌লিয়ে যা‌চ্ছি
রাস্তা প‌রিষ্কার
আমি পা‌লিয়ে যা‌চ্ছি
রাস্তা প‌রিষ্কার

আমি পা‌লিয়ে যা‌চ্ছি
আমার সাথে দেখা হলো আমার শৈশবের স্মৃ‌তির
আমি পা‌লিয়ে যা‌চ্ছি
রাস্তা অস্পষ্ট, কুয়াশায় ঢাকা

আমি পালাতে চেয়েছি মাছ হয়ে
‌কিন্তু তারা নদীগুলোকে শু‌কিয়ে মেরেছে
আমি পালাতে চেয়েছি পা‌খি হয়ে
‌কিন্তু তারা সব বৃক্ষকে উৎখাত করেছে
আমি পালাতে চেয়েছি হ‌রিনের মত
‌কিন্তু তাদের বনবিনাশী লোভ আর অহংকার ছি‌নিয়ে নিয়েছে পা‌লিয়ে বাঁচার আড়াল এবং ঘাসলতাপাতা
আমি পালাতে চেয়েছি ‌ছোট ছোট পোকা এবং ঘা‌সফ‌ড়িং হয়ে
‌কিন্তু যা কিছু বা‌কি ছিল ঘাসলতাপাতা - ক‌বিতার আলখেল্লা পরা ভাঁড়েরা নত হয়ে কু‌র্নিশ করতে করতে তা খেয়ে ফেলেছে
অথবা সব ফুল ঘাসলতাপাতায় কীটনাশকের মত ছি‌টিয়েছে সহমত পদ্যের ‌বিষাক্ত কা‌লি

আমি পালাতে চেয়ে‌ছি ফুল হয়ে
অথচ তারা উন্নয়নে ঢালাই করেছে সকল মা‌টি,
মা‌টিকে মমতা‌হীন করেছে ফুলের জন্য আর গাছের ‌শেকড়কে বন্দী করেছে মসৃন প্লা‌স্টিকের ভিতর

‌সেখানে একটা বৃক্ষ চিৎকার ক‌রছে
আমি পালাবো কিভাবে
আমি পালাবো কিভাবে
আমি পালাবো কিভাবে

-


২৯/০২/২০২০

Image: GetDrawings.com

বাঙালির বল



পোলাও কাচ্চি তেহারী খিচুড়ি-ভুনা
রুটি বা পরোটা, ব্রেড ও জেলির ধুনা -
সয়ে গেছে, যাবে, বীর হিম্মতে, তবু -
বাঙালি ও ভাতে কখনোই হারবে না
উনো-ভাতে দুনো - বাঙালির বল
এটাই হাড়ির খবর;
ভাত হারে নাই, টপকে গিয়েছে
উপনিবেশের ঝড়।
ভাতঘুমে তাই কবিরা লিখেছে সাহসী ভাতের গান -
ঝোল মাখলেই ভাত অজেয়; স্বাদ ছোঁয় আসমান।
ভাত খেয়ে দিনে-রাতে,
তোমরাও বলো সাথে:
“পরাজিত নই, রুটি, পরাজিত হয় না ভাতে!
দারুন মশলা মেখে আনন্দ দেই, বাঙালির পাতে পাতে।”
-

০১ মার্চ ২০২০
photo: collected from google image

Saturday, May 2, 2020

শিক্ষার সাথে জীবনের সংযোগ হোক

📚
-কিছু জরুরি বিষয়ের জ্ঞান বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে আমরা পাই না। ব্যতিক্রমি কোন প্রতিষ্ঠানে বা পারিবারিকভাবে সেই শিক্ষা কেউ কেউ পেয়ে থাকেন। এইসব জ্ঞানের অভাব এদেশের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে জীবন-যাপন কিংবা বাস্তবতার দূরত্বের প্রমাণ। শিক্ষা কারিকুলামে দারিদ্র্যের সংযোগও এতে প্রমাণ করা যাবে।

খুব জরুরি অথচ কারিকুলামে নেই এমন তিনটি বিষয় (খাদ্য, শরীরচর্চা, আয়-ব্যয়) এখানে উল্লেখ করছি:

১. 🥘
খাদ্য বিষয়ে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা চুপচাপ। প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কারিকুলামে ছড়ানো ছিটানো খাদ্যজ্ঞানের নমুনা বা কিছু মূল্যবোধ খুঁজে পাওয়া যাবে কিন্তু আমাদের জীবনে খাদ্যজ্ঞানের গুরুত্ব কুঁড়ানো মানিক দিয়ে মিটানো সম্ভব নয়। (তাছাড়া সবাই মানিক কুঁড়াতে জানে না; আর সবাই যদি এমনিতেই জেনে থাকে তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কি প্রয়োজন!) আমাদের কিশোর তরুনরা পড়ালেখার উদ্দেশ্যে যখন ঘর ছেড়ে বাইরে থাকে তার নিজের খাবার কিনে রান্না করে খাওয়ার ক্ষমতা বেশিরভাগের থাকে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খাদ্যের ভালমন্দ কোনরকম-চলে-মতন মেস ব্যাবসা আর বুয়াদের হাতে নির্ভরশীল। মূলত দুইটা দিকের জ্ঞান খাদ্যের ক্ষেত্রে আমরা স্কুল কলেজ থেকে পাইনা: পুষ্টিজ্ঞান এবং রান্নার জ্ঞান। কোন খাবার শরীরের কেমন উপকার করবে, কিভাবে পুষ্টি অনুযায়ী খাদ্যগ্রহন করা প্রয়োজন? – এই জ্ঞান আমাদের নেই। আমরা দিনের পর দিন অসম খাবার খাই। তাতে পয়সা খরচ হয়, পেটও ভরে কিন্তু শরীরে সাম্য আসে না। আমরা জানি, পুষ্টিজ্ঞান থাকলেই লোকেরা সুষম খাবার খাবে এমন নয়। আমাদের কিশোর তরুনদের কালচারে খাবারের সাম্য এখনো তৈরি হয়নি। শিক্ষা জীবন শেষ করে চাকরি বাকরির পর সংসার শুরু করলে কারো কারো পুষ্টিজ্ঞান বাড়লেও অনেকেই আগের অভ্যাসের সাথে লড়াই করে আর বের হতে পারেন না। যেমন শুধু ভাত মেপে খাওয়া যে কতটা কষ্টকর আর সাধনার ব্যাপার যারা চেষ্টা করেছেন তারা বুঝেন।

দ্বিতীয় যে বিষয়ের অভাবে আমরা বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করি তা হচ্ছে রান্নার জ্ঞান। এ বিষয়ে বেশিরভাগের অভিজ্ঞতাই মায়ের রান্না বা পরিবারের রান্নার অভিজ্ঞতা। বর্তমানে অবশ্য রান্নার জ্ঞান উন্মুক্ত। ইউটিউবের কল্যানে যেকোন রান্নার উদাহরন (ডেমো) সহ কাজের জ্ঞান পাওয়া যায়। তবে রান্না শেখার জন্য যে পরিমাণ চর্চার দরকার তা সময়সাপেক্ষ। আমাদের কিশোর তরুনরা শুধু রান্নার জ্ঞান জানলে তাদের জীবন-মান এবং স্বাস্থ্যবৃদ্ধি হবে। আমরা কিশোর তরুনদের স্বাস্থ্যের ভার সস্তা শ্রমের উপর দিয়ে নির্ভার থাকতে চাই। মায়ের হাতের রান্না ছেড়ে কিশোর-তরুনরা বুয়ার রান্নায় নির্ভরশীল। জোয়ার ভাটার দেশের ভাসমান অর্থনীতিতে বুয়াদের সস্তাশ্রম বন্ধ করে দেয়ার কথা বলছি না; বুয়া হয়ে লোকেরা সস্তায় শ্রম বেঁচুক সেই চাওয়াও আমার নেই। এমনকি হঠাত গজিয়ে ওঠা কসমোপলিটান রেস্টুরেন্ট ব্যাবসার কড়াইতেও কিশোর তরুনদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার সুযোগ নেই। বরং কিশোর তরুনরা যদি রান্না শেখে তবে বুয়ার সহায়তা নিয়ে তার খাদ্যের মান যথেষ্ট ভাল হতে পারে; পুরোটা নিজেরা করলে সে ত আরো আত্মনির্ভরশীল জীবন পাবে। (রান্নায় আত্মনির্ভরশীল হওয়ার দরকার নেই এমন অসাধারণ প্রতিভাধর তরুন কিশোররা কি করবেন তা আমি জানি না।) দুয়েকবেলা মুরগিভুনা আর খিচুড়ি রান্নার জ্ঞান দিয়েও এই সমস্যার সমাধান হবে না। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরির জ্ঞান লাগবে আমাদের কিশোর তরুনদের।

২. ⚽️
আমাদের শরীর চর্চার জ্ঞানটাও ভাসা ভাসা। যথেষ্ট খেলাধুলার সুযোগ আমাদের নেই। আবার শরীরচর্চার জ্ঞানও নেই। আমরা পূর্বের যোগ ব্যায়াম, কিংবা পশ্চিমের জিমনেসিয়াম – কোন শিক্ষাই স্কুল কলেজে পাইনা। স্কুলে যে সামান্য পিটি প্যারেডের ব্যবস্থা থাকে তা দিয়ে শরীররক্ষা হবে এমনটা ভাববার সুযোগ নেই। স্কুল-কলেজ-মাদরাসায় খেলাধুলার সুযোগ সরঞ্জাম নেই। গোল্লাছুট, দাঁড়িয়াবান্ধা, হাডুডু ইত্যাদি খেলার সুযোগও এবং সাঁতার কাটার মত পুকুর গ্রামে গ্রামে কমে গেছে। জনসংখ্যা অনুপাতে সাঁতার শেখার ব্যবস্থা নেই; পুকুর যেমন মানুষের তুলনায় কমেছে, মানুষের জন্য খাদ্য উৎপাদন – মাছ চাষের ব্যাপক বিস্তার এবং চাষের ক্ষেত্রে প্রচুর মাছের খাবার ব্যবহার – আমাদের পুকুরগুলোকে সাঁতার শেখা ও চর্চার জন্য অনুপযোগী করে রেখেছে। খেলারমাঠ হারিয়ে গিয়েছে শহর গ্রাম সবখানে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ‘খেলাধুলা হারাম’ নামক ফতোয়া জীবনকে কঠিন করে তোলার আয়োজন করেছে। আমাদের দুর্ভাগ্যের চর্চা কোথাও থেমে নেই। ঘনবসতির দেশে বসতির ডিজাইনে খেলার মাঠ অনুপস্থিত। মূলত বসতিগুলো কোন নগর বা গ্রাম পরিকল্পনা কিংবা ডিজাইনের মাধ্যমে হয় না। বৈচিত্রের যতই গুনগান করি না কেন, বসবাসের ঘর এবং বসতি বিস্তারের ক্ষেত্রে অবারিত বৈচিত্র এদেশের জন্য অকল্যানের, অভিশাপের। কৃষি জমি বাঁচানোর জন্য গ্রামের ডিজাইন পাল্টানোর কথা বিশেষজ্ঞরা বলেন, তাদের সে পরামর্শ শিশু অধিকার, স্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা ইত্যাদি বিচারেও মেনে চলার বিকল্প নেই।

আমাদের শরীরচর্চাকে গ্রাম শহর সকল বসতির প্লানের মধ্যে আনতে হবে। কালচারের মধ্যে, বসতির আর্কিটেকচারের মধ্যে, আর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কারিকুলামের মধ্যে শরীর এবং তার চর্চাকে হাজির করতে হবে। শরীরহীন মন প্রশিক্ষনের শিক্ষা বিপদজন নিশ্চয়ই। শিল্প সাহিত্য আধ্যাত্ম কিংবা আরো আরো তত্ত্বজ্ঞানের শিক্ষায় ফুলানো ফাপানো মনটাকে বয়ে বেড়ানোর জন্য হৃষ্টপুষ্ট শরীর দরকার, তাই শরীরচর্চার জ্ঞান দরকার সবার আগে। আমাদের ঘনবসতি আর অফুরন্ত জনসংখ্যার কারনে শরীরচর্চার দরকার নেই – এমন আত্মঘাতী দাবি কিংবা পাঁচওয়াক্ত নামাজেই শরীরচর্চা বাস্তবায়ন হবে এমন পারলৌকিক স্বাস্থ্যজ্ঞানে বাঙালের শরীর বাঁচানোর সুযোগ নেই। একবার এক বন্ধুকে ঠাট্টা করে বলেছিলাম – বাঙালরা এগিয়ে যাবে সেদিন যেদিন তার মন্ত্রী আমলা পীর সাহেবরা সহ সব নেতারা ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নিবেন।

৩. 💰
আমরা বিজ্ঞাপনী বাজার দ্বারা আক্রান্ত হয়ে আর নিজেদের অক্ষমতা অজ্ঞানতায় বন্দী হয়ে আমাদের অর্থ ব্যবস্থাপনা করি। যেমন একটি অনুমান হচ্ছে- প্রাচীন মহাজনী আমল কিংবা বর্তমানের ক্ষুদ্র ঋন বা কনজুমার লোনের উৎসাহে আমাদের ঋনভিত্তিক চিন্তা সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে নিয়ন্ত্রণ করে। ক্ষুদ্র ঋনের আর ব্যাংক লোনের হিসাব এসব প্রাতিষ্ঠানিক হিসাব খুঁজলে পাওয়া যাবে। কিন্তু আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক ঋনগ্রস্থতার জরিপ করলে বুঝা যাবে এই দেশের জনগণের (বিশেষত বাঙালি মোসলমান অংশের) অর্থনৈতিক চিন্তা কিভাবে চলছে। আমরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় জীবিকার উপায় হিসেবে চাকরি ছাড়া আর কিছু ভাবি না। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করবো – এই হলো আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য। জীবিকা হিসেবে চাকরি ছাড়া আর কিছু যে আমরা ভাবতে পারিনা এর কারন যতটা উপনিবেশের ইতিহাসের মধ্যে, সমাধান ততটাই কিংবা তারও বেশি আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কারিকুলামে। সম্পদ কিভাবে খরচ করা উচিত তাই যদি না জানি তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আর কি মূল্যবোধ আমরা শিখতে পারি? দান খয়রাত করার শিক্ষা আমরা পরিবার, ধর্ম, এবং সমাজ থেকে পাই। কিন্তু ন্যূনতম আর্থিক ব্যবস্থাপনার জ্ঞান আমরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে পাই না। কিভাবে খরচ করতে হবে সেই জ্ঞানের দান-খয়রাত অংশ বাদ দিলে আমাদের আর কিছুই নেই। এই জ্ঞান না থাকা শিক্ষার ব্যর্থতা। জীবিকার জন্য উপার্জনের বিচিত্র উপায়ের পরিচিতি এবং খরচের ভাল উপায় – এই দুই আর্থিক ব্যবস্থাপনার জ্ঞান প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মধ্যে আনতে হবে।

জীবিকা যে ব্যক্তির অধিকার সেই শিক্ষা না দিলে সস্তায় বিক্রিযোগ্য কায়িক শ্রমের লেবার আর আংশিক অক্ষরজ্ঞানের কেরানির চাকুরে এবং দানখয়রাতে ইহজগতের সমাধান খুঁজতে থাকা মূল্যবোধের জাহান্নামে আমরা বসবাস করব আরো বহুদিন। যে শিক্ষা জীবিকার উপায় শিখায় না সে শিক্ষা মূল্যবান মানবজীবনের স্বপ্ন সময় সাধনার অপচয়। এমন অপচয় করার ভাগ্য কিংবা সামর্থ্য সবার নেই। কিংবা এমন অপচয় ঐচ্ছিক বিষয় – বাধ্যতামূলক হতে পারে না। (এমন অসম্পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করা সংবিধান অনুযায়ী বাধ্যতামূলক কিংবা ধর্ম অনুযায়ী ফরজ হতে পারে না।)

(প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় রাষ্ট্রের কলোনিয়াল এবং নিওকলোনিয়াল কিংবা কর্পোরেট মডেল থেকে বের হওয়ার জ্ঞান এদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তৈরি না হলে অতি উচ্চ শিক্ষা বাঙালের সাথে মিলবে না। বিদেশি এন্টেনা ধার করে জ্ঞানের সিগনাল ধরতে হবে। অথবা আরো বহুবছর স্বাস্থ্য শিক্ষা খাদ্য বিষয়ে নয়া উপনিবেশী ডাকাতদের প্রেসক্রিপশন মেনে চলতে হবে।)

শিক্ষার সাথে জীবনের সংযোগ হোক।
-

লালমাটিয়া/ ০২ মে ২০২০

Saturday, February 8, 2020

শোনেন ক‌বি আসাদুল্লাহ গা‌লিব

"এই দোযখ নিভানোর শক্তি নাই; থাকলেই তাতে কি?
দোজখ নিভাবো কোন আশায়?"
শোনেন কবি আসাদুল্লাহ গালিব,
যদিও দোজখ নিভলেই স্বর্গ হয় না,
কেননা পোড়ামাটি আবাদ করা বড়ো কঠিন
তবু যে নরকে আগুনের পাশাপ‌াশি মা‌টিতে মিশে আছে মজলুম মানুষের দেহ আর রক্ত আর স্বপ্ন
যেখানে শহিদী মানুষের হিসাব সমস্ত শোকগাঁথা মর্সিয়া এলেজির পংক্তির সংখ্যাকে পরিহাস করে
যেখানে রূপকথা কখনো মানুষকে পরাজিত করে না
যেখানে মানুষ জানে কল্পনার অতিদানবেরও পরাজয় লুকানো থাকে জিরজিরে মানুষের নাগালে থাকা কালো ভ্রমরের পাখায়
সেখানে মাটি প্রত্যহ উৎপাদন করে সুখের নতুন বাসনা, সম্ভাব্য সুখের বিজয়ী লড়াই
আপনি জানেন নিশ্চয়ই,
মানুষের সুখের আশা সিংহাসন পাল্টাতে পারে,
সে আশা অনায়াসে ছুড়ে ফেলে সিংহাসনের মানুষ
এবং মানুষের আশা চিরদিন দোযখ অতিক্রম করে

-
ফেব্রুয়ারি ২০২০

সোনালী আঁশের দেশে যখন 'উন্নয়ন' হবে

সোনালী আঁশের দেশে যখন 'উন্নয়ন' হবে
‌তখন কন্যারা সেলাই করবে বিদে‌শি কাপড় বিদে‌শি মে‌শি‌ন বিদে‌শি সুতায় খাঁ‌টি দেশীয় আরএম‌জি পণ্য
‌পিতা ও পুত্রের‌া উত্তোলন করবে কয়লা উৎপাদন করবে বিদ্যুৎ আর ধান চাষ করে দাম পাবে খড়ের
‌যেহেতু পাট এক‌টি মহাভারতীয় ঐ‌তিহ্য এবং মহাভারতকে ইংরে‌জিতে বলা হয় ইউ‌নিয়ন অব ...
‌যেহেতু পপুলেশন মোমেন্টাম শ্রম উৎপাদনকারী মানুষের নিশ্চয়তার নাম
‌যেহেতু মানুষের রক্ত সরাস‌রি না খেয়ে ভ‌বিষ্যৎ খেয়ে ফেলার নাম মানব সম্পদ
এবং যেহেতু মা কখনো সন্তানের খারাপ চায় না তাই সন্তান তার নিজের ভাল চাইতে পারবে না
‌যেহেতু মনে হইতে পারে বাবাদের আব্বা থাকে না
‌যেহেতু লিডার ঈশ্বরের প্র‌তি‌নি‌ধি এবং সকলের ভাল করার চিন্তায় নির্ঘুম জেগে থ‌াকেন
‌যেহেতু ক্ষমতা তন্দ্রা ও ঝিমু‌নি দূর করে এবং তা বলবর্ধক
যেহেতু মানুষ মিথ্যা এবং সত্য দু‌টিকেই বি‌ভিন্ন সময়ে পছন্দ ও অপছন্দ করে
‌যেহেতু ম্যাডনেসের মধ্যে না খেয়ে মরে যাওয়ার ল‌জিক কাজ করে না
এবং যেহেতু প‌রিবর্তন সম্ভব কারন সম্ভবের নামই প‌রিবর্তন কিংবা পৃ‌থিবী‌ অ‌নিত্য এবং গ‌তিই মূখ্য...
_
December 2019

সমূদ্রের নেতা

আমাদের এমন কোন নেতা ছিল না যি‌নি সমুদ্র চিনতেন।

এমন কোন নেতা ছিল না যি‌নি নদী আর পাহাড় উভয়কে চিনতেন।

‌কেউ কেউ চিনেন নদী ও জলপথ (আমাদের সদাগরী সপ্ত ডিঙা যে সাগরে ভেসে‌ছিল তার নাম হ্রদ)
‌কেউ কেউ চিনেন ইস্পাতের সরল রেখা তার ওপর রেলগা‌ড়ি
‌কেউ কেউ চিনেন পাহাড় আর তার নদীর গলায় বাঁধ
‌কেউ কেউ বনের ভেতর নো‌নানদী চিনেন বাঘের বা‌ড়ি পর্যন্ত


আমাদের কেউ কেউ চিনেন ফসলী মাঠ আর বিস্তৃত সমতল
তবু এই বি‌চিত্র ভূখণ্ডে এমন কোন নেতা ছিলেন না যি‌নি চিনতেন সমুদ্র
এমন কেউ ছিলেন না যি‌নি নদী ও সমূদ্রে জেলের সাথে ধরতেন মাছ, মা‌ঝির সাথে বাইতেন নাও, কৃষকের সাথে বুনতেন ফসল, পাহাড়ের দয়া নিতেন জুম চাষে, বনের দয়া নিতেন জী‌বিকার জন্য - অতপর বি‌চিত্র মানুষকে শোনাতেন বেঁচে থাকার গান
‌বন্যা ও ঝড়ের মত ক্রদ্ধ সংকীর্ণতা নিয়ে যারা এসেছেন তারা দা‌বি করেছেন সাম‌গ্রিক নেতৃত্ব ... অথচ তারা সমুদ্র চিনতেন না


২৫/১২/২০১৯

Saturday, February 1, 2020

সেলাই

একবার এক সোনামুখী সুঁই মহাকালকে প্রস্তাব দিল:
চলো হ‌রিয়ে যাই...


মহাকাল সুতার মতন অনুসরণ করল সুঁইকে,
তারপর ‌সেলাই হলো সূর্যময় আলো আর সূর্যহীন অন্ধকার,
পৃ‌থিবীর বি‌ভিন্ন মহাদেশে...
‌সেলাই হলো ঢোলা ঢোলা সমুদ্রের নোনাজল আর পর্বত গড়ানো বা‌লি,
গাছের পাতা আর আকাশের নীল শূন্যতা,

যেভাবে ‌সেলাই হ‌য় মানুষের ভাষা ও মগজের কোষ


-
২৯ জানুয়ারি ২০২০

Sunday, January 12, 2020

কুল, বাংলাদেশ


বাংলাদেশ কুল থাকো, ইস্পাতের মতন
পড়শীর পাগলামি, ভেতরের গোঙানি
ছটফটানি
একদিন
শেষ
হবে


১৫ ডিসেম্বর ২০১৯



মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম পরষ্পরকে বিরোধী হিসেবে বয়ানের অন্তত দুইটা ধারা আছে। এই দুই ধারা একে অপরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। একদল মুক্তিযুদ্ধের দখল চায়...