Monday, April 18, 2022

বিসিএস ক্রেইজ এর কারন

বাংলাদেশে পাবলিক সার্ভিসের জন্য লোকেরা কেন খুব আগ্রহী হয় এর একাধিক ব্যাখ্যা হতে পারে। যেমন -

১. ঐতিহাসিকভাবেই শিক্ষা অর্জনের পর সরকারি চাকরি করার এক অলিখিত নিয়ম (নর্ম) তৈরি হয়েছে। উপনিবেশ আমল বা তারও আগ থেকে শিক্ষিত হওয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় চাকরি পাওয়ার ধারা চলে এসছে। যদিও তাত্ত্বিকভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজই হচ্ছে সেই কর্মীশ্রেণী তৈরি করা। শিক্ষার শুরু রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য শেখানোর মাধ্যমে। আর তার পরিপক্বতা রাষ্ট্রের কর্মী হওয়ায়। উপনিবেশ শাসনের সাফল্যের সাথে সাথে এই নর্ম পাকাপোক্ত হয়েছে। তাছাড়া আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরিই হয়েছে রাষ্ট্রের জন্য আনুগত্য তৈরি এবং রাষ্ট্রের কর্মী উৎপাদনের জন্য। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরির উদ্দেশ্যের সাথে পাবলিক সার্ভিসের জন্য আগ্রহী হওয়ার সামঞ্জস্য বরং সেসব প্রতিষ্টান তৈরির সাফল্যের নমুনা।


তাছাড়া বাংলা মুলুকে পুঁজিবাদের বিকাশ এখনো অসমাপ্ত। পুঁজিবাদের অসমাপ্ত বিপ্লব সমাপ্ত করার নামে অনেকেই তা লুটপাটের মাধ্যমে বেহাত করে দিচ্চে। উপনিবেশ কাল থেকে বাংলা যেই সস্তাশ্রম এবং কাঁচামালের উৎস ছিল/হয়েছে সেসবের জন্য শিক্ষার প্রয়োজন ছিল না। উপনিবেশকালে শিক্ষা বরং সেসবের জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল। সম্ভবত উপনিবেশি রাষ্ট্র এবং বাজার শিক্ষার সাথে সমান্তরাল সম্পর্কের মধ্যে ছিল না। এসব প্রশ্ন আলাদা করে বলা যায়, সরকারি চাকরির প্রতি যে ক্রেইজ তা নতুন কোন ব্যাপার নয়। বরং বহুকাল আগে থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরির সাথে সরকারি চাকরির সম্পর্ক রয়েছে।


২. সরকারি চাকরির জনপ্রিয়তায় ভাটার সময় তুলনামূলক কম। একইভাবে এখনকার মত বিসিএস ক্রেইজ বা উত্তাল জোয়ারও সবসময় ছিল বলা যাবে না। যেহেতু রাজনৈতিকভাবে বর্তমান শাসনআমল অনেক বেশি আমলানির্ভর - কাজেই পাবলিক সার্ভিসের সুযোগ সুবিধা কিছুটা ইমপ্রুভ করেছে। আর জনগণের ভোটের চেয়ে আমলাতন্ত্রের উপর নির্ভরশীলতা পাবলিক সার্ভিসের লোকদের ক্ষমতার পরিমান বাড়িয়েছে (এট লিস্ট ইন পারসেপশান)। এছাড়া বর্তমান শাসন যেহেতু মিলিটারি শাসন নয়, তাই মিলিটারি শাসনের সময়কার চেয়ে পাবলিক সার্ভিসের এই ক্ষমতার পরিমান বেশি। সবমিলিয়ে অগণতান্ত্রিক শাসনের সাথে বিসিএস বা পাবলিক সার্ভিস ক্রেইজ গভীরভাবে সম্পর্কিত বলা যায়। বাংলাদেশে বেসরকারি চাকরি বাজারের দাপট কমে যাওয়া রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যের জন্য হয়তো ভাল নয়, তবে তা বিসিএস ক্রেইজ তৈরির আরেকদিক; সম্ভবত কারনও। প্রাইভেট সেক্টরকে কতটা পলিটিসাইজ করা হয়েছে, কতটা করলে তার বাঁচার সুযোগ আছে এবং তা ইকনোমিকে সচল রাখতে পারবে - সেসব যারা বুঝেন তারা হয়তো ভাল ব্যাখ্যা করতে পারবেন। এককথায় বললে - বাংলাদেশে অগণতান্ত্রিক শাসন বিসিএস ক্রেইজ তৈরি করেছে।


৩. ব্যক্তির জায়গা থেকে হিসাব করলে বিষয়টা হচ্ছে - পড়ালেখা কেন করে লোকেরা? এতো আয়োজন খরচ সাধনা - এসবের উদ্দেশ্য কি? ভাল জীবন যাপন করা। আধুনিক শিক্ষায় মানুষ হওয়া, সুনাগরিক হওয়া - এসব বায়বীয় উদ্দেশ্যের পাশাপাশি কঠিন কিংবা তরল উদ্দেশ্য হচ্ছে উপার্জনের জন্য সক্ষম হওয়া। শারীরিক শ্রমের চেয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রমে উপার্জনের সুযোগ যেহেতু বেশি তাই বিদ্যার্জন দরকারি। এছাড়া ব্যবসাপাতি করার জন্য যে ধরনের ট্রেনিং বা আগ্রহ দরকার হয় তা যাদের থাকে তারা সেগুলো শুরু করে দেয় তাদের সময়মতো।


(আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষার সাথে পরকাল জোড়া দেয়া হয়, আর ক্বওমীতে ইহকালকে একটু বেশি পরিমাণে মার্জিনে রাখা হয়। ধর্মীয় শিক্ষার ভেতর আবার দারিদ্র্যকে মহত করা হয় তুলনামূলক বেশি। সম্পদকে প্রধানত নিন্দা করা হয়।)


যাহোক, যে ভাল জীবন মানের জন্য শিক্ষা অর্জন করে লোকেরা সেজন্য দেশের যে সম্পদ তা যথেষ্ট না। বহু পুরানো কথা। মানুষের যা অভাব তা অসীম, আর সম্পদ সীমিত। বাংলার বেলায় একথা আরো বেশি প্রযোজ্য। বাংলা একটি দরিদ্র দেশ। এ ছাড়া বাংলা আসলে মাটি আর পানির দেশ। সোনার বাংলা শুনতে যত আনন্দ লাগুক, বাংলাদেশে কোন সোনার খনি নেই। দেশীয় উৎপাদনসহ সম্পদ যা আছে তাতে কাড়াকাড়ি প্রচণ্ড। প্রতিযোগিতা না বরং কাড়াকাড়ি। কাজেই ক্ষমতার বদলাবদলির সাথে এখানে লুটপাটের সম্পর্ক খুব স্বাভাবিক। কে সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নিবে এটাই এখানকার রাজনৈতিক দলগুলোর একটা প্রধান লক্ষ্য।


পড়ালেখা করে লোকেরা সম্পদের ভাগ তথাকথিত মেরিটের ভিত্তিতে পাওয়ার জন্য। এই নীতিকে লোকেরা বলে মেরিটোক্রেসি বা মেধা তন্ত্র। আর রাজনীতিও লোকেরা করে সম্পদের ভাগ পাওয়ার জন্য। সেই ভাগ পাওয়ার ব্যাপারটা নিয়মকানুন দিয়ে হয় না; তাই তার আলাদা নাম লুটপাট। মধ্যবিত্ত বাঙালি শিক্ষার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ভাগাভাগির একটা অংশ চায় এবং সেটাকেই সবচেয়ে ন্যায্য মনে করে তাই তার কোটাবিরোধী আন্দোলনের দরকার হয়। একটা নিয়ম তো থাকা দরকার।


মূলকথা হচ্ছে বাংলাদেশে পাবলিক সার্ভিস রাষ্ট্রের সম্পদ বণ্টনের একটা গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। বাকিসব মহত্ত্ব পাবলিক প্রাইভেট এমনকি প্রায় সকল পেশায় কমবেশি পাওয়া যাবে। দরিদ্র মাস্টাররা অবশ্য সম্পদ কম পায় বলে মর্যাদার ভাগ একটু বেশি পায়। এছাড়া ক্লিনারের কাজও যেকোন পেশার মত সমানভাবে মহত। কাজেই পড়ালেখা শেষ করে আপনি একটা ভাল চাকরি চাইবেন এবং চাইবেন লোকেরা আপনাকে বিশেষভাবে মহত মনে করুক - প্রথমটা ঠিক আছে দাদা, পরের বিষয়ে বলতে হয় আসলে পেশার কারনে আপনি যতটা মহত ভাবেন নিজেকে অন্য পেশা ইত্যাদির লোকেরাও তাই।
তৃতীয় ব্যাখ্যার সামারি হচ্ছে যেহেতু রাষ্ট্রীয় সম্পদ বণ্টনের উপায়ের মধ্যে বিসিএস প্রায় এক নাম্বারে আছে - তাই মানুষের আগ্রহও তাতে বেশি।
(এই লেখায় কেউ দুঃখ পেয়ে থাকলে আমি আপনার সাথে সমব্যথী; এটি কোন একক ব্যক্তির পর্যালোচনা নয়, বরং সমাজ সম্পর্কে অনুমান/পর্যবেক্ষণ।)


এপ্রিল ৪, ২০২২

Wednesday, April 13, 2022

বাংলাদেশে বিজ্ঞান শিক্ষা


বাংলাদেশে বিজ্ঞানপ্রেমীদের কলা কিংবা মানববিদ্যায় পড়াশোনা নিয়ে একটা জোরালো মশকরা করা যাচ্ছে। স্যাটায়ার বা ঠাট্টা-বিদ্রুপ সমাজের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। তবে ঠাট্টা একতরফা জমে না। সেটা বুলিং হয়ে যেতে পারে।

যেহেতু কলা আর মানববিদ্যা পড়ুয়া বিজ্ঞানপ্রেমীরা বাঙ্গালি মোসলমানের অনেক আলগা গিট্টু দেখিয়ে দিয়েছে এতদিন, তাই এখন বিজ্ঞানপ্রেমীদের আর্টস ব্যাকগ্রাউন্ডে একটু চিল করা থামছে না।

একজন বিজ্ঞানপ্রেমী হিসেবে আমি জিজ্ঞেস করবো না তৌহিদি জনতা ইসলামিক স্টাডিজ বা থিওলজি কোন ভার্সিটিতে পড়েছে। সে প্রশ্ন বাঙালের সিক্রেট লজিকবুক অনুযায়ী মচৎকার সব অনুসিদ্ধান্ত হাজির করতে পারে।

আমি বরং নিজের দুঃখের কথা বলি। আমি যে মাদরাসায় ম্যাট্রিক পর্যন্ত পড়েছি সে মাদরাসায় বিজ্ঞান বিভাগ ছিল না। ক্লাস এইট পর্যন্ত আমাদের সাধারণ বিজ্ঞান পাঠ্য ছিল। নাইনে ওঠার পর সমাজ বিজ্ঞান বইয়ে বিজ্ঞান শব্দটা ছিল; তবে আমাদেরকে যেসব শিক্ষক পড়িয়েছেন তারা বইয়ের লেখা পড়ানোর জন্য পড়াতেন, আর তাকে নাকচ করে দিতেন ধর্মীয় রীতি ও বিশ্বাসের দোহাই মেনে।

আমার আগ্রহ ছিল বিজ্ঞানে পড়ার। কিন্তু মাদরাসায় তা ছিল না বলে পড়ার সুযোগ হয়নি। এছাড়া বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার জন্য মাদরাসা চেইঞ্জ করে স্কুলে পড়াও আমার জন্য পারিবারিক, আর্থিক, এবং ধর্মীয় কারনে অসম্ভব ছিল।

আমি ছাত্র হিসেবে ততটা খারাপ ছিলাম না যে বিজ্ঞান বিভাগে পড়লে পাশ করতে পারতাম না। তবুও আমার মত বহু স্টুডেন্ট বিজ্ঞান পড়ার সুযোগ পায় না। এর কারন কি?

বাংলাদেশে খুবই অল্প সংখ্যক মাদরাসায় ইন্টার পর্যন্ত বিজ্ঞান বিভাগ রয়েছে। আর গ্রামের স্কুলগুলোকে বিজ্ঞানের শিক্ষক পাওয়া অথবা ভাল শিক্ষক পাওয়া এখনো কঠিন। স্কুল গুলোতে প্রাকটিক্যাল করার জন্য পর্যাপ্ত ল্যাব কি আছে? এছাড়া বিজ্ঞান বিভাগে পড়া তুলনামূলক ব্যয়বহুল যা মেটানোর সামর্থ সকলের থাকে না। আর সেই খরচ কমিয়ে আনার সামাজিক চেষ্টাও নেই। সামাজিক উদ্যোগগুলো অনেকক্ষেত্রেই যতটা পরকালমুখী ততটা ইহকালের কল্যানের দিকে অমনযোগী। (যদিও বাঙালি মোসলমান দোয়া পুরোটাই করে – রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও অফিল আখিরাতি হাসানাহ।) অনেক বাবা মা ই তো বোঝেন না তাদের সন্তানরা কি পড়ছে, কোন বিষয় পড়লে ভাল হবে। আবার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরাই ঠিক করেন কারা কোন বিভাগে ভর্তি হবে।

এসব ছাড়াও আমাদের দেশের বিজ্ঞান পড়া লোকেরা যতটা অন্য দেশে চলে যান – কলা ও মানববিদ্যার লোকেরা ততটা যান না। কারন বিজ্ঞান পড়ুয়াদের দক্ষতা পৃথিবীর যে কোন প্রান্তেই কাজে লাগছে। তাই তার সুযোগ তাকে অন্য দেশে নিয়ে যায়। মানববিদ্যার লোকেদের বিজ্ঞান প্রীতি নিয়ে সমালোচনা করা হয় অথচ অভিজিতের মত বিজ্ঞান জানা বিজ্ঞান লেখক যখন লিখে তখন সমাজ তাকে কুপিয়ে মারে। কলা আর মানববিদ্যার লোকেরা বিজ্ঞান নিয়ে কথা বললে তার এক্সপার্টাইজ নিয়ে প্রশ্ন তোলা সহজ, তাই সেই প্রশ্ন তুলছেন লোকেরা। একইভাবে বিজ্ঞান ব্যাকগ্রাউন্ডের লোকেরা যদি অনেকের ফিলিং ট্রুথ-কে সন্তষ্ট করতে না পারে অথবা অস্বস্তিতে ফেলে তখন তাকেও নাকচ করার জন্য অন্য অজুহাত খুঁজতে হবে। যেহেতু নাকচ করাই মূল উদ্দেশ্য তাই যেকোন অজুহাতে নাকচ করতে হবে।

অবশ্য সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে যে অ্যাডভান্সমেন্ট হয়েছে তা থেকেও বাঙাল বঞ্চিত। এত সরল সমাজ সবকিছুকে ঠাট্টা করে উড়ায়ে দিতে চায়। খারাপ না। খোদা বাঙালকে ইহকালীন আর পরকালীন কল্যান দেয়ার বদলে ইহকালেও মজা দিবে পরকালেও মজা দিবে। প্রার্থনা করি হে খোদা, তুমি বাঙালকে মজা দিচ্ছ দাও, সাথে বিজ্ঞানও দিও।

এপ্রিল ১২, ২০২২

Tuesday, April 12, 2022

ধর্মকে বিজ্ঞান দিয়ে প্রমান বা অপ্রমান করার দরকার নেই

 ধর্মকে বিজ্ঞান দিয়ে প্রমান বা অপ্রমান করা অহেতুক জটিলতা তৈরি করে।

যেমন চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী রোজা রাখার উপকারিতা বর্ণনা করা। একজন চিকিৎসক কাউকে যদি রোজা রাখতে বলেন তবে তার বর্তমান স্বাস্থ্যের অবস্থা বিচার করে সেই পরামর্শ দিবেন। তারপর তা হতে পারে বিভিন্ন মেয়াদে। রমজানের এক মাস মিলিয়েই কারো সেই প্রেসক্রিপশনের রোজা রাখতে হবে তেমন সম্ভাবনা কম। প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী রোজা তখন ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হয়ে যাবে। এখানেই জটিলতা। তাছাড়া রোজা রাখার ধর্মীয় নিয়ম সূর্যোদয় সূর্যাস্তের সাথে সম্পৃক্ত। স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ডাক্তারি নিয়মের রোজা ঘন্টা মেপে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি; দিনের বড় ছোটর বিষয় নয়। কাজেই এসব ধর্মীয় চর্চাকে বিজ্ঞান দিয়ে ভ্যালিডেশন করা ফ্যান্সি এবং অ্যাট্রাক্টিব হলেও বিপদজনক।
একজন বিজ্ঞানী তার চর্চা এবং আবিষ্কারের ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে অনুপ্রাণিত হতে পারেন। তিনি ধর্মীয় প্রয়োজন বা বিশ্বাস দ্বারাও অনুপ্রাণিত হতে পারেন। কিন্তু তাতে বিজ্ঞান ধর্ম হয়ে যায় না, কিংবা ধর্ম বিজ্ঞান হয়ে যায় না। যদিও একজন বিজ্ঞানীর ব্যক্তিগত বিশ্বাস আর তার বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সমান বিষয় নয়। একজন বিজ্ঞানীও অবৈজ্ঞানিক বিশ্বাস পোষণ করতে পারেন। তাতে তার বিশ্বাস বিজ্ঞানের প্রমাণ হয়ে যায় না। তাকে মেথড মেনেই প্রমাণ করতে হয়ে। বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ভুল প্রমাণিত হলে তার কষ্ট হতে পারে। সত্য মেনে নেয়া বিজ্ঞানীর জন্যও কঠিন হতে পারে।
প্রসঙ্গত ধর্মের বিশ্বাসকে কেউ যদি বিজ্ঞানীর কল্পনার সাথে তুলনা করেন - হোক তা আইনস্টাইনের বরাতে - তবে সন্দেহ থাকে একজন নিষ্ঠাবান ধার্মিক তাতে একমত হবেন কিনা। ধর্মকে ইমাজিনেশন হিসেবে দেখা বরং একটি বিজ্ঞানবাদী দৃষ্টিভঙ্গি।
-
আমার এসব লেখার কথা না সম্ভবত। গতবছর একটা পেপার লিখেছিলাম থিওরি কোর্সে। কার্ল পপার আর টমাস কুন - এই দুইজনের লেখা পড়ে। লেখার শিরোনাম - Science constructs truth. (এর আগে ঢাকায় চিন্তার ইতিহাস পাঠচক্রে অধ্যাপক লিয়াকত আলি কার্ল পপারের ওপর যে ক্লাস নিয়েছিলেন তাতে অংশ নিয়েছিলাম।) পপারের বইয়ের নাম - Conjectures and Refutations, প্রথম প্রকাশ ১৯৬৩।
-
প্রবন্ধ লিখতে গিয়ে বুঝতে পারি টমাস কুনকে লোকেরা অপব্যবহার করে। তার ডিসকোর্স বিজ্ঞান কিভাবে চর্চা হয় অথবা বিজ্ঞানের প্যারাডাইম কিভাবে গড়ে ওঠে এবং ভাঙ্গে তা বুঝার জন্য খুব কাজের। (তার বইয়ের নাম - The Structure of Scientific Revolutions, প্রথম প্রকাশ ১৯৬২।) বিজ্ঞানের প্যারাডাইম ভাঙা গড়া আর যে কোন অনুমানকে বিজ্ঞান ধরে নেয়া এক নয়। লজিকের প্রাথমিক যে সুত্র সিলজিজম সেই ছকেই একে ধরা যায়। যেমন - মানুষ মরণশীল, এর মানে মরণশীল সবপ্রাণীই মানুষ নয়। বিজ্ঞানে অনুমান বা এজাম্পশন আছে, তার ভাঙাগড়া আছে - তার মানে অনুমান আর ভাঙা গড়া থাকলেই তা বিজ্ঞান হয় না।
-
(বিজ্ঞাপণ - ইংরেজি ভাল পারেন, আর ফিলসফিতে আগ্রহী হলে আমার প্রবন্ধটা পড়ে ফিডব্যাক দিতে পারেন। আমাকে ইনবক্স করতে পারেন। পরবর্তীতে এই লেখা বাংলায় লেখার ইচ্ছা আছে।)
-
এই খিচুড়ি টাইপের পোস্ট আপনাকে বিরক্ত করে থাকলে দুঃখিত।

Friday, April 8, 2022

টিএসসিতে মেয়েদের নামাজের জায়গা

 সুপ্রিম কোর্টের এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের মুখে গল্প শুনেছিলাম। ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হলে এক লোক রাতারাতি নিজের জায়গায় মসজিদ স্থাপন করেন। যাতে রাস্তার কারনে জমি অধিগ্রহণ করা না হয়। মসজিদকে সম্পত্তি রক্ষার জন্য ব্যবহার করার এই কৌশল সফল হয়েছিল। সড়ক ঘেঁষে সেই মসজিদ এখনো আছে। (ঢাকার সেই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি সেই মসজিদের কারনে মাঝখানে চাপানো এবং ঝুঁকিপূর্ণ মোড়সহ এখনো বাঙালির মহিমা ঘোষণা করছে।) বাঙালি মুসলমান ধর্মকে ব্যবহার করার এমন কূটকৌশল সহজে ভুলবে না।

টিএসসির অডিটোরিয়ামের পাশে চট বিছিয়ে একসময় নামাজ পড়া শুরু করেন টিএসসিতে আসা শিক্ষার্থীরা। কারা এই নামাজের জায়গার প্রথম আবিষ্কারক তা জানিনা। ২০০৮ - ২০১৩ সালের অভিজ্ঞতা আমার। দুয়েকবার ইফতার করতে গিয়ে সেখানে নামাজ পড়েছি। সেসময় টিএসসির টয়লেট ব্যবহার অযোগ্য ছিল। আর টয়লেটের সাথে যে বেসিন সেগুলো অজুর জন্য ডিজাইন করা নয়। বাগানে একটা ট্যাপ বসানো ছিল সেখানে অজু করতে হতো। (মেয়েদের জন্য অজুর জায়গা টিএসসিতে সম্ভবত নেই। ছেলেরা যেভাবে খোলা ট্যাপে বাইরে অজু করেন, মেয়েদের জন্য সেটি সহায়ক ব্যবস্থা নয়।)
টিএসসিতে নারী শিক্ষার্থীরাও নামাজের জায়গা চেয়েছেন। ডেইলি স্টারের খবর অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের যুক্তি হচ্ছে - ১. কেন্দ্রীয় মসজিদে নারী শিক্ষার্থীদের নামাজের জায়গা প্রয়োজনের চেয়ে কম, ২. বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের কমনরুমগুলো - মেয়েরা সাধারণত সেখানে নামাজ পড়েন - বিকেল ৫টায় বন্ধ হয়ে যায়, ৩. টিএসসিতে ছেলেদের জন্য নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকলেও মেয়েদের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই।
এসবের সমাধান হিসেবে টিএসসিতে মেয়েদের নামাজের জায়গা চাইছেন শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রচণ্ড ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। স্পেস ম্যানেজমেন্ট করতে হলে এখানে পলিসি ঠিক করা জটিল। এর সাথে যদি ধর্মীয় আচার-আচরণকে কালচারাল পলিটিক্যাল উপায় হিসেবে ব্যবহার করা হয় তাহলে তা আরো জটিল হয়ে যাবে।
শিক্ষার্থীদের ইফতার (পার্টি) করার জন্য জায়গার অভাব। তারা টিএসসির মত খোলা জায়গায় ইফতার পার্টি আয়োজন করে। মসজিদের তুলনায় জায়গা হিসেবে তুলনামূলক সেক্যুলার স্পেস হওয়ায় সেখানে সবাই অংশ নেয়। ইফতারকে পার্টি বানানোর সাথে সাথে নামাজের জায়গার এই চাহিদা তৈরি হয়েছে। আরো কারন থাকতে পারে।
টিএসসিতে ছেলেদের নামাজের জায়গার বিশেষ কোন রুম নেই। তারা মূলত টিএসসি অডিটোরিয়ামের বারান্দায় নামাজ পড়ে। মাগরিবের সময় যেহেতু অল্প থাকে তাই ভরপেট ইফতার করে সময় থাকতে নামাজ আদায় করা কঠিন হয়। তখন তাড়াহুড়া করতে এই বারান্দার নামাজের জায়গা দরকার হয় ইফতার করতে আসে নামাজীদের। ইবাদতে ধীরস্থিরতা আর নিষ্ঠার সাথে এই চর্চা মিলে না।
ছেলেদের নামাজের জায়গা আনুষ্ঠানিকভাবে তৈরি করা হয়নি, নির্দিষ্ট কোন রুমও বরাদ্দ হয়নি, অস্থায়ীভাবে নামাজের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে টিএসসির অডিটোরিয়ামের বারান্দা। মেয়েদের এই স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে ফরমালি নামাজের জায়গা চাওয়া হয়েছে। বিষয়টি অস্থায়ীভাবে সমাধান করার মত নয়। (ফরমালিটির গুরুত্ব এখনো আছে। কাগজে কালিতে আইনি স্বীকৃতির অবস্থা তৈরি হয়।) উপাচার্য মৌখিকভাবে অনুমতি দিয়েছেন বলে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে বিষয়টা তেমন সাময়িক ব্যাপার নয়। এ বিষয় বরং আরো চিন্তাভাবনা করে সমাধান করা উচিত। শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি জানিয়েছেন তাদের দাবিকে যাচাই বাছাই করে সমাধান দিতে হবে। একইসাথে সমাধান বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক অবকাঠামোগত পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।
শিক্ষার্থীদের দেয়া স্মারকলিপি থেকে অনুমেয় (রমজানের সময় আর মাগরিবের নামাজের প্রসঙ্গ হিসাব করে এই অনুমান) - তাদের প্রধানত রমজানে মাগরিবের নামাজের জায়গা দরকার। নামাজের জন্য খুব ভাল ব্যবস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় মসজিদ থাকলেও কেন্দ্রীয় মসজিদে নারীদের নামাজের জায়গা পর্যাপ্ত নয় - এটা তাদের দাবি। তাদের এই দাবি সমাধান করার জন্য টিএসসিতে নামাজের জায়গা বরাদ্দ করা আসলে ব্যবস্থাপনার জায়গা থেকে ভাল সমাধান নয়। বরং কেন্দ্রীয় মসজিদকে বহুতল করা যেতে পারে। সেখানে মেয়েদের নামাজের জায়গা বাড়ানো যেতে পারে। একই সাথে টিএসসিতে ছেলেদের নামাজের জায়গা বলে যা পরিচিত তারা তাকে আনুষ্ঠানিক না করে বরং মসজিদে নামাজ পড়ার চর্চা বাড়াতে পারেন।
কেউ রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে যদি এসব দাবি করে থাকেন কিংবা ধর্মীয় বিষয় নিয়ে সেনসেশন তৈরি করতে চান তবে তা আসলে ধর্মের জন্য উপকারী হবে না। এটি বরং আনস্মার্ট কৌশল হবে। কারন টিএসসির অডিটোরিয়ামে কনসার্ট চলবে আর আপনি তার পাশেই খুব একাগ্রতার সাথে ইবাদত করবেন তা আসলে আপনার ইবাদতের জন্য ভাল নয়।
যারা তথাকথিত উন্নত দেশের উদাহরণ জানেন তারা এটুকু জানেন সেসব দেশে স্টুডেন্ট সেন্টারে প্রেয়ার রুমে লোকেরা নাচগান করতে আসবে না, আবার অডিটোরিয়ামের বারান্দাকে কেউ নামাজের জায়গা হিসেবে দখল করবে না। আপনি অতিবেশি পলিটিক্যাল হলে সেসব নাও বুঝতে পারেন; বিশেষত, যদি স্বাধীনতাকে (লিবার্টি) শুধু নিজের মতের সাফাইয়ের জন্য যদি ব্যবহার করেন।
বাঙালের আর্টকালচার এমনিতেই দুরবস্থার মধ্যে রয়েছে। তাতে টিএসসির মত জায়গায় ধুঁকতে ধুঁকতে চলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ট-কালচার চর্চা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্ট-কালচারে মরে গেল তাকে রাজনৈতিকভাবে মৃতপ্রায় অবস্থা থেকে উদ্ধার আরো অসম্ভব হবে। নামাজের জায়গা থেকে কোন সৃজনশীলতা তৈরি হবে এমনটা কেউ ভুলেও ভাবে না। টিএসসি-কিছুই তৈরি করেনি এমনটা যারা ভাবেন, তারা নিজেরা শুরু করতে পারেন।
আপনার নামাজ মসজিদ থেকে টিএসসি অডিটোরিয়ামের বারান্দায় কিভাবে গেল সে বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করলে আপনি হয়তো ভাল সমাধান পাবেন। সেসব না ভেবে সমগ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে মসজিদ ঘোষণা দিলেও মোসলমানের কোন উন্নতি তাতে হবে না।

এপ্রিল ৮, ২০২২

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম পরষ্পরকে বিরোধী হিসেবে বয়ানের অন্তত দুইটা ধারা আছে। এই দুই ধারা একে অপরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। একদল মুক্তিযুদ্ধের দখল চায়...