Wednesday, April 13, 2022

বাংলাদেশে বিজ্ঞান শিক্ষা


বাংলাদেশে বিজ্ঞানপ্রেমীদের কলা কিংবা মানববিদ্যায় পড়াশোনা নিয়ে একটা জোরালো মশকরা করা যাচ্ছে। স্যাটায়ার বা ঠাট্টা-বিদ্রুপ সমাজের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। তবে ঠাট্টা একতরফা জমে না। সেটা বুলিং হয়ে যেতে পারে।

যেহেতু কলা আর মানববিদ্যা পড়ুয়া বিজ্ঞানপ্রেমীরা বাঙ্গালি মোসলমানের অনেক আলগা গিট্টু দেখিয়ে দিয়েছে এতদিন, তাই এখন বিজ্ঞানপ্রেমীদের আর্টস ব্যাকগ্রাউন্ডে একটু চিল করা থামছে না।

একজন বিজ্ঞানপ্রেমী হিসেবে আমি জিজ্ঞেস করবো না তৌহিদি জনতা ইসলামিক স্টাডিজ বা থিওলজি কোন ভার্সিটিতে পড়েছে। সে প্রশ্ন বাঙালের সিক্রেট লজিকবুক অনুযায়ী মচৎকার সব অনুসিদ্ধান্ত হাজির করতে পারে।

আমি বরং নিজের দুঃখের কথা বলি। আমি যে মাদরাসায় ম্যাট্রিক পর্যন্ত পড়েছি সে মাদরাসায় বিজ্ঞান বিভাগ ছিল না। ক্লাস এইট পর্যন্ত আমাদের সাধারণ বিজ্ঞান পাঠ্য ছিল। নাইনে ওঠার পর সমাজ বিজ্ঞান বইয়ে বিজ্ঞান শব্দটা ছিল; তবে আমাদেরকে যেসব শিক্ষক পড়িয়েছেন তারা বইয়ের লেখা পড়ানোর জন্য পড়াতেন, আর তাকে নাকচ করে দিতেন ধর্মীয় রীতি ও বিশ্বাসের দোহাই মেনে।

আমার আগ্রহ ছিল বিজ্ঞানে পড়ার। কিন্তু মাদরাসায় তা ছিল না বলে পড়ার সুযোগ হয়নি। এছাড়া বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার জন্য মাদরাসা চেইঞ্জ করে স্কুলে পড়াও আমার জন্য পারিবারিক, আর্থিক, এবং ধর্মীয় কারনে অসম্ভব ছিল।

আমি ছাত্র হিসেবে ততটা খারাপ ছিলাম না যে বিজ্ঞান বিভাগে পড়লে পাশ করতে পারতাম না। তবুও আমার মত বহু স্টুডেন্ট বিজ্ঞান পড়ার সুযোগ পায় না। এর কারন কি?

বাংলাদেশে খুবই অল্প সংখ্যক মাদরাসায় ইন্টার পর্যন্ত বিজ্ঞান বিভাগ রয়েছে। আর গ্রামের স্কুলগুলোকে বিজ্ঞানের শিক্ষক পাওয়া অথবা ভাল শিক্ষক পাওয়া এখনো কঠিন। স্কুল গুলোতে প্রাকটিক্যাল করার জন্য পর্যাপ্ত ল্যাব কি আছে? এছাড়া বিজ্ঞান বিভাগে পড়া তুলনামূলক ব্যয়বহুল যা মেটানোর সামর্থ সকলের থাকে না। আর সেই খরচ কমিয়ে আনার সামাজিক চেষ্টাও নেই। সামাজিক উদ্যোগগুলো অনেকক্ষেত্রেই যতটা পরকালমুখী ততটা ইহকালের কল্যানের দিকে অমনযোগী। (যদিও বাঙালি মোসলমান দোয়া পুরোটাই করে – রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও অফিল আখিরাতি হাসানাহ।) অনেক বাবা মা ই তো বোঝেন না তাদের সন্তানরা কি পড়ছে, কোন বিষয় পড়লে ভাল হবে। আবার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরাই ঠিক করেন কারা কোন বিভাগে ভর্তি হবে।

এসব ছাড়াও আমাদের দেশের বিজ্ঞান পড়া লোকেরা যতটা অন্য দেশে চলে যান – কলা ও মানববিদ্যার লোকেরা ততটা যান না। কারন বিজ্ঞান পড়ুয়াদের দক্ষতা পৃথিবীর যে কোন প্রান্তেই কাজে লাগছে। তাই তার সুযোগ তাকে অন্য দেশে নিয়ে যায়। মানববিদ্যার লোকেদের বিজ্ঞান প্রীতি নিয়ে সমালোচনা করা হয় অথচ অভিজিতের মত বিজ্ঞান জানা বিজ্ঞান লেখক যখন লিখে তখন সমাজ তাকে কুপিয়ে মারে। কলা আর মানববিদ্যার লোকেরা বিজ্ঞান নিয়ে কথা বললে তার এক্সপার্টাইজ নিয়ে প্রশ্ন তোলা সহজ, তাই সেই প্রশ্ন তুলছেন লোকেরা। একইভাবে বিজ্ঞান ব্যাকগ্রাউন্ডের লোকেরা যদি অনেকের ফিলিং ট্রুথ-কে সন্তষ্ট করতে না পারে অথবা অস্বস্তিতে ফেলে তখন তাকেও নাকচ করার জন্য অন্য অজুহাত খুঁজতে হবে। যেহেতু নাকচ করাই মূল উদ্দেশ্য তাই যেকোন অজুহাতে নাকচ করতে হবে।

অবশ্য সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে যে অ্যাডভান্সমেন্ট হয়েছে তা থেকেও বাঙাল বঞ্চিত। এত সরল সমাজ সবকিছুকে ঠাট্টা করে উড়ায়ে দিতে চায়। খারাপ না। খোদা বাঙালকে ইহকালীন আর পরকালীন কল্যান দেয়ার বদলে ইহকালেও মজা দিবে পরকালেও মজা দিবে। প্রার্থনা করি হে খোদা, তুমি বাঙালকে মজা দিচ্ছ দাও, সাথে বিজ্ঞানও দিও।

এপ্রিল ১২, ২০২২

No comments:

Post a Comment

Delulu and Danger of Innocence of Law

The persistent political crisis in Bangladesh is often framed as a binary dilemma: is the nation suffering from a flawed political culture, ...