Monday, July 26, 2021

আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ

অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ ভাল উপস্থিত বক্তৃতা দিতে পারেন, গল্প বলেন চমৎকার, আর মোটিভেশন দিতেও দক্ষ। অথচ এসব কারনে কখনো তার প্রতি মুগ্ধ হইনি। কারন যে বয়সে এসব আমাকে অবিভূত করতো সে বয়স পার করেই তাকে আমি চিনেছি। বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রের পুরাতন বিল্ডিংয়ের ছাদে একবার আড্ডায় উপস্থিত ছিলাম। তিনি কি বলেছেন তা আমার মনে নেই, তবে মুড়ি পিয়াজু চা খাওয়ার স্মৃতি মনে আছে।
জন্মদিন উপলক্ষ্যে লোকজন তার দোষত্রুটি প্রচার করছেন। এসবের মধ্যে দোষগুলা কি বুঝা মুশকিল। নির্বিচার গালাগাল করতে যাদের আগ্রহ তাদের একটা অংশ হচ্ছে ঘৃণাজীবী অ্যান্টিসেক্যুলার। আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ যেহেতু সেক্যুলার কাজেই তাকে নিন্দা করতে হবে। এবং তা করতে হবে কিছুটা ক্রিটিকাল বুদ্ধিজীবী সেজে। আসল মতলবটা লুকিয়ে রাখতে হবে। অবশ্য চেতনাজীবীরাও তাকে ছাড় দিতে নারাজ। মাঝে মাঝে বেফাস কথা বলে তাদের চেতনা ব্যবসার কিছু ক্ষেতি তিনি করেছেন।
আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের মত অসংখ্য উদ্যমী সংগঠক এবং শিক্ষক আমাদের দরকার ছিল। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মতন সংগঠন তার সবচে বড় সাফল্য। বাঙালির সংগঠন করার যে দুর্বলতা তা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। (তার বই 'সংগঠন ও বাঙালি'তে তা লিখেছেন।) ভিতরের বাইরের বহু প্রতিরোধ কাটিয়ে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের মত সংগঠন তিনি তৈরি করেছেন। গত এক দশকে বাংলা ভাষায় যে পরিমাণ বই স্বল্পদামে এবং সুন্দর ছাপায় কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত হয়েছে সমালোচকরা সেসবের খবর রাখেন কিনা জানিনা। আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদকে নাকচ করে দেয়া সহজ নয়, গড়পড়তা বাঙালী বুদ্ধিজীবীর চাইতে বাড়তি উদ্যমটুকু তিনি কাজে লাগিয়েছেন। আমাদের ছোট গায়ের ছোট ছোট ঘরে থাকতে থাকতে আমাদের বিচার কেবলই আত্মঘাতী হয়ে উঠে।
অবশ্য চিরদিনের জন্য তার প্রতি মুগ্ধ হয়ে থাকা কারো কারো জ্ঞান স্বাস্থ্যের জন্য বাধা হয়ে থাকতে পারে। যে কারো কথাকে নির্বিচারে গ্রহণ করা বা মান্য করাও বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। তবে এমন বাধা ভক্তের, গুরুর উপর সেই দায় চাপানোটা কতটা যুক্তিযুক্ত তা ভেবে দেখা উচিত।
যাহোক, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের সমালোচকদের লেখা দেখে ভানু বন্দোপাধ্যায়ের ‘চোখে আঙ্গুল দাদা’-র কথা মনে পড়ে গেল। আমাদের ‘চোখে আঙুল দাদা’রা কি গড়েছেন জীবনে?
-
জুলাই ২৫, ২০২১

Sunday, July 25, 2021

জীবন যন্ত্রণা

 জীবনের যন্ত্রনা বিষয়ে কিছুদিন আগে একখানা কৌতুক ধার করেছি। পাওনাদার সৈয়দ মুজতবা আলী। তার সাথে এক উকিলের পরকাল বেহেশত দোজখ ইত্যাদি বিষয়ে আলাপ হয়েছিল। কথায় কথায় উকিল জানাল যে - ’আমি বেহেশতে বিশ্বাস করি, দোজখে আমার বিশ্বাস নাই। মৃত্যুর পর সকলেই স্বর্গে যাবে।’

উকিলের ব্যাখ্যা হচ্ছে বেহেশতে কালাভুনার ডেগচি ঘুরে বেড়াবে, আস্ত রোস্ট গাছে ঝুলবে, শরাব মধু দুধ নদী হয়ে বইবে। আরাম আয়েশ ভোগবিলাসের কোন কমতি থাকবে না। চাহিবা মাত্র সকলই পাওয়া যাবে।এসব তো কল্পনা করা যায়, তাই বেহেশত আছে।
আর নরকের ব্যাপারটা কল্পনাতেও আসে না। এই দুনিয়ার চাইতেও খারাপ জায়গা হয় নাকি! কাজেই দোজখ নাই।
এই কৌতুক কিংবা বজ্রপাতের হাসাহাসিতে আপনারা জানেন, দুনিয়ার চাইতে যন্ত্রনাময় জায়গা আর নাই। জীবন যে শিটি ব্যাপার তা আপনারা জীবন দেখে অনেকেই বুঝে গেছেন। মোটিভেশন লেখকরা দিবালোকের ন্যায় ফকফকা করে লিখে রেখেছেন, এই শিটি জীবনে বুলশিট কাউশিট কোনটা গায়ে মাখবেন তা জাইন্যা আর মাইন্যা নিলেই কেল্লা ফতে। মানে জীবন যুদ্ধে জয় সুনিশ্চিত।
আপনারা এই কথা অন্তরে ঢুকায়ে নিতে পারেন, জীবনের যন্ত্রণা হইতে মানুষের নিস্তার নাই, আর মোহমুক্তির সাধনা করার জন্য ডুমুরতলাও (মানে ত্বীন ফলের গাছও) সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না, কাজেই যন্ত্রণা বাছাই করার স্বাধীনতাই মানুষের আদি ও আসল স্বাধীনতা।
-
(বাংলা ভাষায় ’স্বাধীনতা ব্যবসায়’ কিতাবেও গ্রিক পুরাণ থেকে ধার করে এমন কথা বাজারে ছাড়া হয়েছে। স্বাধীনতা ব্যবসায় মূলত স্বাধীনতা বিরোধী কিতাব। লিবারেলিজমের ক্রিটিক এবং ক্রিটিকের তর্জমা। পেইন বাইছা লওয়ার নামই স্বাধীনতা ব্যবসা। বন্ধুদের বলে রাখি, উক্ত কিতাবের অসমআলোচনা লেখার ইচ্ছা এখনও যন্ত্রণা পর্যন্ত গড়ায় নাই।)

-
/ জুলাই ২৪, ২০২১

করোনার ভিন্ন প্রভাব

 করোনার কারনে কতকিছুই বদলে গিয়েছে। ঢাকায় ৮ মার্চ ২০২০ এ করোনা সনাক্তের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই জ্বর-কাশি-গলাব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ আমাকে দেখা দিয়ে গেল।

তারপর ঘটনা ঘটতে থাকল বহু বিচিত্র উপায়ে। অনলাইনে এক সেমিস্টার পড়ালাম।
করোনায় অনেক পরিবর্তনের সাথে আমার জীবনে যে পরিবর্তন ঘটলো সে হচ্ছে শার্ট ইন করা ভুলে গিয়েছি। অনলাইনে মাস্টারি করে প্রায় দেড় বছর কাটিয়ে দিলেন যে শিক্ষকরা তাদের অনেকেই আমার মত প্যান্টের ভেতর শার্টের উদার পাশটা লুকানোর অভ্যাস হারায়ে ফেলছেন। বাঙালির লুঙ্গিতে যে আরাম, দীর্ঘ লক ডাউনের কালে অনেকেই তা ভবিষ্যতের পাওনাসহ পুষিয়ে নিয়েছেন।
স্টুডেন্টদের অনেকের শার্ট প্যান্ট পরার দরকার কমেছে। লুঙ্গি গেঞ্জিতে ভালই চালিয়ে নেয়া যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। পায়জামার উপর শার্ট পরে আমি যে দীর্ঘদিন ক্লাস নিলাম - এই কথা যাতে ভুলে না যাই, তাই লিখে রাখছি।
করোনার এই লুঙ্গিপ্যান্ট সংক্রান্ত প্রভাব বাজারেও পড়ার কথা। অনুমান করি গত দেড় বছরে ইয়াংদের ব্যবহারের জন্য লুঙ্গির বিক্রি বেড়েছে; প্যান্টের বিক্রি কমেছে।
ভিন্ন ধরনের জটিলতাও আছে। মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে তা টের পাওয়া যাবে। মানে অনেকের প্যান্ট আর কোমড়ে বনিবনা হচ্ছে না; কারো কারো জামার সাথে চলছে মনোমালিন্য। কোভিড পরবর্তীতে বেসাইজ বাতিল হওয়া জামাকাপড়ের সদগতির উদ্যোগ কাজে লাগতে পারে।
অনেকের জুতার ভেতর মাকড়সা বা ইঁদুর বাস করার সম্ভাবনা আছে। পায়ের সাথে জুতার পরিচয় ঘটতে অনেকদিন লেগে যাবে আবার। যাহোক, প্যান্টের কোমড় না হয় কিছুটা বাড়ানো যাবে, বেল্টও হয়তো চালিয়ে নেয়া যাবে, তবে আপনারা প্রার্থনা করেন মাস্টাররা প্যান্ট পরা ভুলে গেলেও অন্তত জিপার আটকানোর অভ্যাসটা যেন না ভুলে। ধুতি লুঙ্গি পায়জামা ঘুরে প্যান্টে এখনো থিতু হয় নাই বাঙালি।
-
/ জুলাই ২৪, ২০২১

Saturday, July 10, 2021

হাড্ডি

পুড়ে যাওয়া ভবনের অনুমতি ছিলনা;
শিশু শ্রমের ব্যতিক্রমি অনুমতি আইনে ছিল,
শিশু জন্মানোর অনুমতি ছিল না অগো বাপ-মায়ের;
আগুনভরা কারখানায় জানালা বন্ধ আর সিঁড়ি না রাখার অনুমতি ছিল,
তবে আজরাঈলের অনুমতি ছিলনা জান কবজ করার;

যদিও আল্লাহর রহমতে বাইচা গেল শ খানেক মানুষ।
শয়তানের ওয়াসওয়াসায় মরল ৫১।
দেড়হাজারের বেশি লোকে বেহেশতের এই ছয়তলায় করত কাজ;
আলহামদুলিল্লাহ ফর এভরিথিং, ওভারটাইমে মাত্র দেড়-দুইশ ছিল আজ।

জুসের স্ট্র বসাইয়া খাইতেছিলাম তাগো রক্ত
শালার গরীবগুলা জন্মায় শুকনা হাড্ডি হাড্ডি শরীরে
রক্ত বের হয় খেঁজুর গাছ চাঁছার তৃতীয় দিনের মতো

তবে সুবিধা একটা আছে
গাদাগাদি কইরা হাসেমের ছয় খোপ উন্নয়ন স্বর্গে
হাজার দেড়েক রাখলেও তারা কর্ম করিয়া বাঁচে

চিকন দরজা আর সিঁড়ি দিয়াও অনায়াসে
দল বাইন্ধা তারা ঢুইকা পড়ে সুড়সুড়
যেন অল্প পানিতে পাতা চাইয়ে
ঝাকে ঝাকে পুটির পোনা খাইত মরনগুড়
মচমচা ভাজা পুটি, আহা, ৪৮টা পেলে
প্লেটে পেটে নাস্তা হতো
বর্ষার বৈকালে।

দিনটা বাঙালি হতো, খাঁটিও অল্পনা;
গতরে পুটির কম – এইসব গরীবের ছাও,
হুদাই উড়ায়ে দিল ফ্রাইড ফিশ কল্পনা।

আমি অভিজ্ঞ মানুষ। মানুষ গরু চিনি।
বলদার পো* দিয়া টাকা বেরয় না
মোবাইল কম্পানিতে কথা বেচা মধ্যবিত্তের সাথে
এমন সরল সত্যও জানি।

তবে আমি আরো জানি বাঁকা অংকটাও।
একেকটা পোড়া বলদের দাম মন্দ না
জ্যান্ত বলদ বছরে গোবর দেয় হাজার হাজার টেকার;
এইসব পোড়া গরীবের হাড্ডি দিয়া
দশটেকার দাঁত খিলানও বানানো যায় না।
সেই তাগো আবার ভণিতা আবদার:
‘আমার মায়ের হাড্ডিগুলা খুইজ্জা দেন স্যার’।

এই ছোট শুকনা হাড্ডি দিয়া করবি কি?
ডিসি সাহেব বলেছেন – বিইশ হাজা-া-র টাকা দেয়া হবে
লাশ প্রতি (মানে এক সেট হাড্ডির জন্য)
তোরা সেই টাকা দিয়া বলদের হাড্ডি কিনলে অনেক ওজনদার হাড্ডি পাবি,
সামনেই কোরবানী
এখনই খোঁজ রাখলে খোদার দয়ায় হাড্ডি কিনার সুযোগ মিলতে পারে নসিবে
যা, টাকা পাইলে ভারি ভারি হাড্ডি কিনিস।
অহন ঘ্যান ঘ্যান করিস না; দল বাইন্ধা ঘ্যান ঘ্যান করলে
তোদের হাড্ডি ভাইঙা যাবে মহামান্য আইনশৃংখ্যলার শিংয়ের গুতায়।

তা ছাড়া বিল্ডিংয়ে কি আমি আগুন দিছি?
গরীবের হাড্ডিতে ঠোকাঠুকি কইরাই এই আগুন লাগছে।

(আমি তাজ্জব হয়া যাই —
এই গরীবগুলার হাড্ডির ভিতর থেইকাও প্রেম বাইর হয়;
দাউ দাউ আগুনের ভিতর
প্রায় বন্ধ হইয়া যাওয়া শ্বাস লইয়াও
এক মাইয়া তার স্বামীরে ফোন কইরা জানাইছে – বিল্ডিংয়ে আগুন লাগছে।
লাইলি মজনু না
বেহুলা লখিন্দর না
রোমিও জুলিয়েট না
কাগজের আগুনে পুইড়া ছাই হয়া যায় এমন পলকা দেহ আর পাতলা হাড্ডির ভিতর কত ঢং
মৃত্যুর আগেও প্রিয় মানুষ খোঁজে!)

যাইহোক, সবকিছুকেই দেখতে হবে পজিটিবলি।
তাজরীন, নিমতলি, চকবাজার, বনানী, আর সব পোড়া বস্তি থেইকা উন্নয়ন পর্যন্ত আমাদের লেসন নিতে হবে।
কবি তাই বহু আগেই বলে গেছেন —
‘আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া’
হাসি উন্নয়নের হাসি।

Friday, July 9, 2021

পাগলা ডুমুর ১

দাদা ভান্তে একদা আরেক সাধু সহ সফর শুরু করেছিলেন। সাধু তপস্বী জীবন, চর্চার মধ্যেই প্রকাশ পায়। সফর চলতে থাকে। কামনা বাসনা থেকে মুক্তির পথে নারীসঙ্গ বড় বিপদজনক বাসনার উৎস। মুনিদের ধ্যান ভাঙার জন্য নারীদের নাম বদনাম দুইই শোনা যায়। ‍কিশোর বয়সে এক তুর্কি দরবেশের কথা বেশ তাজ্জব করেছিল; তুর্কি দরবেশ বলেছিলেন, একটা দেশলাইয়ের কাঠি যেমন রোম, টোকিও, কিংবা লন্ডন পুড়িয়ে ফেলতে পারে, একজন নারীর এক পলক চাহনি এক হাজার বছরের ইবাদত বন্দেগী তেমন ছাই করে দিতে পারে। রোম আবার গড়া যায়, কাগজের টোকিও সিমেন্টে পাথরে বিস্তর হয়ে উঠতে পারে, লন্ডনও রয়াল সোসাইটির প্লানে আরো ঝাকুম-ঝুকুম কসমোপলিটান হয় — তবে এক জীবনের ইবাদত বন্দেগী পুনরায় ঠিকঠাক করার চান্স শূন্যের কাছাকাছি। তাই প্রেম বা প্রেমাধিক আকাংখ্যার ভয় মুনিঋষিরা চিরদিন সাধনার পথে ঝুলিয়ে রেখেছেন।

এক্ষনে যে দাদা ভান্তে আর তার সাগরেদের কথা কহিলাম তিনিও ব্যতিক্রম নন। তাহাদের যাত্রা পথে একটি একহাটু জল কিন্তু হাটু কাঁপানো স্রোতের নদীর দেখা মিলিল। নদীর পাড়ে সাজসজ্জায় রূপ বাড়াইয়া এক রুপবতী নারী অপেক্ষমান। মুনিঋষিদের যাত্রা পথে বিপদ একলাই আসে। ভ্রার্তৃ-পুত্র-পিত কেহ সহায় হইয়া থাকে না। যদিও এখনকার সচেতন সাহিত্যে কিশোরী তরুণী সকলেই অন্তত প্রিয়ংবদা সহযোগে শকুন্তলার মত গল্প উপন্যাসে বিচরণ করেন। যাহোক, হাটু কাঁপানো স্রোতস্বিনী পার হইবার সাহস যদি রুপসীর থাকিত তবে প্রজ্ঞার ঈশ্বর তাকে দাদা ভান্তের কাধে চড়াইত না। রূপসীকে দাদা ভান্তে কাধে চড়াইয়া —বর্ষাকালের বাঙালি জামাইরা যেমন নতুন বউকে উদ্ধার করেন, সেইমতন— নদী পাড় করাইয়া দিলেন।

পুনরায় পথ চলিতে লাগিলেন তারা। শিষ্য কিছুতেই আহত বাকবুদ্ধিকে সুস্থ করিতে পারিল না। বারবার দাদা ভান্তেকে জিজ্ঞাসা করিল আপনি এই কাজ কেন করিলেন। সাধনার পথে এমন কর্ম হইতে দূরে থাকিবার নিয়ম। রূপবতী শুধু দেখিলে না হয় অল্প বলিয়া ছাড় দেয়া যাইত; আপনি ত শুধু দেখেন নাই, ছুঁইয়াছেন। শুধু স্পর্শ করিয়াছেন বলিলে আমার কাতরতা শেষ হয় না, আপনি তাহাকে কাধে লইয়াছেন। তাও যদি কাধে লইয়াই আপনার ভুল বুঝিতে পারিয়া সাথে সাথে নামাইয়া রাখিতেন, তাতেও আমার ‍গুরুভক্তি রক্ষা পাওয়ার একটা সম্ভাবনা ছিল। আপনি এক অপরিচিত রূপবতী নারীকে কাধে চড়াইয়া নদী পার করিয়া দিয়াছেন। সদাশয় গুরু ভান্তে, আপনার প্রতি আমার ভক্তির উষ্ণতার ভেতর স্রোতস্বিনীর শীতল জল না ঢালিয়া দিলে আজ আমার তপস্বার অগ্রগতি এমন করিয়া নদীতীরে আছাড় খাইত না।

দাদা ভান্তে চুপ থাকিয়া যাত্রাপথ অতিক্রম করিতেছিলেন। কয়েকমাইল হাঁটার পর দিনান্তের বিশ্রামের জন্য তিনি থামিলেন। শিষ্য দাদা ভান্তেকে এই রুপবতীকে স্কন্ধদান বিষয়ে প্রশ্নে কটাক্ষে ত্যক্তবিরক্ত করিবার চেষ্টা হইতে বিশ্রাম লাভের কোন লক্ষ্যণ দেখাইল না। অতঃপর দাদা ভান্তে মুখ খুলিলেন। বলিলেন, আমি তো তরুনীকে নদীর পাড়ে রাখিয়া আসিয়াছি, তুমি এখনো তাহাকে বহিয়া বেড়াও কেন?
-

দাদা ভান্তের সাথে আমরা শিষ্য মারফত আর কোন আলাপ যাতে করিতে না পারি প্রজ্ঞার ঈশ্বর সেই ব্যবস্থা করিয়াছেন গল্প শেষ করিয়া। তবুও আমরা আমাদের জীবনে বহু বোঝা বহিয়া বেড়াই, জীবন কুঁজো হয়ে যায় সটান দেহ আর শ্যাম্পুকরা চুলের নিচে মগজের ভেতর।

Thursday, July 1, 2021

আহমদ ছফার বাসনা

 আহমদ ছফার চিন্তার বৈপরিত্য খুঁজে পাওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু চিন্তার বৈপরিত্য বা কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে কি যুক্তি দিয়েছেন তার চেয়ে বড় ছফার বাসনা। ছফার বাসনার কারনেই ছফা গুরুত্বপূর্ণ। ছফার বাসনা কি ছিল?

একটা স্বাধীন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। এমন একটা জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্র পাওয়ার গল্প তিনি বলেছেন যে, জনগোষ্ঠী এই ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস এবং ভবিষ্যৎ সবই বদলে দেবে। দিয়েছে। উপমহাদেশের ইতিহাসে এখনো বাংলাদেশের এই উত্থানের প্রভাব লেখা হয়নি। আর বাংলাদেশের সম্ভাবনা দেখার মতন স্থিরতা আমাদের কপালে জুটেনি।
ছফা জানাচ্ছেন জাতি রাষ্ট্র হিসেবে এই অঞ্চলে পাকিস্তান এবং ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে আধুনিক রাষ্ট্র। ভারত এবং পাকিস্তানের একজাতি বা দ্বিজাতি দুটিই যে মিথ্যা কথা - তা বুঝা যায় বাংলাদেশের রাষ্ট্র হওয়ার মধ্য দিয়ে। কারন এই অঞ্চল বহুজাতির। এক ভারতীয় বা দুই হিন্দু-মুসলিম জাতির মাত্র নয়।
সেক্যুলার বাঙালি মুসলমানের দরবেশ ছিলেন আহমদ ছফা। তার দরবেশ সুলভ জীবনের কারনে তাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে হইতে থাকে। অন্য অনেকেই হয়তো ছফার মতো জাগ্রত বাংলাদেশের বাসনা বুকে নিয়ে জীবন কাটাইছেন কিন্তু ছফা ঘর সংসার চাকরি বাকরি করেন নাই বলে তাকে আর কোন পরিচয়ে আড়াল করা যায় নাই।
-
/জুন ৩০, ২০২১

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম পরষ্পরকে বিরোধী হিসেবে বয়ানের অন্তত দুইটা ধারা আছে। এই দুই ধারা একে অপরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। একদল মুক্তিযুদ্ধের দখল চায়...