শিশু শ্রমের ব্যতিক্রমি অনুমতি আইনে ছিল,
শিশু জন্মানোর অনুমতি ছিল না অগো বাপ-মায়ের;
আগুনভরা কারখানায় জানালা বন্ধ আর সিঁড়ি না রাখার অনুমতি ছিল,
তবে আজরাঈলের অনুমতি ছিলনা জান কবজ করার;
যদিও আল্লাহর রহমতে বাইচা গেল শ খানেক মানুষ।
শয়তানের ওয়াসওয়াসায় মরল ৫১।
দেড়হাজারের বেশি লোকে বেহেশতের এই ছয়তলায় করত কাজ;
আলহামদুলিল্লাহ ফর এভরিথিং, ওভারটাইমে মাত্র দেড়-দুইশ ছিল আজ।
জুসের স্ট্র বসাইয়া খাইতেছিলাম তাগো রক্ত
শালার গরীবগুলা জন্মায় শুকনা হাড্ডি হাড্ডি শরীরে
রক্ত বের হয় খেঁজুর গাছ চাঁছার তৃতীয় দিনের মতো
তবে সুবিধা একটা আছে
গাদাগাদি কইরা হাসেমের ছয় খোপ উন্নয়ন স্বর্গে
হাজার দেড়েক রাখলেও তারা কর্ম করিয়া বাঁচে
চিকন দরজা আর সিঁড়ি দিয়াও অনায়াসে
দল বাইন্ধা তারা ঢুইকা পড়ে সুড়সুড়
যেন অল্প পানিতে পাতা চাইয়ে
ঝাকে ঝাকে পুটির পোনা খাইত মরনগুড়
মচমচা ভাজা পুটি, আহা, ৪৮টা পেলে
প্লেটে পেটে নাস্তা হতো
বর্ষার বৈকালে।
দিনটা বাঙালি হতো, খাঁটিও অল্পনা;
গতরে পুটির কম – এইসব গরীবের ছাও,
হুদাই উড়ায়ে দিল ফ্রাইড ফিশ কল্পনা।
আমি অভিজ্ঞ মানুষ। মানুষ গরু চিনি।
বলদার পো* দিয়া টাকা বেরয় না
মোবাইল কম্পানিতে কথা বেচা মধ্যবিত্তের সাথে
এমন সরল সত্যও জানি।
তবে আমি আরো জানি বাঁকা অংকটাও।
একেকটা পোড়া বলদের দাম মন্দ না
জ্যান্ত বলদ বছরে গোবর দেয় হাজার হাজার টেকার;
এইসব পোড়া গরীবের হাড্ডি দিয়া
দশটেকার দাঁত খিলানও বানানো যায় না।
সেই তাগো আবার ভণিতা আবদার:
‘আমার মায়ের হাড্ডিগুলা খুইজ্জা দেন স্যার’।
এই ছোট শুকনা হাড্ডি দিয়া করবি কি?
ডিসি সাহেব বলেছেন – বিইশ হাজা-া-র টাকা দেয়া হবে
লাশ প্রতি (মানে এক সেট হাড্ডির জন্য)
তোরা সেই টাকা দিয়া বলদের হাড্ডি কিনলে অনেক ওজনদার হাড্ডি পাবি,
সামনেই কোরবানী
এখনই খোঁজ রাখলে খোদার দয়ায় হাড্ডি কিনার সুযোগ মিলতে পারে নসিবে
যা, টাকা পাইলে ভারি ভারি হাড্ডি কিনিস।
অহন ঘ্যান ঘ্যান করিস না; দল বাইন্ধা ঘ্যান ঘ্যান করলে
তোদের হাড্ডি ভাইঙা যাবে মহামান্য আইনশৃংখ্যলার শিংয়ের গুতায়।
তা ছাড়া বিল্ডিংয়ে কি আমি আগুন দিছি?
গরীবের হাড্ডিতে ঠোকাঠুকি কইরাই এই আগুন লাগছে।
(আমি তাজ্জব হয়া যাই —
এই গরীবগুলার হাড্ডির ভিতর থেইকাও প্রেম বাইর হয়;
দাউ দাউ আগুনের ভিতর
প্রায় বন্ধ হইয়া যাওয়া শ্বাস লইয়াও
এক মাইয়া তার স্বামীরে ফোন কইরা জানাইছে – বিল্ডিংয়ে আগুন লাগছে।
লাইলি মজনু না
বেহুলা লখিন্দর না
রোমিও জুলিয়েট না
কাগজের আগুনে পুইড়া ছাই হয়া যায় এমন পলকা দেহ আর পাতলা হাড্ডির ভিতর কত ঢং
মৃত্যুর আগেও প্রিয় মানুষ খোঁজে!)
যাইহোক, সবকিছুকেই দেখতে হবে পজিটিবলি।
তাজরীন, নিমতলি, চকবাজার, বনানী, আর সব পোড়া বস্তি থেইকা উন্নয়ন পর্যন্ত আমাদের লেসন নিতে হবে।
কবি তাই বহু আগেই বলে গেছেন —
‘আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া’
হাসি উন্নয়নের হাসি।
—
No comments:
Post a Comment