Friday, July 9, 2021

পাগলা ডুমুর ১

দাদা ভান্তে একদা আরেক সাধু সহ সফর শুরু করেছিলেন। সাধু তপস্বী জীবন, চর্চার মধ্যেই প্রকাশ পায়। সফর চলতে থাকে। কামনা বাসনা থেকে মুক্তির পথে নারীসঙ্গ বড় বিপদজনক বাসনার উৎস। মুনিদের ধ্যান ভাঙার জন্য নারীদের নাম বদনাম দুইই শোনা যায়। ‍কিশোর বয়সে এক তুর্কি দরবেশের কথা বেশ তাজ্জব করেছিল; তুর্কি দরবেশ বলেছিলেন, একটা দেশলাইয়ের কাঠি যেমন রোম, টোকিও, কিংবা লন্ডন পুড়িয়ে ফেলতে পারে, একজন নারীর এক পলক চাহনি এক হাজার বছরের ইবাদত বন্দেগী তেমন ছাই করে দিতে পারে। রোম আবার গড়া যায়, কাগজের টোকিও সিমেন্টে পাথরে বিস্তর হয়ে উঠতে পারে, লন্ডনও রয়াল সোসাইটির প্লানে আরো ঝাকুম-ঝুকুম কসমোপলিটান হয় — তবে এক জীবনের ইবাদত বন্দেগী পুনরায় ঠিকঠাক করার চান্স শূন্যের কাছাকাছি। তাই প্রেম বা প্রেমাধিক আকাংখ্যার ভয় মুনিঋষিরা চিরদিন সাধনার পথে ঝুলিয়ে রেখেছেন।

এক্ষনে যে দাদা ভান্তে আর তার সাগরেদের কথা কহিলাম তিনিও ব্যতিক্রম নন। তাহাদের যাত্রা পথে একটি একহাটু জল কিন্তু হাটু কাঁপানো স্রোতের নদীর দেখা মিলিল। নদীর পাড়ে সাজসজ্জায় রূপ বাড়াইয়া এক রুপবতী নারী অপেক্ষমান। মুনিঋষিদের যাত্রা পথে বিপদ একলাই আসে। ভ্রার্তৃ-পুত্র-পিত কেহ সহায় হইয়া থাকে না। যদিও এখনকার সচেতন সাহিত্যে কিশোরী তরুণী সকলেই অন্তত প্রিয়ংবদা সহযোগে শকুন্তলার মত গল্প উপন্যাসে বিচরণ করেন। যাহোক, হাটু কাঁপানো স্রোতস্বিনী পার হইবার সাহস যদি রুপসীর থাকিত তবে প্রজ্ঞার ঈশ্বর তাকে দাদা ভান্তের কাধে চড়াইত না। রূপসীকে দাদা ভান্তে কাধে চড়াইয়া —বর্ষাকালের বাঙালি জামাইরা যেমন নতুন বউকে উদ্ধার করেন, সেইমতন— নদী পাড় করাইয়া দিলেন।

পুনরায় পথ চলিতে লাগিলেন তারা। শিষ্য কিছুতেই আহত বাকবুদ্ধিকে সুস্থ করিতে পারিল না। বারবার দাদা ভান্তেকে জিজ্ঞাসা করিল আপনি এই কাজ কেন করিলেন। সাধনার পথে এমন কর্ম হইতে দূরে থাকিবার নিয়ম। রূপবতী শুধু দেখিলে না হয় অল্প বলিয়া ছাড় দেয়া যাইত; আপনি ত শুধু দেখেন নাই, ছুঁইয়াছেন। শুধু স্পর্শ করিয়াছেন বলিলে আমার কাতরতা শেষ হয় না, আপনি তাহাকে কাধে লইয়াছেন। তাও যদি কাধে লইয়াই আপনার ভুল বুঝিতে পারিয়া সাথে সাথে নামাইয়া রাখিতেন, তাতেও আমার ‍গুরুভক্তি রক্ষা পাওয়ার একটা সম্ভাবনা ছিল। আপনি এক অপরিচিত রূপবতী নারীকে কাধে চড়াইয়া নদী পার করিয়া দিয়াছেন। সদাশয় গুরু ভান্তে, আপনার প্রতি আমার ভক্তির উষ্ণতার ভেতর স্রোতস্বিনীর শীতল জল না ঢালিয়া দিলে আজ আমার তপস্বার অগ্রগতি এমন করিয়া নদীতীরে আছাড় খাইত না।

দাদা ভান্তে চুপ থাকিয়া যাত্রাপথ অতিক্রম করিতেছিলেন। কয়েকমাইল হাঁটার পর দিনান্তের বিশ্রামের জন্য তিনি থামিলেন। শিষ্য দাদা ভান্তেকে এই রুপবতীকে স্কন্ধদান বিষয়ে প্রশ্নে কটাক্ষে ত্যক্তবিরক্ত করিবার চেষ্টা হইতে বিশ্রাম লাভের কোন লক্ষ্যণ দেখাইল না। অতঃপর দাদা ভান্তে মুখ খুলিলেন। বলিলেন, আমি তো তরুনীকে নদীর পাড়ে রাখিয়া আসিয়াছি, তুমি এখনো তাহাকে বহিয়া বেড়াও কেন?
-

দাদা ভান্তের সাথে আমরা শিষ্য মারফত আর কোন আলাপ যাতে করিতে না পারি প্রজ্ঞার ঈশ্বর সেই ব্যবস্থা করিয়াছেন গল্প শেষ করিয়া। তবুও আমরা আমাদের জীবনে বহু বোঝা বহিয়া বেড়াই, জীবন কুঁজো হয়ে যায় সটান দেহ আর শ্যাম্পুকরা চুলের নিচে মগজের ভেতর।

No comments:

Post a Comment

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম পরষ্পরকে বিরোধী হিসেবে বয়ানের অন্তত দুইটা ধারা আছে। এই দুই ধারা একে অপরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। একদল মুক্তিযুদ্ধের দখল চায়...