অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ ভাল উপস্থিত বক্তৃতা দিতে পারেন, গল্প বলেন চমৎকার, আর মোটিভেশন দিতেও দক্ষ। অথচ এসব কারনে কখনো তার প্রতি মুগ্ধ হইনি। কারন যে বয়সে এসব আমাকে অবিভূত করতো সে বয়স পার করেই তাকে আমি চিনেছি। বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রের পুরাতন বিল্ডিংয়ের ছাদে একবার আড্ডায় উপস্থিত ছিলাম। তিনি কি বলেছেন তা আমার মনে নেই, তবে মুড়ি পিয়াজু চা খাওয়ার স্মৃতি মনে আছে।
জন্মদিন উপলক্ষ্যে লোকজন তার দোষত্রুটি প্রচার করছেন। এসবের মধ্যে দোষগুলা কি বুঝা মুশকিল। নির্বিচার গালাগাল করতে যাদের আগ্রহ তাদের একটা অংশ হচ্ছে ঘৃণাজীবী অ্যান্টিসেক্যুলার। আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ যেহেতু সেক্যুলার কাজেই তাকে নিন্দা করতে হবে। এবং তা করতে হবে কিছুটা ক্রিটিকাল বুদ্ধিজীবী সেজে। আসল মতলবটা লুকিয়ে রাখতে হবে। অবশ্য চেতনাজীবীরাও তাকে ছাড় দিতে নারাজ। মাঝে মাঝে বেফাস কথা বলে তাদের চেতনা ব্যবসার কিছু ক্ষেতি তিনি করেছেন।
আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের মত অসংখ্য উদ্যমী সংগঠক এবং শিক্ষক আমাদের দরকার ছিল। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মতন সংগঠন তার সবচে বড় সাফল্য। বাঙালির সংগঠন করার যে দুর্বলতা তা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। (তার বই 'সংগঠন ও বাঙালি'তে তা লিখেছেন।) ভিতরের বাইরের বহু প্রতিরোধ কাটিয়ে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের মত সংগঠন তিনি তৈরি করেছেন। গত এক দশকে বাংলা ভাষায় যে পরিমাণ বই স্বল্পদামে এবং সুন্দর ছাপায় কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত হয়েছে সমালোচকরা সেসবের খবর রাখেন কিনা জানিনা। আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদকে নাকচ করে দেয়া সহজ নয়, গড়পড়তা বাঙালী বুদ্ধিজীবীর চাইতে বাড়তি উদ্যমটুকু তিনি কাজে লাগিয়েছেন। আমাদের ছোট গায়ের ছোট ছোট ঘরে থাকতে থাকতে আমাদের বিচার কেবলই আত্মঘাতী হয়ে উঠে।
অবশ্য চিরদিনের জন্য তার প্রতি মুগ্ধ হয়ে থাকা কারো কারো জ্ঞান স্বাস্থ্যের জন্য বাধা হয়ে থাকতে পারে। যে কারো কথাকে নির্বিচারে গ্রহণ করা বা মান্য করাও বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। তবে এমন বাধা ভক্তের, গুরুর উপর সেই দায় চাপানোটা কতটা যুক্তিযুক্ত তা ভেবে দেখা উচিত।
যাহোক, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের সমালোচকদের লেখা দেখে ভানু বন্দোপাধ্যায়ের ‘চোখে আঙ্গুল দাদা’-র কথা মনে পড়ে গেল। আমাদের ‘চোখে আঙুল দাদা’রা কি গড়েছেন জীবনে?
-
জুলাই ২৫, ২০২১
No comments:
Post a Comment