Saturday, August 28, 2021

নফসে ওয়াহিদা

 একই নোনা সমুদ্র থেকে আমরা সাঁতরে উঠলাম বিভিন্ন মহাদেশে...

কেউ কেউ এখনো জলে...
সাঁতার কিংবা মাটি ছেড়ে,
কেউ কেউ ডানা ঝাপটায় দুরন্ত উড়ালে...
-
/অগাস্ট ২৭, ২০২১

Saturday, August 21, 2021

বেরাদার, তুমিও কি কাঁঠাল খাইছ?

 কাবুলিওয়ালাদের নিয়ে অনেক গল্প প্রচলিত ছিল বাংলায়। একটি কৌতুক ছিল কাঁঠাল খাওয়া নিয়ে। কাঁঠাল খেতে সুস্বাদু এ কথা শুনে এবং পাকা কাঁঠালের অসাধারণ ঘ্রাণে মুগ্ধ হয়ে একজন কাবুলিওয়ালা কাঁঠাল কিনলেন। কাঁঠাল থেকে সুস্বাদু কোষ বের করে খাওয়া কোন সহজ কাজ নয়। বাঙালির খাদ্য জ্ঞানের ভিতর যেসব জটিল দক্ষতার ব্যাপার লুকিয়ে আছে তা কাঁঠাল খাওয়া তার একটি ভাল উদাহরণ। আমাদের এই গল্প কাবুলিওয়ালার কাঁঠাল খাওয়া বিষয়ে। বাঙ্গালির জটিল দক্ষতা যেহেতু তার নেই, তাই সে কাঁঠাল খেতে গিয়ে আঠায় জড়িয়ে গিয়েছে।

কাবুলিওয়ালাদেরে দাঁড়ি রবীন্দ্রনাথের মত। সেই রাবীন্দ্রিক দাঁড়ি কাঁঠালের আঠায় জট পাকিয়ে গেল। কাঁঠালের আঠা যে কতটা কঠিন, তা বাঙালির গানে পাওয়া উপমা থেকে বুঝা যায়। বাঙালির জটিল প্রেম এই আঠাকে তুলনার মান বিবেচনা করে: ‘পিরিতি কাঁঠালের আঠা, লাগলে পরে ছাড়েনা/ গোলে মালে গোলে মালে পিরিত কইরো না।’ গোলে মালে পিরিত করে পিরিতির আঠায় যত মানুষ দুঃখ পেয়েছে – কাবুলিওলা দাঁড়িতে জট পাকিয়ে দুঃখ পেয়েছে তার চেয়ে বেশি।
গল্পের মাঝখানে বাঙালির কুবুদ্ধির উদাহরণ আছে। তাই ঝম্প দিয়া গল্পের শেষে যাই। গল্পটা অন্যের দুঃখ নিয়া হাসাহাসি করার। কারন দুঃখকে সবসময় আশকারা দিয়ে সুখের ভাগ কমানোর ইচ্ছা বেরসিক ব্যাপার। কাবুলিওয়ালা তার দাঁড়িকে কাঁঠালের আঠা থেকে মুক্ত করতে না পেরে নিজের তলোয়ার কিংবা নাপিতের খুর দিয়ে চোয়াল চেছে ফেলে। আয়নায় নিজের চেহারা মোবারক দেখে, তালেবান দেখা কাবুলের মত সে আৎকে উঠে। তার আর দুঃখ শেষ হয় না। বাংলার পথে ঘাটে সে তার মত অসংখ্য দুঃখী মানুষ আবিষ্কার করে ফেলে একদিনে। যাদেরকেই সে দেখে যে দাঁড়ি গোফ কামানো, তাদেরকে ধরে সে জিজ্ঞেস করে – ভায়া, তুম ভি কাঁঠাল খায়া? (বেরাদার, তুমিও কি কাঁঠাল খাইছ?)
এতদিন তো চামচ দিয়ে মাঝে মাঝে খাবার খেতাম। আজ থেকে কয়েকদিন চামচ নির্ভর হয়ে যেতে হবে। আজকের পর থেকে চামচ দিয়ে কাউকে খাবার খেতে দেখলে কাবুলি ব্রাদারের মতন আমিও হয়তো লোকদের জিজ্ঞেস করবো, ‘ভাই, তুমিও কি বোলিং খেলতে গেছিলা?’

*নখ কি তোমারও ভাঙছে যে কারনে হাত ধোয়ার ভয়ে চামচ দিয়ে খাও?
**বড় কোন সমস্যা না। আপনারা হাসাহাসি করতে পারেন। আর আশা হারায়েন না; ছোটখাট দুঃখেও উপকারী মানুষরা থাকে।
-
/ অগাস্ট ২০, ২০২১

Friday, August 20, 2021

পশু

 হয়তো আমি হাঁটব বলে আজ রাতের মেঘেরা এলোমেলো বা ঘোলাটে হয়ে থাকতে লজ্জা পেলো। তারা নিজেদের ভাগ্যমত পরিপাটি হয়ে ভাসছে। দশ বারো দিনের চাঁদ আকাশ জমিয়ে তুলেছে। একা একা যে উৎসব হতে পারে, সে কথা সম্ভবত চাঁদের কপালে লিখে রেখেছে ভাগ্যের বুড়ি। পাতাভরা গাছ, পরিচ্ছন্ন আর সাজানো হাটার পথ, আর হঠাত দেখা হয়ে যাওয়া দুএকজন মানুষ। মানুষেরা চুপচাপ চলে যাচ্ছে। যাচ্ছে দ্রুত। ঘরে ফেরার তাড়া আছে; হয়তো ক্লান্তি আছে, অথবা আনন্দ। তারা হয়তো ভাবে – আজকের দিনটা ত কাটলো! আগামীর চিন্তা কমিয়ে রেখে একেকটা দিন তীব্রভাবে বেঁচে থাকার তৃপ্তি হয়তো তাদের চোখেমুখে। (অথবা গতির জীবন তাদের নাকমুখচোখ তীব্র করে রাখে চিরদিন। এমন ধারালো জীবনে দুঃখেরা ঠিক দখল নিতে পারে না। মৃত্যু স্বাভাবিক জেনেই বেঁচে থাকতে হয় প্রচণ্ড; তাই থাকছে তারা! জীবনের সম্ভাবনার ছিটে ফোটাও ঠিক ছেড়ে দেয়ার নয় – এমনই জীবন কি তাদের?)

আমি হাঁটি। কোথাও না যাওয়ার জন্য হাঁটি। মাটিতে আমার পা কেমন ভরসা পায়, রাতের ঠাণ্ডা বাতাস দরদ মাখে আমার গায়ে, চাঁদের আলো চোখে কেমন আনন্দ ঢালে – সেসব বুঝার জন্য হাঁটি। মোবাইল ফোন যাতে বিরক্ত না করে তাই জেন মুডে তাকে থামিয়ে রাখি। বাতাসের ঢেউ কখনো কখনো মেঘনা নদীর মমতার মত মনে হয়। মনে হয় দাঁড়িয়ে আছি রাতের লঞ্চের ছাদে। বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী পার হয়ে বাতাস আর নদীর স্রোত কেটে জাহাজ ভেসে চলছে। যেন আমি কোন বসতির দিকে যাচ্ছি না; যাচ্ছি কেবলই নদীর দিকে, অথবা বাতাসের দিকে, অথবা মেঘেরা যেখানে উড়ে তার পাশাপাশি কোন ঢেউ ভাঙা শব্দের দিকে...
এমন মিতস্বরের আনন্দ আর হাটাহাটির একদিনে আমার সাথে দেখা হলো একটি আহলাদি কুকুরের। নাম তার উইনি দ্যা পুডল। তাকে দেখতে লাগে ডল বা পুতুলের মতন। এমন অনেক পুতুল-কুকুর এ লোকালয়ে বাস করে। তবুও সেই তাদের মধ্যে প্রথম যে আমাকে দেখে থামল এবং আমার সাথে খাতির করতে চাইল। লেজ নাড়তে নাড়তে সে তার আহলাদ জানালো আমাকে। আমি তাকে কোলে নিলাম। জানলাম প্রায় সন্ধ্যায় পুডল হাটতে বের হয়।
পুডল যদিও পশুর মত নয়, তবু আমার পশুর কথা মনে পড়ল। পশু একটি বিড়ালের নাম। এই পৃথিবীতে সে প্রায় দশ বছর বেঁচেছিল। আমার সাথে তার খাতির ছিল না শুরুতে। এক সন্ধ্যায় সে আমাকে বিশ্বাস করলো। আমার কোলে উঠে ঘুমিয়ে থাকলো। আমার সাথে তার আর দেখা হবে না। হয়তো পুডলের সাথেও আর দেখা হবে না।
এমন অন্য কোন চাঁদের আলোয় আমি একটি নতুন গাছের পাশ দিয়ে যাব। শুভেচ্ছা জানিয়ে যাব আমার সাথে দেখা গাছদের। একই হাওয়ায় আমাদের আনন্দ হবে বেঁচে থাকার। যেসব গাছের কাছে ছোটখাট বিড়ম্বনা লুকিয়ে এলাম, তাদের সাথে দেখা হবে আবার। কোন সন্ধ্যায় কিংবা উজ্জ্বল রোদের দিনে। বহু গাছের কাছে জমা রেখে এসেছি নির্ভেজাল আনন্দের স্মৃতি। তারা কেউ কেউ হয়তো এখনো বেঁচে আছে; কেউ কেউ প্রিয় বিড়ালের হারিয়ে যাওয়ার দেশে ...

/ অগাস্ট ১৯, ২০২১

Monday, August 16, 2021

আফগানিস্তান ও বাঙালি মোসলমান

 সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী রাজনৈতিক মত – যেকোন দেশেই বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে। বিদেশি হস্তক্ষেপ আর শাসনের বিরোধিতা আর ভেতরের কোন রাজনৈতিক শক্তিকে সমর্থন করা এক কথা নয়। তবুও কেউ কেউ এক করে ফেলার ঝোঁক এড়াতে পারেন না। বাংলাদেশে যারা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার কারনে আফগানিস্তানে মার্কিন ক্ষমতার পরাজয়ে আনন্দিত তারা এ ঝোঁক এড়ানোর জন্য অপেক্ষা করবেন হয়তো। সোজা কথায় তারা নিশ্চয়ই বুঝেন যে, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার জন্য তালেবান সমর্থক হওয়ার দরকার নাই।

বাংলাদেশের তালেবান-উৎসাহীদের অনেকে এ কারনে আনন্দিত না যে – তালেবান ন্যায়বিচারক, মানুষের রাজনৈতিক অধিকারকে স্বীকার করে, আফগান মুসলমানদেরকে শিক্ষা-দীক্ষায় অগ্রসর করে তুলতে চায়, কিংবা আফগান নারীদের অধিকার বাস্তবায়নে তারা উদ্যোগী নাহোক অন্তত সহনশীল; এমন কারনে তালেবান-উৎসাহী হওয়াটা মন্দ হতো না। কিন্তু অনেকের খুশির কারন হচ্ছে তালেবানের মোসলমানিত্ব এবং মোসলমানিত্বের নামে গোঁড়ামি। তালেবানের কট্টর মোসলমানিত্ব তালেবানকে প্রিয় করে তুলছে অনেকের কাছে। এরা মনে করে তালেবান আফগানিস্তানের অন্যান্যদের চাইতে এবং ক্ষেত্রবিশেষ তাদের নিজেদের চাইতে বেশি মুসলমান।
(মূলত উপমহাদেশের মাদরাসা শিক্ষায় এই একটা অহংকার শেখানো হয় যে পোশাক আশাক এবং ধর্মীয় শিক্ষার কারনে এরা অন্যদের চেয়ে বেশি মুসলমান। এমন অহংকারের এক্সট্রিম রাজনৈতিক প্রকাশ ঘটেছে যেই তাকফীর ধারনার মধ্যে তাকে তালেবান তাদের যুদ্ধনীতিতে ব্যবহার করেছিল। তালেবান বা আলকায়েদার সেই আত্মঘাতী তাকফীর নীতির অর্থ হচ্ছে যে কোন মোসলমান ইসলামের আচার-আচরণ থেকে সরে গেলে অন্য মোসলমানকেও কাফের ঘোষণা করতে পারবে। এবং সেই যুদ্ধ প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ফরজ। এই রকম পলিসির মাধ্যমে তারা ইসলাম বা শরীয়ার একটি সামগ্রিক এবং রাষ্ট্রীয় নীতিকে ব্যক্তিগত নীতিতে রূপান্তর করেছিল। শরীয়ার যুদ্ধ আইনকে ব্যবহার করেছিল তারা, যেমনটা হিউম্যানিটারিয়ান ল-কে ব্যবহার করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।)
যদিও শিক্ষার কারিকুলাম এবং দর্শনের ক্ষেত্রে দেওবন্দের ধারা তাদের শেকড়, তবুও আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের যেসব মাদরসার তালেবরা তালেবান হিসেবে বিশেষ পরিচিত - সেসব মাদরাসায় সামরিক ট্রেনিং দিয়েছে আমেরিকা। তালেবান সৃষ্টির প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে আমেরিকার সহায়তায়।
ধর্মীয় শিক্ষার কারিকুলামে দেওবন্দী ধারার প্রতিষ্ঠানের সাথে তালেবানি শিক্ষার মিল থাকলেও সশস্ত্র হওয়ার দিক থেকে পাকিস্তান-আফগানিস্তানের কওমী শিক্ষার কন্টেন্ট বাংলাদেশ-ভারতের ক্বওমী শিক্ষার কন্টেন্ট থেকে আলাদা। এমনকি রাজনৈতিক দিক থেকেও তারা আলাদা। যদিও শিক্ষার কন্টেন্টে মিলের কারনে বাংলাদেশ থেকে আশির দশকে আফগানিস্তানে অনেকে গিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ও ভারতের মাদরাসা আর পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মাদরাসা একরকম না। জঙ্গিবাদ বিরোধী বয়ানে এই পার্থক্য অনেক সময় অনুপস্থিত থাকে।
তালেবানকে পপুলার অথরিটারিয়ান রেজিম হিসেবে ধরে নিয়ে বলা যায় অথরিটারিয়ান রেজিমে রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক অধিকার তথা সম্পদ বণ্টনের অধিকারের একটা সুযোগ থাকে। তালেবান আফগান নাগরিকদের জন্য সেই সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে চায় কিনা? নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের বেলায় তালেবান গণতন্ত্র নয়, বরং আমিরাত বানাতে চায়। আমিরাত কোন সমাজতন্ত্র না; বরং এমন শাসন যাতে গোত্রতন্ত্র এবং পরিবারতন্ত্রের সুফল-কুফলের সাথে আফগান জনগণের ভাগ্য দুলতে থাকবে। আরো বহু দেশে যেমন ঝুলে। তবে তালেবান যদি গণতান্ত্রিক হতে চায়, নারীসহ আফগান জনগণের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারকে স্বীকার করে এবং বাস্তবায়ন করে – তাহলে তালেবানকে অনেক বদলে যেতে হবে। যে বদল প্রকারান্তরে আমেরিকার আদর্শিক বিজয়।
সৈয়দ মুজতবা আলীর শবনম উপন্যাসে এবং দেশে বিদেশে নামক ভ্রমণ কাহিনীতে আফগানিস্তানের অল্প একটু ছবি দেখেছি। সভ্যতার ইতিহাসে সিল্করুটের ঝলমলানি বহু পুরাতন এই দেশ থেকে আলাদা করা যায় না। দেশে বিদেশের সেই বিশালদেহী বিরাটদিল এবং সহজ-সরল আব্দুর রহমানদের জীবন তালেবানি আফগানিস্তানে কেমন হবে, কাবুলসহ আরো সব উপত্যকার শবনমেরা কেবল হারিয়ে যাবে কিনা, সাধারণ আফগান জনতার জীবনের ছবি আপিম ক্ষেতের রোদে পুড়ে কেবলই রিলিফ ম্যাপের মতো হয়ে যাবে নাকি আঙুর লতার ছায়ায় মসৃন আর সতেজ হয়ে উঠবে - আমরা জানিনা। আফগানরা এতদিন কেমন ছিল তা নিয়ে তর্ক বৃথা। তবে মনে রাখা দরকার আপাতত সাধারন আফগান জনগণের জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি এনে দেয়ার কোন জাদুমন্ত্র তালেবানের হাতে নেই। অলৌকিকতার আকাংখ্যায় আচ্ছন্ন বাঙালি মোসলমানরা এটুকু বুঝলে হয়!
-
অগাস্ট ১৫, ২০২১

Sunday, August 15, 2021

রেডবার্ড ডায়েরি - অগাস্ট ১৪, ২০২১

 অনেকেই জানেন যে আমেরিকায় পড়ালেখার সেমিস্টার মোট তিনটা। ফল, স্প্রিং, আর সামার। সামারে সাধারণত ছুটি থাকে। প্রায় তিনমাস। মে মাসের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের মাঝামাঝি। গরমকাল। লোকেরা ঘর থেকে বের হয়, ঘুরতে যায়। আমোদ করে।আর ফলে পড়ালেখার বছর শুরু হয়। মানে বেশিরভাগ ভর্তি হয় ফল সেমিস্টারে। আগস্টের মাঝামাঝি।

আমি এসছিলাম স্প্রিংয়ে। জানুয়ারির শুরুতে। নামে বসন্ত হলেও জমানো শীত ছিল তখন। অবশ্য সেমিস্টারের শেষ দিকে রঙিন সব ফুলের জমজমাট প্রদশর্নী হয়েছিল গাছে গাছে। ‘কি ভাল আমার লাগল’ সে কথা চিল্কায় গিয়ে বুদ্ধদেবও টের পান নাই।
বিদেশ আইসা বহুমানুষ যেমন বিভিন্ন অদৃশ্য ধাক্কা খায়, জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে আমিও খেয়েছি বেশ। বাঙালির পোড়ামন, গৃহপালিত আবেগসমূহ, আর বাঙাল রাষ্ট্রের মানুষবিরোধী নীতি এবং শাসন - আমার পুরাতন দুঃখ। এগুলো আমাকে ছাড়ে নাই। যদিও আমি ভাবি এসবের অনেক কিছুই আমি কাটায়ে উঠতে পেরেছি, কিন্তু তারা মাঝে মাঝে জানান দিতে থাকে আমি পারি নাই। এসবের সাথে নতুন বিতিকিচ্ছিরি ব্যাপার যোগ হলো।
আমেরিকার ঘরবাড়ির সাথে অভ্যস্ত হতেই আমার সময় লাগলো। বহুদিন পর আবার স্টুডেন্ট হয়ে যাওয়াটা কিঞ্চিৎ চ্যালেঞ্জিং ছিল। পড়ানোর জন্য কতকিছু পড়া হয়ে যেত। আমার স্টুডেন্টদের কারনেই আমি অনেক কিছু পড়েছি, এছাড়া আমি সেল্প মোটিভেটেড হয়ে কাজ করতে পারি কম - এসব কাহিনী আবিষ্কার হলো।
গত সেমিস্টারে এসব উপলব্দির পাশাপাশি নতুন কিছু শিখলাম। এর মধ্যে সবচে ভাল লাগলো Zotero নামক একটা সফটওয়্যারের ব্যবহার শিখে। আর সমাজবিজ্ঞান আবিষ্কার হলো নতুন করে। বইপত্র বা রিসোর্চ পাওয়ার ক্ষেত্রে যে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা এখানে পেলাম, শুধু তার জন্যই অনেক কষ্ট হজম করা যায়। (বাংলাদেশেও আগামী এক দশকে অনেক রিসোর্চ পাওয়া যাবে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক সবলতা অর্জন করতে সময় লাগতে পারে আরো বেশি।)
সামারে কোর্স না নিলেও চলতো। যাতে মাস্টার্স একটু আগে শেষ করতে পারি তাই আমি একটা নিয়েছিলাম। কোর্সটা পছন্দ করে ফেলছি খুব। কোর্সের নাম আইন ও সমাজ ওরফে আইনের সমাজতত্ত্ব।
গরমকালের অলস দিন কালকেই শেষ। পরশুদিন থেকে দৌড়ের উপর থাকব মনে হচ্ছে। ফল সেমিস্টারের ক্লাস এবং কাজ শুরু। সেমিস্টারের শুরুতে ‘ভাল হয়ে যাব এবার’ টাইপের যে মোটিভেশন কাজ করে, তা সবাইরে জানান দিয়ে রাখলাম। এই সেমিস্টারে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্ব আর কর্পোরেট ক্রাইম পড়বো। খুবই এক্সাইটেড হয়ে যাচ্ছি কন্টেন্ট দেখে।

Thursday, August 5, 2021

মোরাল গুণ্ডামি ও হজরত ঈসা (আ.)

নাজারাতের মহাপুরুষ হযরত ঈসা রুহুল্লাহ যখন জেরুজালেমে গেলেন তখনকার ঘটনা। তখনকার নীতি-গুন্ডারা এক মহিলাকে মারার জন্য তাড়াচ্ছিল। মহিলার অপরাধ সে প্রস্টিটিউট। তার এই অনৈতিক কাজের জন্য তাকে পাথর ছুড়ে হত্যা করতে চায় সবাই। হযরত ঈসা রুহুল্লাহ গাছের ছায়ায় বসে ছিলেন। মহিলা দৌড়ে এসে সেখানে এক দেয়ালের কাছে আটকে গেল। যাওয়ার আর জায়গা নেই। উত্তেজিত নীতি-গুণ্ডারাও সেখানে এসে থামল। হযরত ঈসা রুহুল্লাহ কথা বলতে পারতেন চমৎকার। (যখনই তিনি গল্প বলতেন কেউ না শুনে পারত না। জুদাস ত ভাবছিলেন রোমান বিচারক আর ইহুদী রাব্বি সবাইকে তিনি কনভিন্সড করে ফেলতে পারবেন তার ঐশ্বরিক কথা এবং কথা বলার শক্তিতে।)

তিনি বুঝেছিলেন ঐ উত্তেজিত মব তথা মোরাল-গুণ্ডাদের বুঝানোর সুযোগ খুব কম। মোরালিটিতে উত্তেজিত হয়ে পড়লে লোকজন আর ওয়াজ নসিহতও ব্যাখ্যা শুনতে চায় না। হযরত ঈসা রুহুল্লাহ তাদের জানালেন, আচ্ছা তোমরা পাথর মারতে চাও মারবা। তাতে কোন সমস্যা নাই। যেহেতু এই মহিলা পাপ করেছে তাই তাকে শাস্তি পেতে হবে। মহিলা চমকে গেলেন। আশ্রয়ের জন্য যার কাছে গেলেন তিনি যদি এমন কথা বলেন তার চেয়ে দুর্দশার আর কি আছে!

নাজারাতের মহাপুরুষ হযরত ঈসা (আ.) তাদের জানালেন, তোমরা পাথর মারতে পারো। তবে তোমাদের মধ্যে যে কোনদিন পাপ করে নাই, সেই প্রথম পাথরটা মারো। উত্তেজিত জনতা কনফিউজড হয়ে হজরতের দিকে এবং একে অন্যের দিকে তাকালো। মেঘমন্দ্র স্বরে হজরত ঈসা (আ.) আবার বললেন, তোমাদের মধ্যে যে কোনদিন পাপ করে নাই, সেই প্রথম পাথরটা মারো। আরো একবার বলার পরও এমন কাউকে আবিষ্কার করা গেল না। দয়াল নবী হজরত ঈসা রুহুল্লাহর প্রতি বিরক্ত হয়ে জেরুজালেমের মোরাল-গুণ্ডারা ঐ জায়গা থেকে কেটে পড়লো।

আইন-শৃংখ্যলা বাহিনীর প্রতি আস্থার ঘাটতি ও পরীমনির ফেসবুক লাইভ

পরীমনিকে গ্রেপ্তারের আগে তিনি লাইভে এসেছেন। আগেও হয়রানির শিকার হওয়ার পর এসেছিলেন। তবে দুই ঘটনাতেই পরীমনির লাইভে আসার সিদ্ধান্ত একটি বার্তা দিচ্ছে। আইন-শৃংখ্যলা ও বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে আস্থাহীনতা শুধু বর্তমান রেজিমের বিরোধী মত ও সমালোচকদেরই নয়, বরং এই রেজিমের সমর্থক এবং বেনিফিশিয়ারিদের মধ্যেও রয়েছে।

পরীমনি যে জানিয়েছেন, যারা তার বাসায় এসেছিল তারা যথাযথভাবে তাদের পরিচয় দেননি। তাদের ইউনিফর্ম ছিল না। তিনি ভয় পেয়েছেন এবং নিশ্চিত হতে পারেননি যে যারা গিয়েছে তারা আইন-শৃংখ্যলা বাহিনীর লোক।

লাইভের শেষ দিকে এসে জানা গেল তার বাসার নিচে র‌্যাবের ও পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। দরজার সামনে যারা দাঁড়িয়ে ছিলেন তারা ইউনিফর্ম পরিহিত।

এই আস্থাহীনতা দূর করার জন্য আইন-শৃংখ্যলা বাহিনীর ভিতর থেকেই সমাধানের রাস্তা খুঁজতে হবে।



বাঙাল বিপুল উৎসাহে মোরাল গেইম খেলেছে। পরীমনির দুরাবস্থাকে পোয়েটিক জাস্টিস হিসেবে বিবেচনা করে ফেসবুকে হা হা করেছে। তাদের অনেকে নির্মলেন্দু গুণের সাথে একমত হওয়া সত্ত্বেও মোরাল কনফিউশনের ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে।

এছাড়া সেলিব্রেটি না হলে লাইভে আসার প্রভাব কেমন হতো তা অন্য ঘটনা থেকে জানা যাবে।

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম পরষ্পরকে বিরোধী হিসেবে বয়ানের অন্তত দুইটা ধারা আছে। এই দুই ধারা একে অপরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। একদল মুক্তিযুদ্ধের দখল চায়...