হয়তো আমি হাঁটব বলে আজ রাতের মেঘেরা এলোমেলো বা ঘোলাটে হয়ে থাকতে লজ্জা পেলো। তারা নিজেদের ভাগ্যমত পরিপাটি হয়ে ভাসছে। দশ বারো দিনের চাঁদ আকাশ জমিয়ে তুলেছে। একা একা যে উৎসব হতে পারে, সে কথা সম্ভবত চাঁদের কপালে লিখে রেখেছে ভাগ্যের বুড়ি। পাতাভরা গাছ, পরিচ্ছন্ন আর সাজানো হাটার পথ, আর হঠাত দেখা হয়ে যাওয়া দুএকজন মানুষ। মানুষেরা চুপচাপ চলে যাচ্ছে। যাচ্ছে দ্রুত। ঘরে ফেরার তাড়া আছে; হয়তো ক্লান্তি আছে, অথবা আনন্দ। তারা হয়তো ভাবে – আজকের দিনটা ত কাটলো! আগামীর চিন্তা কমিয়ে রেখে একেকটা দিন তীব্রভাবে বেঁচে থাকার তৃপ্তি হয়তো তাদের চোখেমুখে। (অথবা গতির জীবন তাদের নাকমুখচোখ তীব্র করে রাখে চিরদিন। এমন ধারালো জীবনে দুঃখেরা ঠিক দখল নিতে পারে না। মৃত্যু স্বাভাবিক জেনেই বেঁচে থাকতে হয় প্রচণ্ড; তাই থাকছে তারা! জীবনের সম্ভাবনার ছিটে ফোটাও ঠিক ছেড়ে দেয়ার নয় – এমনই জীবন কি তাদের?)
Friday, August 20, 2021
পশু
আমি হাঁটি। কোথাও না যাওয়ার জন্য হাঁটি। মাটিতে আমার পা কেমন ভরসা পায়, রাতের ঠাণ্ডা বাতাস দরদ মাখে আমার গায়ে, চাঁদের আলো চোখে কেমন আনন্দ ঢালে – সেসব বুঝার জন্য হাঁটি। মোবাইল ফোন যাতে বিরক্ত না করে তাই জেন মুডে তাকে থামিয়ে রাখি। বাতাসের ঢেউ কখনো কখনো মেঘনা নদীর মমতার মত মনে হয়। মনে হয় দাঁড়িয়ে আছি রাতের লঞ্চের ছাদে। বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী পার হয়ে বাতাস আর নদীর স্রোত কেটে জাহাজ ভেসে চলছে। যেন আমি কোন বসতির দিকে যাচ্ছি না; যাচ্ছি কেবলই নদীর দিকে, অথবা বাতাসের দিকে, অথবা মেঘেরা যেখানে উড়ে তার পাশাপাশি কোন ঢেউ ভাঙা শব্দের দিকে...
এমন মিতস্বরের আনন্দ আর হাটাহাটির একদিনে আমার সাথে দেখা হলো একটি আহলাদি কুকুরের। নাম তার উইনি দ্যা পুডল। তাকে দেখতে লাগে ডল বা পুতুলের মতন। এমন অনেক পুতুল-কুকুর এ লোকালয়ে বাস করে। তবুও সেই তাদের মধ্যে প্রথম যে আমাকে দেখে থামল এবং আমার সাথে খাতির করতে চাইল। লেজ নাড়তে নাড়তে সে তার আহলাদ জানালো আমাকে। আমি তাকে কোলে নিলাম। জানলাম প্রায় সন্ধ্যায় পুডল হাটতে বের হয়।
পুডল যদিও পশুর মত নয়, তবু আমার পশুর কথা মনে পড়ল। পশু একটি বিড়ালের নাম। এই পৃথিবীতে সে প্রায় দশ বছর বেঁচেছিল। আমার সাথে তার খাতির ছিল না শুরুতে। এক সন্ধ্যায় সে আমাকে বিশ্বাস করলো। আমার কোলে উঠে ঘুমিয়ে থাকলো। আমার সাথে তার আর দেখা হবে না। হয়তো পুডলের সাথেও আর দেখা হবে না।
এমন অন্য কোন চাঁদের আলোয় আমি একটি নতুন গাছের পাশ দিয়ে যাব। শুভেচ্ছা জানিয়ে যাব আমার সাথে দেখা গাছদের। একই হাওয়ায় আমাদের আনন্দ হবে বেঁচে থাকার। যেসব গাছের কাছে ছোটখাট বিড়ম্বনা লুকিয়ে এলাম, তাদের সাথে দেখা হবে আবার। কোন সন্ধ্যায় কিংবা উজ্জ্বল রোদের দিনে। বহু গাছের কাছে জমা রেখে এসেছি নির্ভেজাল আনন্দের স্মৃতি। তারা কেউ কেউ হয়তো এখনো বেঁচে আছে; কেউ কেউ প্রিয় বিড়ালের হারিয়ে যাওয়ার দেশে ...
/ অগাস্ট ১৯, ২০২১
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম
মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম পরষ্পরকে বিরোধী হিসেবে বয়ানের অন্তত দুইটা ধারা আছে। এই দুই ধারা একে অপরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। একদল মুক্তিযুদ্ধের দখল চায়...
-
মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম পরষ্পরকে বিরোধী হিসেবে বয়ানের অন্তত দুইটা ধারা আছে। এই দুই ধারা একে অপরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। একদল মুক্তিযুদ্ধের দখল চায়...
-
যার যা কাজ, সে তা ঠিকঠাক করলেই ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ভাল থাকে। মানুষের সুখ-শান্তি বাড়ে। জীবনের জটিলতা কমে। যার যা কাজ, সে যেন তা করে - এই ক...
-
১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট থাকার সময়ে আমাদের পাশের হল - এফ রহমান - এর আবু বকর নামে এক স্টুডেন্ট নিহত হন। ছাত্রলীগের দুইপক্ষের মারামারি...
No comments:
Post a Comment