কাবুলিওয়ালাদের নিয়ে অনেক গল্প প্রচলিত ছিল বাংলায়। একটি কৌতুক ছিল কাঁঠাল খাওয়া নিয়ে। কাঁঠাল খেতে সুস্বাদু এ কথা শুনে এবং পাকা কাঁঠালের অসাধারণ ঘ্রাণে মুগ্ধ হয়ে একজন কাবুলিওয়ালা কাঁঠাল কিনলেন। কাঁঠাল থেকে সুস্বাদু কোষ বের করে খাওয়া কোন সহজ কাজ নয়। বাঙালির খাদ্য জ্ঞানের ভিতর যেসব জটিল দক্ষতার ব্যাপার লুকিয়ে আছে তা কাঁঠাল খাওয়া তার একটি ভাল উদাহরণ। আমাদের এই গল্প কাবুলিওয়ালার কাঁঠাল খাওয়া বিষয়ে। বাঙ্গালির জটিল দক্ষতা যেহেতু তার নেই, তাই সে কাঁঠাল খেতে গিয়ে আঠায় জড়িয়ে গিয়েছে।
কাবুলিওয়ালাদেরে দাঁড়ি রবীন্দ্রনাথের মত। সেই রাবীন্দ্রিক দাঁড়ি কাঁঠালের আঠায় জট পাকিয়ে গেল। কাঁঠালের আঠা যে কতটা কঠিন, তা বাঙালির গানে পাওয়া উপমা থেকে বুঝা যায়। বাঙালির জটিল প্রেম এই আঠাকে তুলনার মান বিবেচনা করে: ‘পিরিতি কাঁঠালের আঠা, লাগলে পরে ছাড়েনা/ গোলে মালে গোলে মালে পিরিত কইরো না।’ গোলে মালে পিরিত করে পিরিতির আঠায় যত মানুষ দুঃখ পেয়েছে – কাবুলিওলা দাঁড়িতে জট পাকিয়ে দুঃখ পেয়েছে তার চেয়ে বেশি।
গল্পের মাঝখানে বাঙালির কুবুদ্ধির উদাহরণ আছে। তাই ঝম্প দিয়া গল্পের শেষে যাই। গল্পটা অন্যের দুঃখ নিয়া হাসাহাসি করার। কারন দুঃখকে সবসময় আশকারা দিয়ে সুখের ভাগ কমানোর ইচ্ছা বেরসিক ব্যাপার। কাবুলিওয়ালা তার দাঁড়িকে কাঁঠালের আঠা থেকে মুক্ত করতে না পেরে নিজের তলোয়ার কিংবা নাপিতের খুর দিয়ে চোয়াল চেছে ফেলে। আয়নায় নিজের চেহারা মোবারক দেখে, তালেবান দেখা কাবুলের মত সে আৎকে উঠে। তার আর দুঃখ শেষ হয় না। বাংলার পথে ঘাটে সে তার মত অসংখ্য দুঃখী মানুষ আবিষ্কার করে ফেলে একদিনে। যাদেরকেই সে দেখে যে দাঁড়ি গোফ কামানো, তাদেরকে ধরে সে জিজ্ঞেস করে – ভায়া, তুম ভি কাঁঠাল খায়া? (বেরাদার, তুমিও কি কাঁঠাল খাইছ?)
এতদিন তো চামচ দিয়ে মাঝে মাঝে খাবার খেতাম। আজ থেকে কয়েকদিন চামচ নির্ভর হয়ে যেতে হবে। আজকের পর থেকে চামচ দিয়ে কাউকে খাবার খেতে দেখলে কাবুলি ব্রাদারের মতন আমিও হয়তো লোকদের জিজ্ঞেস করবো, ‘ভাই, তুমিও কি বোলিং খেলতে গেছিলা?’
**বড় কোন সমস্যা না। আপনারা হাসাহাসি করতে পারেন।

-
/ অগাস্ট ২০, ২০২১
No comments:
Post a Comment