সুন্দরবন ও সংবিধানের রাজনীতি বিষয়ক একটি ক্ষুদ্র প্রশ্ন
সাংবিধানিক আইনি প্রক্রিয়া মেনে সুন্দরবন রক্ষার দাবিটি অরাজনৈতিক বা বোকামি কিনা?
সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদের বরাত দিয়ে ফেসবুকে সুন্দরবন রক্ষার দাবি প্রচার করছেন অনেকে।
আর এ দাবির প্রতিক্রিয়া হিসেবে ১৯৭২ থেকে্ই কার্যকর এমন একটি সংবিধানের বৈধতার প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। দ্বিতীয় দাবি অনুযায়ী বিভিন্ন গণবিরোধী বিষয় এই সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই বৈধতা পেয়ে চলেছে/চলছে সেই যুক্তিও আসছে।
এই দ্বিতীয় প্রকারের দাবি একটি দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক প্রশ্ন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস, মানুষের অধিকারের প্রশ্ন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ইত্যাদি বিভিন্ন মানদণ্ডে সংবিধান সংক্রান্ত এই রাজনীতি। সংবিধানের প্রতি ক্রিটিক্যাল রাজনীতি।
অপরদিকে বিদ্যমান ব্যবস্থার মধ্যে থেকেই এই সংবিধানের অধীনে অধিকার চাওয়া কিংবা সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা রাজনৈতিকভাবে অবহেলিত হওয়া উচিত নয়। সব রাজনৈতিক ব্যবস্থা দিনশেষে এইটাই চায়।
যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি সাংবিধানিক পুনর্গঠনের দাবি আর ১৯৭২ সালের সংবিধানের প্রতি ক্রিটিক্যাল রাজনীতিকে জনপ্রিয় করে তুলতে না পারেন, অথবা লোকজন বুঝাতে না পারেন ততক্ষণ তাদেরকে গালাগাল করে কিছুই হবে না।
দুইটা আলাদা রাজনৈতিক প্রশ্ন।
মানুষ বিদ্যমান ব্যবস্থার অধীনেই নিজের অধিকারের প্রশ্ন তুলবে। অার মানুষের সেই দাবিকে মানুষের অধিকারের সামগ্রিক আন্দোলনের একটা কৌশল হিসেবে দেখা উচিত। যে কৌশল রাষ্ট্র এবং আইন ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে কাজ করে। যদিও এ দেখা স্ববিরোধী মনে হতে পারে তবুও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার এই অস্পষ্টতার সময়ে একে বরং সমন্বয়ী করতে হবে। ন্যূনতম পক্ষে সাময়িক কৌশল হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। নয়ত ক্রিটিক্যাল রাজনীতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ এবং জনসমর্থনহীন হয়ে যাবে।
আবার, শুধুমাত্র ক্রিটিক্যাল রাজনীতিই সবাইকে করতে হবে এই দাবি মানুষকে বরং ক্রিটিক্যাল রাজনীতি বিমুখ করতে পারে।
তাছাড়া বাংলাদেশে মানুষের অধিকারহীনতার ইতিহাস সবটাই সাংবিধানিক ব্যবস্থার ইতিহাস নয়। বরং সাংবিধানিকতার পরাজয়ের ইতিহাস। সাংবিধানিকতার অনুপস্থিতির ইতিহাস। কাজেই সতত পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক ব্যবস্থার কারনে সাংবিধানিকতা স্থায়ী হয় নি।
১৯৭২ সালের সংবিধানকে মহৎ করে তোলা বা সংবিধান বন্দনা করার উপায় হিসেবে নেয়ার একটা প্রবণতা আছে। সেই প্রবণতাই হয়তো ক্রিটিক্যাল রাজনীতির জনগণের সংবিধান সম্মত দাবিকে সন্দেহ করার কারন হতে পারে।
কাজেই এখানে সন্দেহটা সংবিধান বন্দনা বা সংবিধান পূজার জন্য বরাদ্দ রাখলেই ভাল। বন্দনার বাইরেও সংবিধানের অনেক বড় ভূমিকার রাখার সুযোগ আছে। মানুষের অধিকার আদায়ের পদ্ধতি এবং কৌশল হিসেবে সংবিধান অনুযায়ী দাবিকে দেখলে গণমানুষের রাজনীতি বুঝতে পারা সহজ হবে। এবং গণমানুষকে রাজনীতির মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করাও সহজ হবে।
সংবিধান অনুযায়ী অধিকার আদায়ের দাবি, এর প্রক্রিয়া এবং ফলাফল সরাসরি রাজনৈতিক আন্দোলন, ক্ষমতার মাধ্যমে সিদ্ধান্তগ্রহণের প্রক্রিয়া ও ফলাফল থেকে আলাদা হতে পারে। এবং সংবিধানের সীমাবদ্ধতাও হয়তো অনেক। তবুও একে মানুষের রাজনীতি ও অধিকারের প্রশ্নে সহযোগী হিসেবে দেখাই উচিত। এবং সংবিধানের প্রতি ক্রিটিক্যাল থাকা সহই তা হওয়া উচিত। দুটিকে বিরোধী করে নয়।
_
কাজেই যারা সংবিধান অনুযায়ী সুন্দরবন রক্ষার দাবি জানাচ্ছেন তাদের দাবি চলতে থাকুক। হয়তো সাংবিধানিক সক্রিয়তাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে পথ দেখাবে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পথ করে দিবে।
___
No comments:
Post a Comment