ফিনিক্স পাখি নিয়া অনেক বই পুস্তক আছে। প্রাচীন গ্রিক আমল থেকে শুরু করে রোমানদের লাতিন, আরব জাহানের আরবি এবং বাংলার চেয়ে বয়সে ছোট ইংরেজী ভাষায় অনেক বই পুস্তক অনেক কাইজ্জা।
আমাদের বন্ধুবর হজরত
Ferdows AL Hasan একদা ফিনিক্স পাখির প্রেমে পড়েছিলেন। জগন্নাথ হলের এক বিতর্কে তিনি ফিনিক্স পাখির পক্ষে বারোয়ারি বিতর্ক করেছিলেন। তারপর থেকে ফিনিক্স পাখির কথা পড়লে ফেরদৌসের কথা মনে পড়ে। ব্রেইন এইভাবে বিভিন্ন বিষয় জোড়া দিয়ে রাখে বলেই আমরা মনে রাখতে পারি।
যাহোক, ফিনিক্স পাখি প্রাচীন মিসরে সূর্য দেবতার আশীর্বাদ। এই পাখি আরব জাহানের উপর দিয়া উড়ে এসে মিসরে মৃত্যুবরণ করতো। তারপর তার ভস্ম হওয়া দেহ থেকে আবার জন্ম নিত নতুন পাখি।
ফিনিক্স পাখি আসলে কেউ দেখেছে কিনা এই নিয়া সন্দেহ আছে। দ্বন্ধ আছে ফিনিক্সের মালিকানা নিয়া। ঐতিহাসিক পি কে হিট্টি বিশ্বাস করতেন ফিনিক্স আরবের পাখি। ইউরোপ আম্রিকা তথা পাশ্চাত্যের আরব আবিষ্কারের যেই গ্রন্থের নাম তিনি দিয়েছেন - হিস্ট্রি অব দ্যা আরবস সেই গ্রন্থ তার বিশ্বাসের সাক্ষী।
ফিনিক্স পাখির সাথে উড়াউড়ি করে নিজের অজ্ঞানতা আবিষ্কার করার পর খানিকটা মোলায়েম দুঃখ হইলো বাঙালের পাখিরাও কি দুর্বল আর ছোট। ঈগল কিংবা বাজ পাখিদের বাঙাল মনে হয়না শিকারের জন্য কোন কালে পোষ মানিয়েছে। মাছ খাওয়ার জন্য দুয়েকটা মাছরাঙা, বক, কিংবা পানকৌড়িকেও ট্রেনিং দেয় নাই।
দাঁড়কাক কিংবা Raven ভুটানের জাতীয় পাখি। এতো বুদ্ধিমান এর সাহসী একটা পাখির সাথে বাঙালির খাতির আরেকটু বেশি হওয়ার দরকার ছিল। শকুন কেন বাঙালীর অভিশাপ আর ঘৃণার শিকার হলো তা বুঝতে গেলে বাঙালী বিচারজ্ঞান নিয়ে সন্দেহ আরো শক্তিশালী হয়। শকুন নামক পাখিটা বাঙালীর কাছ থেকে যে অন্যায্য দুর্নামের শিকার হয়েছে তার প্রায়শ্চিত্য না করলে বাঙালের শিক্ষা পূর্ণ হবে না।
মহাভারতের রামগরুড় বাংলায় উড়েছিল নাকি সংস্কৃত শ্লোকেই কেবল দুলেছিল তা জানি না।
পেঁচাকেও বাঙাল খুব পছন্দ করে না। বাঙালের সাম্প্রদায়িকতা অন্যায়ভাবে পেঁচাকে আক্রমণ করেছে। অল্পবয়সে আমরা ভাইবোনরা পেঁচাকে ভয় পেতাম। বিশেষত রাতে পেঁচার ডাক শুনলে ভয়ে কলিজা কেঁপে উঠতো। অবশ্য এই ভয় সম্ভবত শিখানো হয়েছিল। অথচ পেঁচার ডাকেও আমি ডাহুকের ডাকের মতন আনন্দের দিন পেতে পারতাম! বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে জীবনানন্দ এবং তারপরে পৌরাণিক ইউরোপে পেঁচার আধিপত্য, মহত্ত্ব, জ্ঞান বিজ্ঞান নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেখে এবং ইউটিউবে পেঁচাদের নিঃশব্দ উড়ালে মুগ্ধ হয়ে পেঁচাকে বেশিরকম ভালবেসে ফেলি। এছাড়া হেগেলের কাব্যিক বয়ান: মিনার্ভা দেবীর পেঁচা, ডানা মেলে সূর্য ডোবার পর - শুনতে বড় ভাল লাগে।
বাদ দেই এসব কথা। ফিনিক্স আসলে বাংলার পাখি না। ফিনিক্সের সাথে বাংলার ঐতিহাসিক কিংবা পৌরাণিক কোন সম্পর্কও নাই। বাংলার দাঁড় কাক দরকার। সাহসী, বুদ্ধিমান, উপকারী - দাঁড়কাকের বড় অভাব বাংলায়।
আর বাংলার কবি সাহিত্যিকদের উচিত অন্তত কয়েক শ বছর শকুনের কাছে ক্ষমা চাওয়া। শকুনের মত একটা নিরপরাধ এবং উপকারী পাখির প্রতি তারা যে অজ্ঞতাপ্রসূত ভাষাগত জুলুম করেছে তার জন্য তাদের উচিত ক্ষমা চাওয়া এবং বন্দনা লিখে দায় শোধ করা।
-
মে ২০২০
লালমাটিয়া, ঢাকা