Tuesday, December 12, 2023

হয়তো আপনাদের দুঃখ হচ্ছে

হয়তো আপনাদের দুঃখ হচ্ছে

আগমন-প্রস্থানের চিরন্তন মানবীয় বিক্রিয়া আক্রান্ত করছে আপনাদেরকেও

বেঁচে থাকা শেষ হলে  পাখিরা যায় কোথায়?

কোথায় অদৃশ্য হয় ফড়িং ও প্রজাপতি?

কোন কর্পোরেট অফিসে আত্মাহুতি দেয় ভাঁটফুল কিংবা নয়নতারা?


এসব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে

বর্ষার বিলে জালে আটকা পড়া ঢোড়া সাপের মতন মনের ভেতর মোচড় দিচ্ছে গহীন এক দুঃখ;

একটি করুন বেদনা শূন্যতার মত হাহাকার তুলে ফুসফুস ফাটিয়ে বের হবার জ্ন্য প্রস্তুত হচ্ছে বুকের ভেতর;

পায়ে পায়ে জড়তার মত লেপ্টে আছে স্মৃতি;

চোখের ভেতর উবুড় হয়ে আছে অব্যক্ত দুঃখের দুটি নোনাজলের নদী;

সমস্ত ইন্দ্রিয়কে গ্রাস করে এখনই যেন পৃথিবীতে প্রথমবারের মত নাজিল হয়েছে বিমূঢ়তা - 


স্বর্গ কিংবা পৃথিবী - সবকিছু ছাড়তেই আদমের সন্তানদের দুঃখ হয়;

হয়তো আপনাদেরও দুঃখ হচ্ছে …

_

রাজাবাজার/

১২/১২/২০২৩


Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

Tuesday, November 14, 2023

মহামান্য ট্রাক

মহামান্য ট্রাক। তোমার ব্রেক নাই কেন? সমগ্র বাংলাদেশে ফুলস্পিড ওজন তোমার, পিষতে থাকে গৃহপালিত হাড়গোড়। 

মহামান্য ট্রাক, তুমি কি আজরাইলের ভ্রাম্যমাণ অফিস? সতেজ টাটকা জীবন সব মিশমার কইরা তুমি যাইতেছ উরাধুরা … 

মাননীয় ইসপাতের ট্রাক, আর কত পিষবা আমাদেরে …
_
৮/১১/২০২৩
পূর্ব রাজাবাজার


Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

Monday, November 13, 2023

জারুল ফুল


মেঘছায়া নীরবতায় সবুজ রোদের দিনে
হৃদয় টুকরো করে শূন্যতা কিনে
আমাদের বারান্দা থেকে
প্রেম উড়ে গেলো।

আমি ঝুলে রইলাম নব্বইয়ের ঢাকায়।
ঢোলা শার্টের পকেটে ভাঁজ করে অতীত জমায়ে রেখে -
প্রতিদিন উদাসীন রিকশায় শাড়ি দেখে দেখে,
আমার কাটছে কাল কলকল স্রোতের ধ্বনি মেখে।

মাঝে মাঝে বেলা করে নিলাজ ঘুমের মাঝে,
জারুলের সাহসী রঙের ধারা ঘুম ভেঙে দিলে,
হাওয়ায় উড়ায়ে দিয়ে অবসাদের সকল আহ্বান,

নতুন শতাব্দী থেকে ভেসে আসে অন্য হলুদ পাখির ঘ্রাণ।
_

১২/১১/২০২৩
পূর্ব রাজাবাজার

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

Wednesday, November 8, 2023

ইতিহাস, আমার কথাও একটু শোনো

ইতিহাস,

আমারে একটা পাতা দিয়ো -

কোণা ছেঁড়া, ভাঁজ পড়া, খয়েরি পাতা।

সেখানে আমার অতি সাধারণ পিতামহের নাম লিখব,

লিখব কৃষক প্রপিতামহ এবং তাদের পূর্বপুরুষদের নাম।

তারা দাস ছিল না,

তারা ছিল স্বাধীন,

মেঘনার জোয়ারধোয়া গ্রামে 

ফসলের উদ্ধত সাহসের মত সূর্যমুখী!

সেই সকল পূর্বপুরুষের নাম যদি আমি কোথাও না লিখি

তাহলে - কষ্ট পাবে পৃথিবী এবং আরো সব জীবিত আবাসভূমির আত্মা;

ইতিহাস, তুমি আমার কথাও একটু শোনো -

আমারে একটা পৃষ্ঠা দিও,

রাইখো না সব কাগজ কোন বখত-নসরের কলমের অমোচনীয় কালির নিচে …


_

অক্টোবর ২০২৩ 


Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

Saturday, November 4, 2023

Failure of Constitutionalism in Bangladesh

Constitutionalism এর বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করা সত্ত্বেও বাংলাদেশে রাজনৈতিক এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহ দুর্বল রয়ে গিয়েছে। মূলত বাংলাদেশে Constitutionalism এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। বরং রাষ্ট্র ব্যবস্থা তৈরিতে Constitutionalism চর্চার বদলে বাংলাদেশে খেয়ালি বিধির শাসনই চলেছে বারবার।
রাষ্ট্রের সাংবিধানিক সেই দুর্বলতাকে শুধুমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্নে সীমাবদ্ধ করে ফেলার মানে রাষ্ট্রীয় জীবনে অল্প চাওয়ার বিভ্রম। এই বিভ্রমে রাখতে পারলে কোন কোন রাজনৈতিক দলের সুবিধা হলেও বাংলাদেশের জনগণের লাভ হবে না।
বাংলাদেশের সাংবিধানিক সংকট সুষ্ঠু নির্বাচন না করতে পারার চেয়ে বিস্তৃত এবং জটিল। সুষ্ঠু নির্বাচনের উপায় সহ বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামো ঠিকঠাক করতে সাংবিধানিক সংস্কারের বিকল্প নেই। কাজেই সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্ন সাংবিধানিক সংস্কারের অংশ হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের পূর্ণাঙ্গ সমাধান হিসেবে নয়।
আজকে বাংলাদেশের সংবিধান দিবস। ১৯৭২ সালের ৪ নবেম্বর গণপরিষদে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয়। ৭২ এর সংবিধানের বৈধতার প্রশ্ন, এবং সেই সংবিধানের দুর্বলতার বাইরে - ৭২ এর পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সাংবিধানিক যাত্রা প্রধানত নেতিবাচক। মানুষের অধিকার আর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের বিরুদ্ধে এই সংবিধানকে বাঁধা হিসেবে হাজির করা হয়েছে বহুবার।এবং সেই প্রয়োজনে সংবিধানকে কাঁটাছেড়াও করা হয়েছে।
.
বাংলাদেশের সংবিধান বিষয়ে এ বছর (২০২৩) খুব জরুরি চারটি বই প্রকাশিত হয়েছে। দুটি বই রাজনৈতিক করণীয় কি হবে তেমন অবস্থান থেকে লিখিত এবং বাংলা ভাষায়। আর ইংরেজিতে লিখিত দুটি একাডেমিক গবেষণার বই প্রকাশিত হয়েছে দেশের বাইরে, যা সংবিধানের গতানুগতিক ন্যারেটিব থেকে কিছুটা বেরিয়ে সংবিধানের বিভিন্ন বিষয়ের একধরনের আন্তঃশাস্ত্রীয় অনুসন্ধান। এছাড়া গত বছরের শেষে (২০২২) প্রকাশিত হয়েছে আরেকটি জরুরি পর্যালোচনা, ৭২ এর গণপরিষদে সংবিধান বিতর্ক বিষয়ে। এখানে বইগুলোর তালিকা করা হয়েছে আপনাদের সাথে পরিচিত করানোর জন্য।
১. ফরহাদ মজহার 'গণ অভ্যুত্থান ও গঠন - বাংলাদেশের গণরাজনৈতিক ধারার বিকাশ প্রসঙ্গে' বইয়ে রাজনৈতিক তত্ত্বের জায়গা থেকে রাষ্ট্র গঠন এবং রাষ্ট্র গঠনের ক্ষমতা যে কেবলমাত্র জনগণের (পপুলার সভরেইনটি) সেই ন্যারেটিব হাজির করেছেন। শুধু সংবিধানেই রাষ্ট্রের গঠন সীমাবদ্ধ নয়, এমনকি প্রচলিত রাজনৈতিক বর্গগুলোও যে চিন্তায় অতিক্রম করা প্রয়োজন, সেই প্রয়োজনীয় কাজের কথাই তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন। এই বইয়ের প্রকাশক রাষ্ট্রচিন্তা।
২. রাষ্ট্রচিন্তার প্রকাশিত আরেকটি বই হচ্ছে হাসনাত কাইয়ূমের 'রাষ্ট্র সংস্কারের রাজনীতি: তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দিক'। এই বইতে সংক্ষিপ্তভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সংস্কারের জন্য সংবিধান সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা এবং কিভাবে তা করা যেতে পারে তথা একটি রোডম্যাপ হাজির করা হয়েছে।
৩. বাংলা ভাষায় রচিত গত বছরের শেষ দিকে প্রথমা থেকে প্রকাশিত আসিফ নজরুলের 'সংবিধান বিতর্ক ১৯৭২ - গণপরিষদের রাষ্ট্র ভাবনা' উপরের দুটি বইয়ের সাথে সংবিধান সংস্কারের আলোচনা বুঝার জন্য সম্পূরক বই। এখানে ১৯৭২ সালের সংবিধান রচনাকারী গণরিষদ 'বিতর্ক' সারসংক্ষেপ এবং পর্যালোচনা করা হয়েছে।
৪. M Rafiqul Islam এবং Muhammad Ekramul Haque এর সম্পাদনায় Springer থেকে প্রকাশিত The Constitutional Law of Bangladesh - Progression and Transformation at its 50th Anniversary সংবিধানের একটা বিস্তৃত কমেন্টারির মত। বইটি কমেন্টারির চাইতে বেশি কিছু হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের সংবিধানের বিদ্যমান সংকটগুলোকে তুলে ধরার মাধ্যমে। গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে স্বৈরতন্ত্রের মধ্যে যাতে ঘুরপাক খেতে না হয় সেই জন্য বাংলাদেশের সংবিধান মেরামতের কথা উচ্চারিত হয়েছে এই বইয়ে। এর পাশাপাশি নতুন নতুন কিছু চিন্তাও এই বইয়ে রয়েছে।
৫. Ridwanul Hoque এবং Rokeya Chowdhury সম্পাদিত A History of the Constitution of Bangladesh: The Founding, Development, and Way Ahead - বইয়ে বাংলাদেশের সংবিধান বিষয়ে কিছু শক্তিশালী পর্যবেক্ষণ হাজির করা হয়েছে। বাংলাদেশের সাংবিধানিক যাত্রা যেসব প্রমিজ নিয়ে শুরু হয়েছিল সেসব যে অধরাই রয়ে গেছে গত পঞ্চাশ বছরে সে কথা সংবিধানের একাধিক বিষয়ের আলোচনায় এসেছে। Abusive constitutionalism এর অনেক নমুনা যে বাংলাদেশে দেখা গিয়েছে সেসব পর্যবেক্ষণও পাওয়া যাবে এখানে। বইটি প্রকাশিত হয়েছে Routledge থেকে।
.
বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিতার দুর্বলতার কথা আমরা বিভিন্ন মুখরোচক উপায়ে শুনি। বুদ্ধিজীবিদের কথা শুনলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না, তারা এখন যা বলছেন তা শুনলে বাংলাদেশ অগ্রসর হবে না - ছফার এমন তীর্যক মন্তব্যের সপক্ষে বহু প্রমাণ হাজির করা যাবে। তবে উপরের বইগুলো থেকে একটা বিপরীত উদাহরণই পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবিতা এবং একাডেমিক গবেষণা একটা বাস্তবতাকে অস্বীকার করতে পারছে না, এবং তা বাংলাদেশের জন্য বহু জরুরি চিন্তা ও আলাপের সূচনা হিসেবে দরকারি; সেই বাস্তবতাটি হচ্ছে - বাংলাদেশের রাষ্ট্র গঠন সংক্রান্ত সংকট এবং সাংবিধানিক সংকট।

[৪ নবেম্বর ২০২৩ তারিখে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছিল।]

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

Wednesday, April 12, 2023

মেমরি

মনে রাখা মাঝে মাঝে খুবই বাজে ব্যাপার।
মানে - মেমরি - প্রশ্নাতীত গৌরবের বিষয় না মোটেই।
যেমন - ধইন্যা পাতা -
আমার ত মনে আসে এর অন্য নাম -
যখনই দেখি এই সোয়াদি পাতা
যখনই ধুইতে যাই বেসিনে
যখনই তারা থাকতে চায়না হাতের মইধ্যে
তারপর কুচি কুচি করি তাদের
আর ছুরির নিচে যেন হঠাৎ চমকায়ে ওঠে মেমরি
আর কথা কয় ধইন্যাপাতা: 'আমার নাম অন্য কিছু...'
আমি তখন কই - মনে থাকা কোন ভাল ব্যাপার না।
মানে - মেমরি - প্রশ্নাতীত অহম না মোটেই।
তারো আগে আগে ভুল করে একবার -
মুগডাল আর চাল - হালকা ভাজা হয়ে যায় বিভিন্ন মশলার ভেতর
তারা যে উৎপাত করে ঘ্রাণে -
আমি বলি এইভাবে ত মুগডালের ঘ্রাণ ছড়ানো উচিত না আর কোনদিন
কেননা এই সুবাস প্রেমের মতন প্রাচীন
তারপর পানি ঢালি, মিশায়ে দেই বরফজমা রঙিন সবজি
তবু ভাজা মুগডালের ঘ্রাণে যেনবা জাতিস্মরের মতন
আমারে ভাসায়ে দেয় পুনর্জন্মের স্মৃতি
আমি তখন কই - এই ইমোশনের বিচিত্র পুনর্জন্ম কোন ভাল ব্যাপার না।
মানে - মেমরি - প্রশ্নাতীত কোন খাবার না মোটেই।
যেহেতু সময় কম মাঝে মাঝে
এবং যেহেতু ইতর-কিংবা-বিশেষ সকলরই আহার প্রয়োজন
আর চিকেন কোন পাখি না, তাই তারা টুকরা টুকরা হয়ে
ইতালিয়ান সিজনিং, গোলমরিচের গুড়া, ম্যায়ো এবং লেবুর রসে জিরায়
তারপর তারা গরম তাওয়ায় কিংবা গ্রিল প্লেটে পোড়া গন্ধ ছড়াইতে থাকে
রোজমেরি - যেনবা মশলার বাইরে তার কাজ মেমরি খোচানো -
সে কেমনে কেমনে যেন আসর করে মাথার ভিতর
আমি কই - এই রোজমেরির আসর কোন ভাল ব্যাপার না।
মানে- রোজ রোজ মেমরি - নিরূপদ্রব কোন মশলা না মোটেই।
ধইন্যা পাতার কসম,
ভাজা মুগডালের কসম,
কসম রোজমেরি এবং তার সখিদের -
আমি জানি মেমরি মাঝে মাঝে খুবই বাজে ব্যাপার।
_
মেমরি/
এপ্রিল ১১, ২০২৩

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

Saturday, April 8, 2023

ফিনিক্স দাঁড়কাক শকুন ও অন্যান্য পাখিরা

ফিনিক্স পাখি নিয়া অনেক বই পুস্তক আছে। প্রাচীন গ্রিক আমল থেকে শুরু করে রোমানদের লাতিন, আরব জাহানের আরবি এবং বাংলার চেয়ে বয়সে ছোট ইংরেজী ভাষায় অনেক বই পুস্তক অনেক কাইজ্জা।

আমাদের বন্ধুবর হজরত Ferdows AL Hasan একদা ফিনিক্স পাখির প্রেমে পড়েছিলেন। জগন্নাথ হলের এক বিতর্কে তিনি ফিনিক্স পাখির পক্ষে বারোয়ারি বিতর্ক করেছিলেন। তারপর থেকে ফিনিক্স পাখির কথা পড়লে ফেরদৌসের কথা মনে পড়ে। ব্রেইন এইভাবে বিভিন্ন বিষয় জোড়া দিয়ে রাখে বলেই আমরা মনে রাখতে পারি।

যাহোক, ফিনিক্স পাখি প্রাচীন মিসরে সূর্য দেবতার আশীর্বাদ। এই পাখি আরব জাহানের উপর দিয়া উড়ে এসে মিসরে মৃত্যুবরণ করতো। তারপর তার ভস্ম হওয়া দেহ থেকে আবার জন্ম নিত নতুন পাখি।

ফিনিক্স পাখি আসলে কেউ দেখেছে কিনা এই নিয়া সন্দেহ আছে। দ্বন্ধ আছে ফিনিক্সের মালিকানা নিয়া। ঐতিহাসিক পি কে হিট্টি বিশ্বাস করতেন ফিনিক্স আরবের পাখি। ইউরোপ আম্রিকা তথা পাশ্চাত্যের আরব আবিষ্কারের যেই গ্রন্থের নাম তিনি দিয়েছেন - হিস্ট্রি অব দ্যা আরবস সেই গ্রন্থ তার বিশ্বাসের সাক্ষী।

ফিনিক্স পাখির সাথে উড়াউড়ি করে নিজের অজ্ঞানতা আবিষ্কার করার পর খানিকটা মোলায়েম দুঃখ হইলো বাঙালের পাখিরাও কি দুর্বল আর ছোট। ঈগল কিংবা বাজ পাখিদের বাঙাল মনে হয়না শিকারের জন্য কোন কালে পোষ মানিয়েছে। মাছ খাওয়ার জন্য দুয়েকটা মাছরাঙা, বক, কিংবা পানকৌড়িকেও ট্রেনিং দেয় নাই।

দাঁড়কাক কিংবা Raven ভুটানের জাতীয় পাখি। এতো বুদ্ধিমান এর সাহসী একটা পাখির সাথে বাঙালির খাতির আরেকটু বেশি হওয়ার দরকার ছিল। শকুন কেন বাঙালীর অভিশাপ আর ঘৃণার শিকার হলো তা বুঝতে গেলে বাঙালী বিচারজ্ঞান নিয়ে সন্দেহ আরো শক্তিশালী হয়। শকুন নামক পাখিটা বাঙালীর কাছ থেকে যে অন্যায্য ‍দুর্নামের শিকার হয়েছে তার প্রায়শ্চিত্য না করলে বাঙালের শিক্ষা পূর্ণ হবে না।

মহাভারতের রামগরুড় বাংলায় উড়েছিল নাকি সংস্কৃত শ্লোকেই কেবল দুলেছিল তা জানি না।

পেঁচাকেও বাঙাল খুব পছন্দ করে না। বাঙালের সাম্প্রদায়িকতা অন্যায়ভাবে পেঁচাকে আক্রমণ করেছে। অল্পবয়সে আমরা ভাইবোনরা পেঁচাকে ভয় পেতাম। বিশেষত রাতে পেঁচার ডাক শুনলে ভয়ে কলিজা কেঁপে উঠতো। অবশ্য এই ভয় সম্ভবত শিখানো হয়েছিল। অথচ পেঁচার ডাকেও আমি ডাহুকের ডাকের মতন আনন্দের দিন পেতে পারতাম! বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে জীবনানন্দ এবং তারপরে পৌরাণিক ইউরোপে পেঁচার আধিপত্য, মহত্ত্ব, জ্ঞান বিজ্ঞান নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেখে এবং ইউটিউবে পেঁচাদের নিঃশব্দ উড়ালে মুগ্ধ হয়ে পেঁচাকে বেশিরকম ভালবেসে ফেলি। এছাড়া হেগেলের কাব্যিক বয়ান: মিনার্ভা দেবীর পেঁচা, ডানা মেলে সূর্য ডোবার পর - শুনতে বড় ভাল লাগে।

বাদ দেই এসব কথা। ফিনিক্স আসলে বাংলার পাখি না। ফিনিক্সের সাথে বাংলার ঐতিহাসিক কিংবা পৌরাণিক কোন সম্পর্কও নাই। বাংলার দাঁড় কাক দরকার। সাহসী, বুদ্ধিমান, উপকারী - দাঁড়কাকের বড় অভাব বাংলায়।

আর বাংলার কবি সাহিত্যিকদের উচিত অন্তত কয়েক শ বছর শকুনের কাছে ক্ষমা চাওয়া। শকুনের মত একটা নিরপরাধ এবং উপকারী পাখির প্রতি তারা যে অজ্ঞতাপ্রসূত ভাষাগত জুলুম করেছে তার জন্য তাদের উচিত ক্ষমা চাওয়া এবং বন্দনা লিখে দায় শোধ করা।

-
মে ২০২০
লালমাটিয়া, ঢাকা
(আমার পুরাতন ফেসবুক আইডিতে প্রকাশিত)


Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

গুরুত্ব

পরীক্ষার খাতায় ‘... এর গুরুত্ব অপরিসীম’ অথবা '... is very important ...' জাতীয় লাইন ছাড়া বেশিরভাগ পরীক্ষার্থীর লেখা বের হয় না। যেমন মহামারী বিষয়ে কোন প্রশ্ন করলে প্রথম বাক্যটি হতে পারে ‘পৃথিবীতে মহামারীর গুরুত্ব অপরিসীম’ (Epidemic is very important in the world).

(আপনারা ভুল ধইরেন না আপাতত; বাঙ্গালী স্টুডেন্টদের world মানে পৃথিবী। Earth চিনানোর ভুগোল শাস্ত্র কিংবা world কে বিশ্ব বানানোর অনুবাদ শাস্ত্র এখনো বিকশিত হয় নাই। পাবলিক মানে সরকারি আর সরকার বিরোধিতা মানে রাষ্ট্রদ্রোহ - এমনসব ভাষিক জটিলতা ভাষাবিজ্ঞানীরা সমাধান করতে না পারলেও হাতিরা পারে। হাতির চারটি পা, আর সমাসের নিয়মে যার হাত আছে সেই হাতি। এইবার বুঝেন, হাতের তলায় পাদপিষ্ট এই ভাষায় সম্ভব। সম্ভব না হলে ননসেন্সও সম্ভব না।)

আপনাদেরকে সার্কাস ছাড়াই হাতি দেখায়ে এইবার ‘হাতি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী’ আলোচনায় ফেরত আনি। এমন বাক্য স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় আমি লিখেছি কিনা দয়া করে তা জানতে চাইবেন না। তবে মাস্টার হিসেবে আমি স্টুডেন্টদের এমন বাক্য না লেখার পরামর্শ দেই। পরীক্ষার খাতায় মাস্টারদের বিরক্ত না করার সাথে নম্বরের কার্যকারন বিষয়ক অনুমেয় সম্পর্কের কারনে স্টুডেন্ট লাইফে মাস্টারের পরামর্শ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

উত্তর লেখা সংক্রান্ত কিংবা মৌখিক বক্তব্যে এই ‘গুরুত্বপূর্ণ’ স্বভাব ত্যাগ করা সহজ কাজ নয়। লোকেরা স্কুল কলেজ ভার্সিটি ত্যাগ করিতে পারে, কর্ম জীবনে অনেকে মাস্টার কিংবা বিভিন্ন প্রকার স্যার মহোদয় হইতে পারে। তবু এই ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বানান এবং উচ্চারণ ছাড়িতে পারে না।

গুরুত্ব বাড়ায়ে তুললে লঘুত্বও তীব্র হয়। আর গুরুত্ব যদি মাপার উপায় না থাকে তবে পাটখড়িও চন্দনকাঠ। সম্ভবত চিন দেশীয় প্রবাদ শুনেছি - মহৎ লোকদের অতিরিক্ত মহৎ করে তুললে সাধারণেরা আরো ছোট হয়ে পড়ে। মনের মধ্যে সংকোচ এবং আরো আরো সংকোচের চাপে দেহের চেয়েও ছোট জীবন নিয়ে এদেশে মানুষেরা দিনাতিপাত করে। জড়ো হতে হতে জীবন এখানে জড় বস্তুর নির্ভরতা ছাড়া আর অবশিষ্ট নাই। ন্যাংটা জীবন ওরফে জীববিজ্ঞানের জীব মাত্র হিসেবের মানুষেরা লঘু জীবনের খামতি মেনে লঘুতর এবং লঘিষ্ট সাধারণ গুনিতকের জীবনে নামিয়াছে।

ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র প্রত্যেকের লঘু গুরুর আলাদা হিসাব আছে।

লঘু-গুরু না মানলে লাঞ্চনার হুশিয়ারি ছোটবেলায় শুনেছি। জীবনে কোনটা লঘু আর কোনটা গুরু তা চিনতে না পারলে সামাজিক যন্ত্রনা অনেক। তবে কোন কোন সমাজে লাঞ্চনা তৈরির ক্ষমতা আর লাঞ্চনা সয়ে যাওয়ার দুর্ভাগ্য লঘু-গুরু নির্ধারক। যতই লাঞ্চিত হবে ততই লঘিষ্ট জীবন; অপরকে যতই লাঞ্চিত করিবে তোমার জীবন ততই গরিষ্ট হয়ে উঠবে। এমনই সামাজিক নিয়মে ভ্যাবাচেকা খাইতে খাইতে এখন আর খাওয়ার জায়গা নাই।

(খাইতে চাই নাই তবুও জীবনে দুইটা চড় আর ধরতে চাই নাই তবু দুইবার দুজনের পা ধরার পর এই সামাজিক শিক্ষা আমার হয়েছে। সামাজিক জীব হিসেবে ‍দুর্বল উপস্থিতি আমি তারপর মেনে নিয়েছি। লঘু-গুরুর সামাজিক বণ্টন আর আমার মূল্যবোধ ও শিক্ষার সাথে মিলে নাই।)

সমাজের কথা বললাম। পরিবারের কথা বলব না। রাষ্ট্রেরটা বলি। রাষ্ট্র তার লঘু গুরু হিসেবের জন্য সংবিধানের ঘোষণা ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ’ মেনে চলতে বাধ্য। রাষ্ট্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তার ক্ষমতার মালিকরাই হবে এমনটাই সংবিধানের বক্তব্য। লঘু-গুরু মাপাতে রাষ্ট্র যদি সংবিধান না মানে তবে বুঝতে হবে রাষ্ট্রের বড় কোন অসুখ বিসুখ আছে।

রাষ্ট্রের যে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স বা অর্ডার অব প্রিসিডেন্স ওরফে পদমানক্রম আছে তা শুধু অফিসারদের অনুষ্ঠানে প্রয়োগযোগ্য। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অফিসারদের কে কাকে সালাম দিবেন আর কে আগে বসবেন সেই গুরুত্ব নির্ধারনে এই পদমানক্রম অনুসরনীয়। পদমানক্রম শুধু পদমানক্রমে উল্লেখিত অফিসারদের পরস্পরের অগ্রাধিকার নির্ধারনে ব্যবহৃত হবে। নন-অফিসিয়াল কম্যুনিটিতে পদমানক্রম কাউকে কোন অগ্রাধিকার দিবে না; বরং এমন কম্যুনিটির রীতি অনুযায়ী তা নির্ধারিত হবে। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স রাষ্ট্রের কাজে নির্বাচিত এবং নিয়োজিতদের গুরুত্ব নির্ধারক। জনগণের সাথে তুলনীয় কোন বিষয় নয়। জনগণের সাথে তুলনা করলে সংবিধান সর্বোচ্চ আইন, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারে না। জনগণের সম্মিলিত ক্ষমতার সাংবিধানিক জিম্মাদার হিসেবেই রাষ্ট্রের কাজে নির্বাচিত এবং নিয়োজিতগণ পদমানক্রম মেনে চলেন।

গুরুত্বে পূর্ণ নয় কারা এমন কোন তালিকা কি কোথাও পাওয়া যায়? লঘুত্বের চাপে আছি।

লঘু-গুরু চিনলাম না এখনো। ফেসবুকের লঘুত্ব জীবনের গুরুত্ব নিয়া টানাটানি করে। আমি এই লঘু ও হালকা পোস্ট লেইখা সময় গুরুত্বের সাথে মশকরা করি।
-

মে ২০২০
/লালমাটিয়া, ঢাকা

(ফেসবুকে প্রকাশিত)

Tuesday, April 4, 2023

বিকল্প

রডের বিকল্প বাঁশ,
বেগুনের বিকল্প কুমড়া,
মাংসের বিকল্প কাঁঠাল,
এভাবে আমরা বহু বিকল্প সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করি...
এসবের পরেও স্মার্ট লোকেরা যখন চ্যালেঞ্জ করে - 'পারলে বিকল্প দেখান'
তখন এক হাজার বছর ভেবে বিনীতভাবে বলি -
মানুষের ইতিহাসে আলীর বিকল্প কোথায় পাব, বলেন?

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

Friday, March 17, 2023

Responsibility of the People or the Civil Society?

In Q&A part of the first plenary session at the the Global Summit on Constitutionalism 2023, a constitutional law scholar (Professor Jashim Ali Chowdhury) commented that there should be a responsibility on the people as well. In Bangladesh, what is going on is a purely dynastic politics and people do not object to that. The last three elections (two actually, as the election of 2008 was not controversial) in Bangladesh were very controversial. Academics, Journalists, and members of the Civil society did not object to these elections.
I am adding here a note on his comment.
Vilifying the people is common among the politicians/ intellectuals. It is important to notice what does Mr. Chowdhury mean by people when he talks about the responsibility of the people. Unlike politicians/ intellectuals, he is very specific in his examples of the people - they are academicians, journalists, and civil society. The term civil society should include the two other groups he added. It is not the people - or the common people - who are usually reduced to unintelligent animals for justifying the abuse of the state powers - rather it is the civil society or the intellectual class that failed to fulfill its responsibility. Mr. Chowdhury’s textbook on constitutional law may provide an ironical resemblance to narratives that contributed to the sin of the civil society. As an academic may explore the constitution from many different perspectives, one might slip in a biased interpretations that align with the partisan narratives that criminalize political opposition and contribute to the democratic backsliding.
However, instrumentalization of criminal justice tools in the hands of the government contributed in silencing the civil society. The infamous Digital Security Act is a very clear example. This Act is one of the weapons that inflicted the civil society whenever they tried to voice their objections. It led to the consequence where the crime of silence has the only defense - gasp. As the saying goes that a gasp is better than silence, did the members of civil society including journalists and academics gasp after the elections of 2014 and 2018?
Instrumentalization of laws had its academic friends among constitutional scholars. It always happens - as Gandhi’s notes on Bhagavad Gita tells us, that evil cannot succeed in their endeavors without the friendship of the good. Good provides moral support for the evil. (And for those who believe that things are beyond good and evil - not everything is beyond good and evil; a lot many things fall within clear baskets. Good and evil is still a functional binary for a lot many things.) However, besides the good sense that the civil society including the academia should bear the responsibility, a better sense can trace a complex sociological factor as contributing in silencing the civil society. It is theorized as ‘culture of fear’ by an author (Ali Riaz). Extremism from the two sources manufactures the culture of fear in the country. Religious extremism has the record of deadly intolerance towards dissent and the party in the power has more deadly and institutionalized process for suppressing the political opposition.
Where no one speaks or objets, the crime of silence reigns. You may call it fear. But call.
March 16, 2023
Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

Monday, March 13, 2023

কার্পে দিয়েম

কার্পে দিয়েম
- হোরেস
অনুবাদ - লোকমান বিন নুর
-
জিগাইস না - আমাগো জাননের ক্ষমতা নাই -
কোন মন্জিল ঠিক করছে খোদাতালা তোর লাইগা, আমার লাইগা;
লুকোন, গণনার চেষ্টা করিসনা ব্যবিলনের জ্যেতিষবিদ্যায়।
কতইনা ভাল যা আছে কপালে তাই আঁকড়ায়া ধরা,
হোক না এই শীত আমাদের শেষ শীত,
যে শীত ভাঙতেছে তুসকান সাগরের ঢেউ পাথুরে পাড়ের মুখে,
কিংবা আসমানের বাপ আমাদেরে যদি দেয় আরো কিছু বাড়তি শীতকাল।
আরেকটু প্রজ্ঞাবান হ, গলায় চালান দে অমৃত রস,
যেহেতু জীবন ছোট খুব, ছেঁটে ফেল লম্বা দীর্ঘ আশা!
এমনকি আমাদের এই আলাপের ফাঁকে কুটনা সময় পালাইতেছে খুব:
আগামীর প্রতি বিশ্বাস যথাসম্ভব কমায়ে রেখে,
আজকের দিনটারে ধর।
(জুলাই ২০১৮)

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

অহম

হৃদয় বিক্রি করো না।
পিশাচের হাড়ির মত মুখের ভেতর -
শাহরগের কাছে
ধারালো ছেনিতে চেঁছে ফেলা
শীতের কান্নাভরা খেজুর গাছের রস
যেমন চুঁইয়ে পড়ে করুন ফোটায় -
তেমন ঝরুক রক্ত তোমার হৃদয় থেকে
অসুর বুদ্ধির ধারালো ছেনিতে ক্ষত
ভীষণ এ মূঢ় ঋতুতে,
তবু হৃদয়ে আপোস মেনো না -
ঝুল ঝুল পরজীবী সরস লতার মত।
সুমিষ্ট রক্তের রসে পিশাচেরা
হৃদয় খেয়ে বাঁচে,
তবু এসব বিপন্ন হৃদয়ের অহংকার ছাড়া
কোন বৃক্ষই মাটিতে দাঁড়ায় না।
হৃদয় আক্রান্ত হয়, পরাজিত;
পরাজয় কখনো কখনো লড়াইয়ের শেষ;
তবু লড়াইহীন বিক্রি বা আপোসে পচে যাওয়া পণ্যকে হৃদয় বলা যায় না।
/অহম
অক্টোবর ১৪, ২০১৭

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

Saturday, March 11, 2023

ঘরকুনো কচ্ছপ

অনেক গল্পেই ইতিহাসের ব্রহ্মদত্ত রাজা হিসেবে হাজির থাকেন, গল্পেও আছেন। আমার সাথে তার সাক্ষাত হয় নাই, তাহলে তার রাজমুকুটে কয়টা হীরামোতিপান্না ঝলঝল করত তা আপনাদের জানাতে পারতাম। এখন গল্প শুরু করা যাক।

_

এককালে ব্রহ্মদত্ত ছিলেন বেনারসের রাজা। আর বোধিসত্ত্ব জন্মেছিলেন গায়ের এক কুমোরের ছেলে হয়ে। তিনি কুমোরের কারবার দেখাশুনা করতেন। আর এক স্ত্রী এবং পরিবারের ভরণপোষণ চালাতেন। 


সেসময় বেনারসের বিরাট নদীর কাছেই একটা বড়সড় বিল ছিল। বর্ষায় পানি বেড়ে গিয়ে নদী আর বিল একাকার হয়ে যেত আর পানি কমলে তারা হয়ে যেত আলাদা। মাছ আর কচ্ছপেরা এমনিতেই জানতো যে কোন বছর বর্ষায় সব ডুবে একাকার হয়ে যাবে আর কখন খড়ায় সব শুকিয়ে যাবে।


যে বছর এই গল্পের, সে বছর বিলের মাছ এবং কচ্ছপেরা জানতো যে ভীষণ খড়ায় বিল শুকিয়ে যাবে; তাই যখন বিল আর নদী জলে একাকার ছিল তখন মাছ আর কচ্ছপেরা বিল সাঁতরে নদীতে চলে গেল। কিন্তু একটা কচ্ছপ ছিল যে নদীতে যায়নি, সে বললো - ‘আমার জন্ম এখানে, এখানেই বড় হয়েছি আমি, আর এখানেই আমার বাপমায়ের ঘরবাড়ি - আমি জায়গা ছেড়ে যেতে পারব না 


অতপর গ্রীষ্মে পানি সব শুকিয়ে গেল। সেই কচ্ছপ একটা গর্ত খুঁড়ে নিজেকে লুকিয়ে রাখলো, যেখানে বোধিসত্ত্ব মাটি নিতে আসতেন। 


হাড়ি পাতিল বানানোর জন্য মাটি সংগ্রহের সময় হলো কুমোরের। বোধিসত্ত্ব আসলেন মাটি নেয়ার জন্য। বড় একটা কোদাল দিয়ে তিনি মাটি খুঁড়লেন। তাঁর কোদালের কোপে কচ্ছপের শক্ত খোলস ভেঙে গেলো, কোদালের সাথে উঠে মাটির দলার মত পড়ে রইল সে। নিদারুণ যন্ত্রণার ভেতর সেই প্রাণী ভাবল - ‘এই আমি মরে যাচ্ছি, কারন আমার ঘরের প্রতি এতটাই আসক্ত ছিলাম যে তা ছাড়তে পারি নাই।তারপর সে এক শোকের গীত গাইলো:


এই মাটিতে জন্ম আমার, ঘরও ছিলো, বড় হলাম ছোট থেকে;

এই মাটি আজ আমার জন্য মরণখেলা আনলো ডেকে।

তোমারে কই,  ভাগ্য অমার, তোমারে কই একটু শোনো -


সুখ যদি পাও যাও সেখানে, হওনা সেথায় অচিন তুমি;

উজল শহর/গহিন বনেও, প্রাজ্ঞরা পায় জন্মভূমি।

যাও সেখানে, জীবন যেথা; ঘরেই কেন মরণ বোনো?


মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত সে বোধিসত্ত্বর কাছে তার শোকের গীত গাইতেই থাকলো। বোধিসত্ত্ব তারে তুলে নিলেন এবং গ্রামের সব লোকরে জড়ো করে নসিহত করলেন: ‘এই কচ্ছপটারে দেখো। যখন অন্য মাছ এবং কচ্ছপরা বড় নদীতে গেল, সে তার ঘরের আরাম ছাইড়া যাইতে পারলো না। সে নিজেরে লুকাইলো আমি যেখান থেকে মাটি আনি সেই মাটির ভিতর। আমি তখন মাটি খুুঁড়তেছিলাম আর আমার বড় কোদাল দিয়া তার খোলস ভাইঙ্গা ফেললাম। একটা বড় মাটির দলা ভাইবা আমি তারে কোদাল দিয়ে টাইনা তুললাম। তখন সে আমারে বললো সে কি করেছিলো। দুই শোলক কবিতায় সে তার করুণ ভাগ্যের কথা বিলাপ করে কইলো আর এই দুনিয়া থেকে বিদায় নিলো।


তোমরা দেখতে পাইতেছো যে সে তার ঘরের প্রতি খুবই আসক্ত ছিল। তোমরা এই কচ্ছপের মত হয়ো না। নিজেরে বুঝায়ো না যে, ‘আমার চোখ আছে, আছে কান, এখনো ঘ্রাণ পাই, পাই স্বাদ, স্পর্শে এখনো বুঝি, আছে এক ছেলে আর মেয়ে এক, আমার সেবা যত্নের জন্য আছে অনেক কাজের লোক - কাজের বেটি, আছে অনেক স্বর্ণ খাটি।গভীর কামনা বাসনায় এইসব আঁকড়ায়ে থাইকো না। সব প্রাণই অস্তিত্বের তিনটা স্তর পার করে।


এভাবেই তিনি বুদ্ধ স্টাইলে ওয়াজ করলেন উপস্থিত জনতারে। তার সেই নসিহত ভূভারতের সর্বত্র ছড়ায়ে পড়লো এবং সাত হাজার বছর ধরে মানুষ মনে রাখলো সে ওয়াজ। জনতা তা মনে রাখলো, দান সদকা করলো, এবং স্বর্গে যাবার আগ পর্যন্ত মানলো সেই নসিহত।

_

ঘরকুনো কচ্ছপ জাতকের গল্প ইংরাজি থেকে অনূদিত; গীতটুকুও 

_

#পাগলা_ডুমুর

_


Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম পরষ্পরকে বিরোধী হিসেবে বয়ানের অন্তত দুইটা ধারা আছে। এই দুই ধারা একে অপরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। একদল মুক্তিযুদ্ধের দখল চায়...