Thursday, October 10, 2024

থেকো আপন ধ্যানেতে মগ্ন


যার যা কাজ, সে তা ঠিকঠাক করলেই ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ভাল থাকে। মানুষের সুখ-শান্তি বাড়ে। জীবনের জটিলতা কমে।


যার যা কাজ, সে যেন তা করে - এই কথা আমার জন্য তাই মোটিভেশনাল। নিজেরে লাইনে রাখার জন্য দরকারি কথা। নিজের কাজ যেন করি।
.

আমার একটা কাজ - আমি নিজেই ঠিক করেছি - চিন্তা করা। তাই এই বিষয়টা নিয়ে একটু চিন্তা করলাম।
.

যার যা কাজ, তা তো করতে হবে, কিন্তু -

কার কাজ কি?

একটু জটিল প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তর যারা সব সময় স্পষ্ট জানেন এবং মনে রাখেন তাদের জন্য জীবন শান্তির। মানে অশান্তি আসলেও আপনি তা সামলে নিতে পারবেন, যদি আপনি জানেন আপনার কাজটা কি।

দুঃখের ব্যাপার, অতিশয় দুঃখের ব্যাপার, অতি অতি অতিশয় দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে আমরা অনেকেই জানিনা আমাদের কাজটা কি!

কিভাবে জানবেন আপনার কাজ কি? বাঙালিরা এ ব্যাপারে খুবই হেল্পফুল। নিজের কাজ অনেকে না জানলেও আরেকজনের কাজ কি তা জানে। যদিও আমরা এটাকে বলি আরেকজনের জীবনে নাক গলানো, কিন্তু আপনি যদি নিজে না জানেন আপনার কাজ কি তাহলে এরকম অন্যের নাক গলানোর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন। অথবা যেচে দেয়া উপদেশ বার্তার মাধ্যমে আপনি আপনার কাজ জানতে পারবেন। তবে প্রজ্ঞাবান মানুষরা সচরাচর এই উপদেশ দেন না। কয়েকজন সেরা শিক্ষকের সাথে কথা বলেছিলাম কিশোর বয়সে। তারা উল্টো জানতে চাইতেন আমি কি চাই, তারপর সেই বিষয়ে বলতেন দরকারি কথা। সেইটাই হওয়া উচিত বলে মনে হয়।
.
কাজ ঠিক করা, বা কাজ থাকা যেমন ভাল, আপনার কাজ না থাকলেও জীবন ভুল হয়ে যায় না, শেষ হয়ে যায় না, নিরানন্দ হয়ে যায় না। কাজ যে থাকতেই হবে এমন কোন অলঙ্ঘনীয় বিধান কার্যকর নাই। জীবনের চাপে অথবা অপরের যাপনের চমকে আমরা হয়তো প্রায়ই দুঃখে পড়ি - কাজ নেই। যদি কাজ প্রয়োজন মনে হয়, আরা কাজ না থাকে - তবে কাজ খোঁজাটাই কাজ। কবি বলেছেন - ‘কাজ চাই, কাজ। ... দালালি থেকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ... ”

যেহেতু আমরা জানিনা আমাদের কাজ কি, তাই বিভিন্ন উৎসে গিয়ে আমরা সেই করনীয় খুঁজি।

বিভিন্ন বিশ্বাস ব্যবস্থা কাজ ঠিক করতে মানুষের গাইড বই হিসেবে সহায়তা করে। নাবালক মানবজাতির গাইড বই দরকার হয়। এই গাইডকে বিপদজনকভাবেও ব্যাখ্যা করেন। এক্ষেত্রে এটুকু উল্লেখ করা প্রয়োজন যে মানুষের জীবন শুধু পারলৌকিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তার ইহলৌকিক জীবন আছে। এমনকি পারলৌকিক জীবন ইহলৌকিক জীবনের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। পরকালসর্বস্ব চিন্তা আর পরকালীন চিন্তাও এক নয়। মানুষের সুখ-শান্তি শুধু পরকালেই পাওয়া যাবে, ইহকালে সুখ-শান্তি সম্ভব নয় - এমন চিন্তা পরকালসর্বস্ব। আর ইহকালে কল্যানকর কাজ, এবং তার মাধ্যমে সুখ শান্তি সম্ভব এমন ইহকালীন চিন্তা পরকাল সংক্রান্ত চিন্তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

মানুষের নিজের জীবনের কাজ ঠিক করার জন্য তার প্রজাতিগত অভিজ্ঞতা আরেক মূল্যবান উৎস। তাই মহামানব মহামানবীদের জীবনের কাছে অনেকেই যাতায়াত করেন। বন্দনা করেন সে যাত্রাকে - ‘মহাজ্ঞানী মহাজন, যে পথে করে গমন, হয়েছেন প্রাতঃস্মরনীয়।/ তাদের সে পথকে করে অনুসরণ, আমরাও হবো বরনীয়।’ তবে প্রাণী হিসেবে আমরা নিজেদের জীবনের কাজ ঠিক করার জন্য আমাদের যারা লালন-পালন করেন - যেমন আব্বা আম্মা - তাদের কাছে যাই বেশি; তাদের দ্বারা প্রভাবিত হই বেশি। মানুষের জ্বিনগত স্বভাব।

তবুও অনেক লোকেই নিজেদের কাজ ঠিক করতে পারে না। মানুষ যে কোন কিছু করতে পারে, কিন্তু সব কিছু পারে না। তাই তাকে বাছাই করতে হয়। কাজ বাছাই করা তাই জরুরি।
.

যার যা কাজ তা ঠিকমত করলে সমাজের সুখ যে বৃদ্ধি পায় এ কথা আধুনিক দুনিয়ায় ভালমতন বুঝেছেন এবং বুঝিয়েছেন অ্যাডাম স্মিথ। ডিভিশন অব লেবার নামক থিওররি কাজের দুনিয়ায় এখন প্রধান এক নিয়ম। সেই নিয়ম যে কেমন অ্যাবসার্ড এবং ভায়োলেন্ট হয়ে উঠে তা এসেছে কার্ল মার্কসের বড় বইয়ে। শুধু মজুরি প্রাপ্তি ছাড়া কাজের ভেতর আর কোন অর্থময়তা থাকে না - এমনই রিডাকশিও অ্যাড অ্যাসুর্ডুম টাইপের হাস্যকর বাস্তবতা তৈরি হয় অ্যাডাম স্মিথের ভাগাভাগি করা কাজের ফ্যাক্টরিতে।

আমরা সালমান এফ রহমান আর একজন গোয়েন্দা প্রধানের আলাপের মধ্যে এ বিষয়টা বুঝতে পারি। যেহেতু রাষ্ট্রের কাজের ভাগাভাগি আছে, গোয়েন্দাদের যা কাজ তার কিছুটা বাইরে (!) না গেলে তার সিকিউরিটি চেক করার কাজটি অর্থহীন এবং অ্যাবসার্ড হয়ে পড়তো। আর কাজের ভাগাভাগির সেই অ(অসৎ)সুবিধাই এনজয় করতে চেয়েছিলেন জনাব রহমান।

ভায়োলেন্সটাকে বলা যায় অ্যালিয়েনেশন। শ্রমিক থেকে শ্রমকে বিচ্ছিন্ন এক পণ্য আকারে হাজির করে এই কাজের ভাগাভাগি। দাস শ্রমে দাসকে যতটা তার শ্রমকে যতটা বিচ্ছিন্ন করা যায়, তার চেয়ে বেশি আলাদা করা যায় সম্মতিনির্ভর শ্রম ব্যবস্থায়। মানুষ আর মেশিন সমান সমান হয় প্রথমে, সেইটা হইলেই মানুষের চেয়ে ইফিসিয়েন্ট এবং বেশি শ্রমের মেশিনের মাধ্যমে মানুষকে কর্ম থেকে উৎখাত করা সম্ভব হয়। সেই অল্পবুঝা গভীর আলাপ আর বাড়ানোর ক্ষমতা আমার নাই।

কাজের শ্রেণিবিভাগকে নাকচ করা এক নান্দনিক ইউটোপিয়া হচ্ছে সকালে মিস্তিরি, বিকালে জেলে, সন্ধ্যায় একজন গায়ক হইতে পারার মত অর্থময়, অবিচ্ছিন্ন, এক কাজের মানুষের জীবন। মানুষের সেই সুখের সম্ভাবনা রয়েছে। মানব প্রজাতির অনেকেই তা কিছু কিছু ভোগ করেছেন। এখন যারা তা পারেন, তা হাজির হয় অল্প কিছু লোকের লাক্সারি হিসেবে। অথচ মানবজাতির সকলেরই জীবনের এই আনন্দময় কর্মময় এবং অর্থপূর্ণ জীবনের দর্শন বা অর্থনীতি এক নম্বরে আসার কথা।

যতদিনে পৃথিবীটা সেই স্বপ্নের দেশ না হচ্ছে ততদিন সুখ শান্তির এক টুকরা নিজের জন্য আদায় করতে হয়তো কোন একটা ভোকেশন বা প্রফেশন ঠিক করা দরকার। যে তা ঠিক করলো, সে যাতে সমাজের আর দশের সাথে মিলে দশের কাজে বিঘ্ন না ঘটায়ে কর্ম করিয়া বাঁচতে পারে তার নিশ্চয়তা রাষ্ট্রীয় জীবনের খুটা।
.
এইটার আরো অ্যাডভান্স দিক হচ্ছে স্পেশালাইজেশন।
.

জীবনের প্রবাহমান স্রোতে কত উথাল-পাতাল ঢেউ থাকবে। তবে নিজের ভেলা বেয়েই যাইতে হবে। আমাদের সময়ের একজন বড় কবি সায়ান তাই বলছেন, মাঝে মাঝে এমন হবে -
”হয়তো তোমার জন্যে এটা সু-সংবাদের লগ্ন
রেখো নিজের দু কান বন্ধ থেকো আপন ধ্যানেতে মগ্ন
এটা নতুন কিছুই নয়তো এ যে সকাল বিকাল ঘটছে
কতো সোনা দিয়ে বাঁধা ঝকঝকে নাম তাতেও তো জং ধরছে”
.
নিজের দুকান বন্ধ রেখে আপন ধ্যানেতে মগ্ন থাকার উপদেশ তিনি দিয়েছেন। তবে আপন ধ্যানে মগ্ন থাকার রাষ্ট্রীয় আয়োজন যেহেতু এখনো অসম্পূর্ণ তাই মাঝে মাঝে চোখ-কান খুলে আমাদের মিছিলে নামতে হয়। আমরা নামি। মিছিলের ভিতর দিয়ে বদলে যাওয়া মানুষ হয়ে ঘরে ফিরি, হাসপাতালে কাতরাই, কবরে ঘুমাই।
.
(জীবন যদি অন্য দিকে নিয়ে যায়, হয়তো যাব; মানুষের ঠিক করার বাইরেও জীবন আছে।) মাঝে মাঝে মনে হতে পারে খুবই ফ্রাজাইল, আনবিয়ারেবল মিনিংলেসনেস অব বিয়িং তথা অর্থহীনতার চতুর আমন্ত্রণও আসতে পারে, বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে শ্রম এবং জীবন...

তবু কাজ ঠিক করো
‘থেকো আপন ধ্যানেতে মগ্ন’
..


Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

Friday, September 20, 2024

আবু বকর থেকে তোফাজ্জল ও বাংলাদেশ ২.০

১.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট থাকার সময়ে আমাদের পাশের হল - এফ রহমান - এর আবু বকর নামে এক স্টুডেন্ট নিহত হন। ছাত্রলীগের দুইপক্ষের মারামারিতে গুলির আঘাতে নিহত হন আবুবকর। তখন শুনেছি গুলি লেগেছিল তার মাথায়। প্রায় সাত বছর পর জানা যায় আবু বকরকে কেউ খুন করেনি। (প্রথম আলো ২৬/০১/২০১৮)।
নক্ষত্রের দোষেই জগতে বহু ঘটনা ঘটে!
ছাত্রলীগের ১০ নেতাকর্মী সবাই খালাস পেয়েছেন সেই মামলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এতো এতো গৌরবের অগোচরে মামলার আপিলের তারিখও নাকি পার হয়ে গিয়েছে। তারো কয়েকবছর পর একটি উপন্যাস হয়েছে, ‘আমি আবু বকর’ নামে, পড়ি নাই, আইনের অধ্যাপকদের এ বিষয়ে গবেষণা হলে পড়তাম!
তবে আবু বকরের মৃত্যুর মাস খানেক পর তার ফাইনাল ইয়ারের রেজাল্টে তিনি প্রথম হন। রেজাল্টের খবর পেয়ে আবু বকরের মা রাবেয়া খাতুন বলেছিলেন, ‘আমার নির্দোষ বাবারে যারা হত্যা করল, তাগো বিচার হইলো না! এইডা ক্যামন দেশ!’
২.
২০১৩ সালে আমার একজন বন্ধুকে কনভোকেশনের আগের দিন মারধোর করার পর হলের ছাদ থেকে ফেলে দিতে চেয়েছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হলের একজন কর্মচারী সেখানে তার জীবনের উছিলা হয়ে হাজির না হলে ভয়ংকর কিছু ঘটতো। যা ঘটেছে তাও কম ভয়ংকর নয়।
একই সময়ে একরাতে একজনকে মেরে চোয়াল ফাটিয়ে দিয়েছিল আমাদের সেইম ফ্লোরের একজনকে। যদিও আমি নিজে ভিক্টিম ছিলাম না, কিন্তু সেই ভয়ংকর স্মৃতি (ট্রমা মে বি) থেকে বের হতে আমার প্রায় ৪ বছর লেগেছে।
৩.
আমরা বের হওয়ার দুই/তিন বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খুবই মর্মান্তিক লেগেছিল হাফিজুর নামে একজনের মৃত্যুর খবর শুনে। হাফিজুর হলে উঠেছিলেন ছাত্রলীগের ‘বড় ভাই’দের মাধ্যমে। শীতের রাতে বারান্দায় থাকতে হতো তার। নিউমোনিয়া ও টাইফয়েড আক্রান্ত হয়ে মারা যান হাফিজুর।
কেউ তো দায়ী না, সেই মৃত্যুর জন্য!
নক্ষত্রেরই দোষ!
৪.
চোর সন্দেহে ফজলুল হক হলে পিটিয়ে মেরে ফেলায় হয় তোফাজ্জল নামের এক ব্যক্তিকে। আপনারা সবাই জানেন এ ঘটনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মামলা করেছে। এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আশা করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সকলের জন্য নিরাপদ হবে; বিশ্ববিদ্যালয় সেই সংস্কার সত্যিই করতে পারবে।
৫.
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে প্রায় ৮৭৫ জন নিহত হয়েছেন। হাজারের বেশি আহত। চোখ হারিয়েছেন অনেকে। মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন এমন লোকও অনেক।
এসব অপরাধ যারা করেছেন তাদের বিচারও হবে বাংলাদেশে।
-
৬.
এমন মৃত্যু, প্রাণের অপচয়, অনিরাপদ জীবন অতিক্রম করতে পারলেই তা বাংলাদেশ ২.০; তার আগে নয়।
-
মহানগর
১৯/৯/২০২৪
Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

Thursday, September 19, 2024

মাইর নিষিদ্ধ


একজন মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত অপরাধীকেও আঘাত করার অধিকার কারো নাই।
~
এ কথা অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। কিন্তু এইটাই আমাদের রাষ্ট্রীয় জীবনের একটি মূলনীতি। আমরা কেউ কাউকে মারবো না।
কেউ যত বড় অপরাধ করুক না কেন তাকে মারা যাবে না। তাকে টর্চার করার অধিকার কারো নাই। পুলিশের নাই, আদালতের নাই, জেলখানারও নাই। প্রমাণিত চোর, ডাকাত এমনকি খুনিকেও মাইর দেয়ার অধিকার নাই।
আঘাত করা অপরাধ। আঘাতের ধরন অনুযায়ী তা ভিন্ন মাত্রার অপরাধ। আঘাত করে মেরে ফেলা আরো গুরুতর অপরাধ।
আরো স্পষ্ট করছি। তিনটা ক্ষেত্রে মাইরের উপক্রম বা ঘটনা ঘটতে পারে। (যদিও আরো অনেক অপরাধের সাথেই এ ব্যাখ্যা প্রযোজ্য হবে।)
১. অভিযুক্ত বা আসামি
কারো বিরুদ্ধে কোন অপরাধের অভিযোগ যদি থাকে তবুও তাকে মাইর দেয়া যাবে না। অপরাধের তথ্য জানলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা যেতে পারে, কিন্তু হামলা নয়। তাকে গ্রেফতার করে আইন শৃংখ্যলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে দিতে হবে, আঘাত করা যাবে না।
একজন আসামিকে আইনশৃংখ্যলাবাহিনীও মারতে পারবেন না। কোন সাক্ষ্য প্রমাণ বের করার জন্যও না। টর্চার নিষিদ্ধ। বাংলাদেশে আইন শৃংখ্যলা বাহিনী কর্তৃক বিভিন্ন টর্চারের খবর আপনারা এতদিন শুনেছেন,দেখেছেন, এখনো মাঝে মাঝে দেখেন - এসব টর্চার - মাইর, হত্যা - তখনো বে-আইনি ছিল, এখনো বেআইনি। যত রিমান্ডে টর্চারের কথা শুনেছেন, তা যে কোন ভয়ংকর আসামির ক্ষেত্রেই হোক না কেন, তা বেআইনি। সংশ্লিষ্ট আইন শৃংখ্যলা রক্ষাকারী সদস্য(গণ) বেআইনি কাজ করেছেন, অপরাধ করেছেন।
কোন নাগরিকের কাউকে আঘাত করার অধিকার তো নাই, এমনকি কোন রাষ্ট্রীয় বাহিনীরও পিটানোর বা মাইর দেয়ার কোন অধিকার নাই। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এসব কাজ অপরাধ।
২. প্রমাণিত অপরাধের শাস্তি
অনেকের মনে হতে পারে শাস্তি হিসেবে মাইর দেয়া আইন সম্মত। কিন্তু বাংলাদেশে শাস্তি হিসেবেও কাউকে টর্চার করা যাবে না; আঘাত করা শাস্তি হিসেবেও আইনসম্মত নয়। বাংলাদেশে বৈধ শাস্তি হচ্ছে কারাদণ্ড, জরিমানা, আর মৃত্যুদণ্ড। বেত্রাঘাত কিংবা কোন ধরনের শারীরিক আঘাত বাংলাদেশে বৈধ শাস্তি নয়।
সশ্রম কারাদণ্ডও টর্চার বা শারীরিক আঘাত নয়।
(মৃত্যুদণ্ড শাস্তি হিসেবে থাকলেও অনেকেই মনে করেন, এ ধরনের শাস্তি থাকা উচিত নয়।)
শাস্তি হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও মাইর নিষিদ্ধ।
৩. আত্মরক্ষা
তবে মাইর একটা অবস্থায় বৈধ হতে পারে। তা হচ্ছে আত্মরক্ষার প্রয়োজনে। সেইটা তখন আর মাইর থাকে না। হয়ে যায় মারামারি। একপক্ষ মারলে তা মাইর, আর পরস্পর মাইর দিলে তা মারামারি। একজন শুরু করলে অন্যজন নিজেরে রক্ষার জন্য মাইর দিতে পারে।
আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে আইনের নির্দিষ্ট গ্রাউন্ড রয়েছে। তা কতটুকু বিস্তৃত হবে, তাও বলা আছে আইনে।
এছাড়া আইন-শৃংখ্যলা বাহিনীর কিছু কিছু ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগের অনুমতি রয়েছে। কিন্তু তাও আইনের বাইরে গিয়ে বল প্রয়োগের অনুমতি নেই। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমরা বেআইনি বলপ্রয়োগের ঘটনা দেখেছি।
-
বাংলাদেশের একাধিক আইন (যেমন ৭২ এর সংবিধান, ১৮৬০ এর দণ্ডবিধি, ২০১৩ সালের নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন) এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার দলিলে (যেমন UN CAT) অনুযায়ী নির্যাতন বা মাইর বা টর্চার নিষিদ্ধ।
-
রাষ্ট্র মানে আমাদের যৌথ জীবন। রাষ্ট্রীয় জীবনের মূলনীতি হচ্ছে নাগরিকরা অপরাধের বিচারের জন্য আদালতে যাবে। নিজেরা মারামারি করবে না। একজন আইন লঙ্ঘন করলে তাকে মাইর দিবে না, কিন্তু আদালতের মাধ্যমে তার বিচার নিশ্চিত করতে।
-
এনএসইউ
১৯/০৯/২০২৪l rea
Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

Saturday, August 31, 2024

Give us some dignity, please

Give us some dignity, please.
যারা বাংলাদেশের জুলাই গণঅভ্যুত্থান-এর লেজিটিমেসিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান তাদের শুরুর দিকের একটি বক্তব্য ছিল যে এটি পাকিস্তানের আইএসআই-এর কাজ। ভার/তীয় এক মিডিয়া (ডেইলি স্টার সম্পাদক জনাব) মাহফুজ আনামকে এই প্রশ্নটি করেছিলেন। মাহফুজ আনাম খুব সুন্দর উত্তর দিয়েছেন। তার উত্তর হুবহু কোট করতে পারছি না। তবে আমি শুধু একটা ইংরেজি বাক্যাংশ হুবহু রেখে কাছাকাছি রিপ্রডিউস করছি।
তিনি বললেন - দেখেন আমাদের প্রায় ১৭০ মিলিয়ন মানুষের দেশ। এখানে প্রায় ৩০ মিলিয়ন সাইজের একটা মিডল ক্লাস রয়েছে। আমাদেরকে অন্তত এই মর্যাদাটুকু দেন যে (‘Give us some dignity’) আমরা একটা স্বৈরাচারি ব্যবস্থাকে সরিয়ে দিয়েছি। (ইংরেজি বাক্যাংশ ছাড়া বাকি কথায় – যেমন সংখ্যাগুলো – ভিন্ন হতে পারে।)
এই শব্দগুলো কনভিন্সিং একটা পয়েন্ট তৈরি করে। এইটা মূলত এজেন্সির প্রশ্ন। মানুষের কর্তা শক্তির প্রশ্ন। অনেকেই তখন আইএসআই এর সম্পৃক্ততা অনুমান করেছেন, এখন আবার কেউ কেউ মার্কি/ন যুক্ত/রাষ্ট্রকে সব ক্রেডিট দিচ্ছেন। বিষয়টা হচ্ছে একাধিক স্টেক হোল্ডারের ইন্টারেস্ট ওভারলেপ করতে পারে। যেমন ১৯৭১ সালে ভার/তের চাওয়ার সাথে বাংলাদেশের জনগণের চাওয়া মিলে গিয়েছিল। ভার/ত চেয়েছিল একটি দুর্বল পাকি/স্তান আর বাংলাদেশের মানুষ চেয়েছিল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র; একই সময়ে পাকি/স্তান চেয়েছিল লাখ লাখ শরনার্থীর চাপে বিপর্যস্ত এক ভারত। এছাড়া আরো বিভিন্ন রাষ্ট্রের চাওয়া – বিভিন্ন পক্ষে – মিলে গিয়েছিল।
এখন ইন্ডি/য়ান এমন ন্যারেটিব রয়েছে অথবা পাকি/স্তানেরও এমন ন্যারেটিব রয়েছে যেখানে আসলে বাংলাদেশের জনগণের আত্ম-নিয়ন্ত্রণের অধিকার চাওয়ার মত যে ডিগনিটি তা ডিনাই করা হয়। যেনবা ইন্ডি/য়ার কারনেই বাংলাদেশের জনগণ তা চেয়েছিল এমন একটা বয়ান বাংলাদেশেও অনেকে ভ্যালিডেইট এবং সাবস্ক্রাইব করেন। কি অবমাননাকর!
বাংলাদেশের জনগণ যে নিজেরা স্বাধীনতা চাইতে পারে তা অস্বীকার করা হয়। একটা ঘটনা শেয়ার করি।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মার্কি/ন যুক্ত/রাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যের মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করতেন একজন বাংলাদেশি যুবক। ২৫ মার্চে লাঞ্চের সময় বাসায় ফিরে রেডিও শুনতে শুনতে কাপড় চেইঞ্জ করছিলেন। তখন শুনলেন পাকি/স্তান সরকার রাজনৈতিক বিরোধীদের থামানোর জন্য আর্মি মুভ করিয়েছে। কাপড় আর চেইঞ্জ করলেন না। আরেক বাঙালির সাথে আলাপ করে প্রায় ৫০ মাইল দূরে ন্যাশভিলে তার বাসায় গেলেন। কাছাকাছি তখনকার পূর্ব পাকি/স্তানের ছয়জন বাঙালি জড়ো হলেন সে বাসায়। কি করা উচিত সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য তারা সব সোর্স থেকে খবর নিলেন। বিষয়টা স্পষ্ট ছিল। পাকি/স্তান আর্মি বাঙালিদের চিরতরে শেষ করে দিতে চেয়েছে। তাদের একজন – জামাত ঘেষা – তিনি জানালেন অপেক্ষা করতে, কারন এখনো বিস্তারিত জানা যাচ্ছে না কি হয়েছে।
মিডল টেনেসির সেই মাস্টার বিষয়টা আর নিতে পারলেন না। বললেন ’আমাদের প্রয়োজনীয় সব ডিটেইলসই আমাদের কাছে আছে। বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। এখন আমাদের ডিসিশন নিতে হবে যে আমরা নিজেদেরকে এই নতুন রাষ্ট্রের নাগরিক মনে করি কিনা। সবাই তার নিজের চয়েস ঠিক করার হকদার। আমি আমার চয়েস জানাচ্ছি। আমার চয়েস হচ্ছে বাংলাদেশ।’
তারপর তারা সবাই বাংলাদেশকে তাদের চয়েস হিসেবে ঠিক করলেন। ’বাংলাদেশ সিটিজেন’স কমিটি’ গঠন করলেন। তিনটা সিদ্ধান্ত নিলেন। ১. নিউজ-পেপার টিভিতে বাংলাদেশের পক্ষে প্রচারণা করবেন/ জনমত তৈরি করবেন; ২. প্রত্যেকে তৎক্ষণাৎ ১০০০ (এক হাজার) ডলার করে দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যু/দ্ধের জন্য ফান্ড তৈরি করলেন; ৩. প্রত্যেকে দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত বেতনের ১০ পার্সেন্ট এই ফান্ডে দিবেন।
সেই তরুণদের সেদিনকার ডিসিশনকে কেউ যদি মনে করে যে ইন্ডি/য়ার ষড়যন্ত্রে করেছে, তাহলে অনেক বিষয়ের মধ্যে একটা ব্যাপার ঘটে যে তাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাকে অস্বীকার করা হয়। তাদের ডিগনিটি বা মর্যাদাকে অস্বীকার করা হয়। তাদের এজেন্সিকে নাকচ করা হয়।
একইভাবে অনেক কিশোর-তরুণ এবার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। তাদের অভিভাবকরা যোগ দিয়েছেন। সকল শ্রেণী পেশার মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। এই সকলের সিদ্ধান্তকে শুধু আইএস/আই বা সি/আইএ-র ষঢ়যন্ত্র বললে কিংবা বিএনপি-জামাতের চক্রান্ত বললে তাদের হিউম্যান ডিগনিটিকে অস্বীকার করা হয়। সরকার পতনের মধ্যে অনেক দল বা রাষ্ট্রের স্বার্থের সম্মিলন ঘটতে পারে, সেটা অস্বাভাবিক নয়। তবে জনগণের চয়েস এবং এজেন্সিকে অস্বীকার করাটা তাদের জন্য অমর্যাদার। তাতে তাদের ডিগনিটি অস্বীকার করা হয়। এরকম কুফরি না করে, Give us some dignity, please.
(পুনশ্চঃ ১. – জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামি লিগের এজেন্সিকে ভার/তের আড়ালে ঢেকে দেয়াও তার এজেন্সিকে খাটো করে দেখা। এসব বিষয়ে প্রথমেই এজেন্সি স্বীকার করে, পরবর্তীতে অন্য কারো ভূমিকা খোঁজ করা যেতে পারে।
পুনশ্চঃ ২. – মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটির সেই তরুণ মাস্টার ছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।)
_
রেফারেন্স –
১. মাহফুজ আনামের ইন্টারভিউর লিংক হারায়ে ফেলছি। ভিডিও ছিল। কেউ পাইলে কমেন্টে শেয়ার দিয়েন।
২. Banker to the Poor. Muhammad Yunus with Alan Jolis. UPL 2022.

(১২ অগাস্ট ২০২৪ ফেসবুকে প্রকাশিত।)

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

শোক

হাসপাতালের মর্গে অনেক বেনামি শোক জমাট বেধে আছে;
পেট কেটে পাথর দিয়ে সমুদ্রে ডুবিয়ে দেয়া ইলিয়াস কিংবা আলী শোকে চুপচাপ সমুদ্র হয়ে আছে;
গুম গুম ঘুম-শোকে আরো যারা রাষ্ট্রের জরুরি অফিসের আশপাশে ছবি হয়ে স্বজনের হাত ধরে আসে - তাদের নিথর শোকে আসমান জমিয়ে রাখে কালো মেঘ;
শোক স্বাধীনতা পেলে তারা একদিন সকলেই আমাদের কপটতা ভাসিয়ে নিয়ে যাবে
/শোক
১৫ অগাস্ট ২০২৪

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

রিকশা - প্যাডেল ও মোটর


প্যাডেল রিকশা মোটর রিকশার সাথে কম্পিটিশনে হারায়ে যাবে। এইটা কঠিন বাস্তবতা। আগে মোটর রিকশা ঢাকার কিছু জায়গায় ঢুকতে পারতোনা। নিষিদ্ধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল।
এই নিষিদ্ধকরণের ক্ষেত্রে ইঞ্জিন রিক্সার কিছু রিস্কের কথা বলা হয়ে থাকে। যেমন এ রিকশার ডিজাইনের সাথে গতির সামঞ্জস্য নেই। সামঞ্জস্যহীন গতির কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি থাকে। ডিজাইন এবং গতির সামঞ্জস্যতা না থাকার কারণে অনেকে এ ধরনের রিক্সায় চড়তে ভয় পান; সে হিসেবে এগুলো অনেকটা যাত্রীবান্ধব নয়। তাছাড়া অন্য যানবাহনের চালকরা এসব রিকশার গতি প্রেডিক্ট করতে পারে না। দেখতে রিকশা, কিন্তু স্পিড মোটরের। অন্যান্য মোটরযানের মত ইন্ডিকেটর নেই। এতে করে অন্য যানবাহনের জন্যেও চলাচলের ঝুঁকি তৈরি হয়।
যদিও এসব বিষয়ে বিশদ তথ্য প্রমাণ ভিত্তিক কোন গবেষণা প্রতিবেদন সম্ভবত নেই।
তবে মোটর রিকশা নিষেধের সমালোচনায় একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। যে প্যাডেল রিক্সা একটি অমানবিক যানবাহন। একজন লোক শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে আরো এক বা একাধিক লোককে টেনে নিয়ে যাচ্ছে - বিষয়টি এক ধরনের নিষ্ঠুর এবং অমর্যাদাকর শ্রম ব্যবস্থা। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে অনেকে ইঞ্জিন রিক্সার সমর্থন করেছেন। এমনকি সব ধরনের রিক্সায় কিভাবে ইঞ্জিন যুক্ত করা যায় বা ডিজাইন কিভাবে চেঞ্জ করা যায় সেই প্রস্তাব করেছেন অনেক সংবেদনশীল মানুষ। এই এমপ্যাথি বা সংবেদনশীলতা এখনো আমাদের সকল শ্রম ব্যবস্থায় প্রধান হয়ে ওঠেনি।
বর্তমানে ঢাকা শহরের বাইরে সমগ্র বাংলাদেশে প্যাডেল চালিত রিক্সা নেই। অর্থাৎ ঢাকার বাইরে সব রিকশাই মোটর রিক্সা বা ইঞ্জিন রিক্সা। এবং অনেক এলাকায় সেই রিকশাগুলোর ডিজাইন খুব মজবুত। মোটরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ রিক্সার বডির ডিজাইন। গুগলে সার্চ দিলেই রাজশাহী কিংবা মুন্সীগঞ্জ এলাকার রিকশার ছবি দেখলে এটা বোঝা যাবে।
তবে ঢাকা শহরে প্যাডেল চালিত রিক্সা এখনো রয়েছে। প্যাডেল চালিত রিক্সাকে ঢাকা তার মধ্যবিত্তের গৌরব হিসেবে এবং ঢাকার একটি সিগনেচার হিসেবে রেখে দিয়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় তাই শুধু প্যাডেল চালিত রিকশা চলছে এবং মটর চালিত রিক্সা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ইঞ্জিন চালিত রিক্সা নিষিদ্ধের সমালোচনায় শ্রমের নিষ্ঠুর এবং অমার্যদাকর দিকটি আসলেও ইঞ্জিন চালিত রিক্সার সাথে প্যাডেল চালিত রিক্সার যে প্রতিযোগিতা তা অনুপস্থিত থেকে গিয়েছে।
৫ ই আগস্টের পর থেকে ঢাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে যে শিথিলতা বা ব্যবস্থাপনার ঘাটতি দেখা দিয়েছে সে সুযোগে ঢাকা শহরে ইঞ্জিন চালিত রিক্সা সব জায়গায় চলছে। এমনকি যেসব রাস্তায় কোন ধরনের রিক্সা চলাচল নিষিদ্ধ সেসব রাস্তায়ও ইঞ্জিন চালিত রিক্সা চলছে।
ভাড়ার ক্ষেত্রে ইঞ্জিন চালিত রিক্সা তুলনামূলক সস্তা হওয়ায় প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন প্যাডেল চালিত রিকশা চালকগন। রিক্সার বাজারে এই প্রতিযোগিতা প্যাডেল চালিত রিক্সা চালকদের জন্য আকস্মিক ছিল।
বাজারের আকস্মিক পরিবর্তন তাদের জীবিকার জন্য বিপদজনক। কাজেই তাদের দাবি দাওয়া মনোযোগ দিয়ে শোনা প্রয়োজন। এবং যতক্ষণ পর্যন্ত সঠিকভাবে তাদেরকে পুনর্বাসন করা না যায় ততক্ষণ পর্যন্ত ইঞ্জিনের রিকশাকে পূর্ব ঘোষিত নিষিদ্ধ এলাকায় চলতে দেয়া যাবেনা।
ঢাকা শহরে রিক্সার মালিকানা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রিক্সা চালকদের নেই। রিকশাচালকরা অনেক বৈষম্যের শিকার হন। যার ফলাফল শেষ পর্যন্ত ভোগ করতে হয় যাত্রীদেরকে; বেশি ভাড়া গুনতে হয়। অনেক চড়া দামে রিক্সার নাম্বার প্লেট সংগ্রহ করা, বিভিন্ন স্থানে চাঁদা দেওয়া, অতিরিক্ত পরিমাণে দৈনিক জমা তথ্য রিক্সার ভাড়া দেওয়া - এসব তার কিছু উদাহরণ।
দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে প্যাডেল রিক্সা বিলুপ্ত করতে হবে। রিক্সা একটি ভাসমান অর্থনীতি হওয়ার কারণে জটিলতা কম হওয়ার কথা। বিভিন্ন রকমের রিক্সা চালক আছেন। যেমন কেউ কেউ সিজনাল। তবে সিজনাল হোক আর নিয়মিত হোক, পেশাগত পুনর্বাসন না করে, কিংবা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে এবং যথাযথ ক্ষতিপূরণ না দিয়ে প্যাডেল রিক্সা বিলুপ্ত করা যাবে না।
আর দীর্ঘমেয়াদে রিকশা প্রতিস্থাপনে মোটর রিকশার কিছু নির্দিষ্ট ডিজাইন ঠিক করে দিতে হবে কিংবা ডিজাইনের ক্ষেত্রে কিছু মানদন্ড নির্ধারণ করতে হবে। নয়তো ইঞ্জিনের রিকশা আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ থেকে যাবে। বলার অপেক্ষা রাখে না ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় লেন নির্ধারণ করে দেওয়া সমাধানের অংশ।
বর্তমানে যে আকস্মিক প্রতিযোগিতার মধ্যে প্যাডেল রিকশার চালকরা পড়েছেন সে বিষয়টি সমাধান করতে হবে। তাৎক্ষণিক সমাধান হচ্ছে ৫ ই আগস্ট এর আগে যেসব এলাকায় ইঞ্জিনের রিক্সা চলাচল নিষিদ্ধ ছিল সেসব এলাকায় ইঞ্জিনের রিক্সা চলাচল নিষিদ্ধ রাখা।
-
মহানগর
২৬ অগাস্ট ২০২৪

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

Friday, August 23, 2024

ধারাবাহিকতা, গঠন, ও পুনর্গঠন

১.
বাংলাদেশে সাংবিধানিকতাবাদ ব্যর্থ হয়েছে। সেই ব্যর্থতা ওভারকাম করার জন্য ১৯৯০ এর constitutional moment বা রাষ্ট্র গঠনের মুহূর্ত ভুলভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। নতুন গঠনতন্ত্র রচনা না করে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা নামক আইডিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। এতে রাষ্ট্রের constitutional crisis কে শুধু ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রশ্নে সঙ্কোচন করার মাধ্যমে বিষয়টিকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একই চিন্তা পরবর্তীতে সংবিধানে একটি অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তথা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংযুক্ত করাকে সমাধান হিসেবে দেখে। মূলতঃ constitutional crisis মোকাবেলার ক্ষেত্রে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা একটি ভুল আইডিয়া। ন্যূনতম ব্যর্থ আইডিয়া।
একইসাথে আশার এবং দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হচ্ছে আমরা আরেকটি constitutional moment পার করছি। জুলাই গণঅভ্যুত্থান এখনো আমাদেরকে সঠিক রাস্তায় নিয়ে যেতে পারে। সেই সুযোগ তৈরি হয়েছে।অর্থ্যাৎ আমরা constitutional design ঠিক করার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় জীবনকে পুনর্গঠন করতে পারি। এই মুহর্তকে কাজে লাগানোর জন্য এটাই আমাদের সবচে আশার কথা। আর দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হচ্ছে এ ধরনের পরিবর্তনের বিষয়ে কনভিন্সড হলেও অনেকের মধ্যে inertia থাকে। তা ছাড়া অধিকাংশ বাংলাদেশি লিগাল স্কলার constitutional continuityকে ক্রিটিক্যালি দেখেন না, এমনকি ইভালুয়েট করার আগ্রহ দেখান না। তাদের বুঝা উচিত যে, তাদের চিন্তার কমফোর্ট বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অসাধারণ মুহূর্তকে ধ্বংস করে দিতে পারে। আবার তাদের চিন্তার সাহস বাংলাদেশকে তার সকল সম্ভাবনাসহ বিকশিত হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে।
আমাদের কিশোর তরুণদের সক্রিফাইসকে ঠিক চ্যানেলে চালান না করলে জানবেন আপনাদের ভুলেই ভবিষ্যতের রাস্তায় অনেক কাটা জন্মাবে আপনাদের বিদ্যাবুদ্ধির বেলুন ফুটা করার জন্য।
২.
পুনর্গঠনের দুটি মাত্রা ধরা যেতে পারে। মূলত একটা স্কেল আমরা কল্পনা করতে পারি। মিনিমাম টু ম্যাক্সিমাম।
যেটুকু না করলে একই ধরনের constitutional crisis চলতে থাকবে তা ঠিক করা হচ্ছে মিনিমাম। যেমন - ১. দুই মেয়াদের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না। ২. অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন ছাড়া কেউ সরকার গঠন করতে পারবে না। ৩. বিচার বিভাগকে কার্যকরভাবে স্বাধীন করতে হবে। ৪. সংসদ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। ৫. বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যাবে না। ৬. রাষ্ট্রীয় আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। ৭. গণভোট ব্যতীত সংবিধান সংশোধন করা যাবে না।
এসবের সাথে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেরামত করার বিকল্প নেই।
এই মিনিমাম পুনর্গঠনের কাজ সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করে তথা বিদ্যমান সংবিধানের সংশোধনের মাধ্যমে করা বিপদজনক। ১৯৯০ এর পর যে বিপদ বাংলাদেশে constitutionalismএর ক্ষেত্রে হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি ঠেকানোর আর কোন উপায় থাকবে না। ১৯৯০ এ যদি সংবিধানের ধারাবাহিকতা নামের দুর্বল রাজনৈতিক সমাধান পরবর্তীতে একাধিক জটিলতা তৈরি করেছে। আর জুডিশিয়ারি রাজনৈতিক গঠনের প্রশ্নে সম্পৃক্ত হওয়ায় constitutional crisis এবং political crisis আরো তীব্র হয়েছে। কাজেই এই মিনিমান পুনর্গঠনও আমাদের নতুন গঠনতন্ত্রের মাধ্যমেই করতে হবে। এই মিনিমান পুনর্গঠনে অনাগ্রহী হলে constitutional moment মিস তো করবোই, একই সাথে পুনরায় constitutional crisis এর মধ্যে প্রবেশ করবো। কাজেই এই মিনিমাম পুনর্গঠনের বিকল্প নেই আমাদের।
কিন্তু আমাদের তরুনরা সম্ভবত আরো অ্যাম্বিশাস, ইমাজিনিটিব, এন্ড ক্রিয়েটিব। অল্পে তুষ্ট হওয়ার বাঙালি দুর্বলতা তারা অতিক্রম করে ফেলছে। অন্তত জুলাই বিপ্লব তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। কাজেই ম্যাক্সিমাম একটা গঠন নিয়ে আমাদের চিন্তা করার সুযোগ রয়েছে। (আমি পুনর্গঠন বলছি কারন ৭১ এর অসমাপ্ত বা বেহাত গঠনকে আমি গঠনই মনে করি।)
ম্যাক্সিমাম পুনর্গঠন যদি চিন্তা করি তাহলে আমাদের আরো নতুন কিছু বিষয় অ্যাড্রেস করতে হবে। জনগোষ্ঠী হিসেবে রাজনৈতিক সৃজনশীলতার পরীক্ষা দিতে হবে। পৃথিবীকে প্রেরণার অধিক কিছু দেবার সময় বাংলাদেশের জনগণের হাতে এই মুহূর্তে রয়েছে। নতুন যেসব বিষয় অ্যাড্রেস করতে হবে তার মধ্যে - digital constitutionalism আর ecological constitutionalism দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তথ্য প্রযুক্তির অগ্রগতিকে রাষ্ট্রীয় জীবনের মূলনীতিতে কিভাবে রাখা যায়, আর পৃথিবীর জীবাশ্মজ্বালানি নির্ভর সভ্যতাকে কিভাবে অতিক্রম করে রাষ্টৗয় জীবন পুনর্গঠন করা যায় তার নমুনা বাংলাদেশ পৃথিবীকে দেখাতে পারে। নিশ্চয়ই এই ইমাজিনিটিব শক্তিকে ব্যবহার করতে গেলে আমাদের বিদ্যমান অনেক র‌্যাডিকাল প্রস্তাব এবং ধ্যান-ধারনার মুখোমুখি হতে হবে। সেগুলোকে অ্যাড্রেস করে একটা রাষ্ট্রীয় জীবনের ঐকমত্যে পৌছানো সময় সাপেক্ষ বা জটিল মনে হতে পারে। কিন্তু জটিলও কাজও জরুরি। সবচে কম জটিল ছিল অটোক্রেটিক রাষ্ট্রকাঠামোর হাতে মুখবুজে ধুঁকতে ধুঁকতে মৃত্যুবরণ করা!
বাংলাদেশের সামনে পৃথিবীর বহুজনপদকে পথ দেখানোর সুযোগ হতে পারে সেই বন্ধুর পথ। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার গলি এই জনগোষ্ঠীর জন্য খুব ছোট। এই জনপদ অবিরাম লড়াই করে করে তাদের আকাংখ্যা, কল্পনা, এবং সৃজনশীলতার সময়ে পৌঁছেছে। এই মুহুর্ত হারাবো?
-
মহানগর
১৬ অগাস্ট ২০২৪

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

Wednesday, August 14, 2024

রিমান্ডকেই আমরা যেন বিচার এবং শাস্তি মনে না করি

রিমান্ড বাংলাদেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার সবচে অপব্যবহার হওয়া একটা প্রক্রিয়া। যদিও এর আইনগত অর্থ আর ব্যবহারিক অর্থ সম্পূর্ণ আলাদা। অটোক্রেটিক শাসন সবচে বেশি যেই প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করে মানুষের আইনগত, সাংবিধানিক, এবং মানবিক অধিকারকে অস্বীকার করেছে তার একটি হচ্ছে রিমান্ড।
এই ব্যবস্থা একই সাথে বাংলাদেশের পুলিশ ব্যবস্থাকেও অন্যায্য ও বেআইনি আচরণের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
আমরা আসলেই পুলিশ এবং বিচার ব্যবস্থার সংস্কার চাই কিনা তা পরীক্ষার সময় তৈরি হয়েছে। এই পরীক্ষায় পাশ করলেই বোঝা যাবে আমরা রাষ্ট্র সংস্কারের সঠিক রাস্তায় এগুচ্ছি। সত্যিকার অর্থেই আমরা অটোক্রেসির বিচারিক এবং প্রশাসনিক যন্ত্রপাতি ও প্রক্রিয়ার বাতিল করতে চাই কিনা। এবং অভিযুক্ত এমনকি অপরাধীসহ সকলের প্রাপ্য মানবাধিকার নিশ্চিত করতে চাই কিনা।
জনাব সালমান এফ রহমান এবং জনাব আনিসুল হককে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ডিবি পুলিশের পেশ করা দশ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। আদালতে তাদের কোন আইনজীবী ছিলেন না; এমনকি কোন পাবলিক প্রসিকিউটরও এপিয়ার করেন নি। যে মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে সে মামলার বাদী আদালতে উপস্থিত হয়ে হত্যা মামলার বিচার চেয়েছেন।
এই ঘটনাকে ঘিরে কয়েকটি বিষয় নোট করে রাখছি।
১. ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে সংস্কার করতে হলে রিমান্ডে নিয়ে কাউকে নির্যাতন করা যাবেনা। বাংলাদেশ ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার (UNCAT) এর একটি পক্ষ। বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানেও এ সংক্রান্ত মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা রয়েছে। এছাড়া এসবের বিরুদ্ধে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ কার্যকর রয়েছে বাংলাদেশে।
এসব রাষ্ট্রীয় দায়, সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার, এবং আইন থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে একটি অটোক্রেটিক শাসন তৈরি করা এবং টিকিয়ে রাখা হয়েছিল। বাংলাদেশে এমন নাগরিক খুঁজে পাওয়া কঠিন, যিনি মনে করেন রিমান্ডে নির্যাতন করা হয় না। রিমান্ড মানেই মানুষের কাছে এক ভয়ংকর পুলিশি নিপীড়নের নাম। আমাদের পুলিশ ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা এবং ভালবাসা নষ্ট করার একটি প্রক্রিয়া হচ্ছে রিমান্ড। যদিও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়, জিজ্ঞাসাবাদের সময় কোন নিপীড়ন হয়নি এই বিশ্বাস তৈরি করতে হবে।
তা তৈরির জন্য প্রথমত বিদ্যমান আইন (আদালতের নির্দেশনাসহ) মেনে চলতে হবে। আদালতের একটি দায়িত্ব রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করার পর আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে মর্মে বিশ্বাস করার কোন কারন থাকে, তবে আদালত দণ্ডবিধির ২২০ ধারার অধীনে তদন্তকারী পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। (বাংলাদেশ বনাম ব্লাস্ট, ২০২৬)।
এমন আরো বিভিন্ন আইনি প্রতিকারের ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশের ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়াকে আইনানুযায়ী পরিচালনারা জন্য এসব প্রতিকার বাস্তবায়ন করতে হবে। নয়তো বিচার ব্যবস্থার উপর জনগণের আস্থা বাড়ানো কঠিন হবে।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, রিমান্ডকেই আমরা যেন বিচার এবং শাস্তি মনে না করি। রিমান্ডসহ কোন অবস্থাতেই নির্যাতন যেমন আইনসম্মত নয়, তেমনি রিমান্ডও বিচার নয়। বরং জিজ্ঞাসাবাদ হচ্ছে বিচার প্রক্রিয়ার একটি প্রাথমিক ধাপ।
২. এক্ষেত্রে যে চর্চা রিমান্ডের ক্ষেত্রে শুরু করা যায় তা হচ্ছে - সচ্ছতার জন্য রিমান্ডে/ পুলিশের হেফাজতে থাকার সময়েও আইনজীবী এবং পরিবারের সাথে যোগাযোগ ও সাক্ষাতের সুযোগ দিতে হবে। আরো ভাল হবে যদি আইনজীবী দেখতে পান - হতে পারে মিউটেড ভিডিওর মাধ্যমে - এমন পরিবেশেই কেবল জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে। এতে পুলিশের কাছে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে প্রাপ্ত তথ্যের সাক্ষ্যগত মূল্য বৃদ্ধি পাবে। যদিও বর্তমানে সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী পুলিশের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।
৩. এছাড়া গ্রেফতার হওয়া সকলের ক্ষেত্রেই আদালতের শুনানির সময় আইনজীবী রাখতে হবে। যদি কোন আসামীর আইনজীবী না থাকে তবে তার জন্য সরকারি আইনসহায়তার জন্য তালিকাভূক্ত কোন আইনজীবী নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। আদালত অন্তত সেই সুযোগটুকু যেন গ্রেফতার হওয়া সকলকেই দেন।
৪. আরেকটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। জনাব সালমান এফ রহমান এবং জনাব আনিসুল হককে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা গিয়েছে। তাদেরকে বেঁধে রাখার প্রয়োজনীয়তা সেসময় ছিল কিনা তার ব্যাখ্যা যারা গ্রেফতার করেছেন তারা দিতে পারবেন। কিন্তু আমরা চাইনা কোন আসামীকেই এভাবে বেধে ছবি তোলা হোক। ছবি তুলে সেই ছবি সংবাদ মাধ্যমে শেয়ার করা একটি বেআইনি কাজ। এসব চটকদার কাজ থেকে বিচার প্রক্রিয়াকে দূরে রাখা আইন-শৃংখ্যলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সাংবাদিক সকলের জন্য জরুরি।
৫. জুলাই ম্যাসাকার এবং পরবর্তী গণ অভ্যুত্থানের ফলে সারা দেশে অনেক মামলা হয়েছে, হচ্ছে, আরো হবে। শুরুর দিকে যেসব মামলা সরকারি উদ্যোগে হয়েছিল সেগুলোতে নিহতদের তথ্য নেই - এমন খবর পত্রিকায় দেখেছি আমরা; বেশিরভাগ এজাহার গতবাধা রাজনৈতিক বর্ণনায় তৈরি ছিল। দুর্বল কিংবা ভুল মামলায় আসামী করার মাধ্যমে বিচারকে নষ্ট করা যেন না হয়। ভুক্তভোগী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, এবং সংবাদ মাধ্যম সহ অন্যরা সত্য তথ্য দেয়ার মাধ্যমে অভিযোগ দিতে পারেন। যাতে করে অপরাধ অনুযায়ী প্রাপ্য শাস্তি দেয়া যায়। এবং তা আমাদের আদালতের মাধ্যমেই। যদি সত্য অপরাধের জন্য তথ্য প্রমাণের ভিত্তি বিচার এবং শাস্তি নিশ্চিত করা যায় তাহলে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো - যেমন জুডিশিয়ারি - শক্তিশালীতো হবেই; রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে যাবে।
/১৪ অগাস্ট ২০২৪

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

Thursday, January 4, 2024

নির্বাচন কেন আায়োজন করা হচ্ছে?

এই প্রশ্নের আনুষ্ঠানিক উত্তর হিসেবে আওয়ামী লীগ সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথা বলে। সংবিধানকে লিগালিটির একটা টেকনিক্যাল টুল হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়া এই যুক্তির আর কোন শক্তিশালী দিক নেই। এই প্রবণতা সংবিধানের জন্য বিপদজনক, এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক। বিপদজনক কারন লেজিটিমেসিহীন এক ধরনের টুল হিসেবে সংবিধানকে ব্যবহার করা সংবিধানের ঘোষিত আদর্শের বিরোধী। এই এবিউসিব সাংবিধানিকতা বাংলাদেশে স্বাভাবিক কারন বাংলাদেশে বর্তমানে একটি সাংবিধানিক সংকট চলছে।

আওয়ামী লীগের বক্তব্য - সংবিধানের বাধ্যবাধকতার কারণে আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করতে হবে।
সংবিধান আওয়ামী লীগকে বাধ্য করতে পারে এমন শক্তি সংবিধানের আছে তা বিশ্বাস করার উপায় কি? এর পক্ষে কোন উদাহরণ পাওয়া কঠিন; বরং আওয়ামী লীগকে সংবিধান, আইন-কানুন, কিংবা কোন বাছ-বিচার দিয়ে দাবায়ে রাখা যায় নাই। আওয়ামী লীগ যে সংবিধান, সাংবিধানিকতা, এমনকি রাষ্ট্রের চেয়ে বহুগুন বড় হয়ে গিয়েছে তা তাদের বিভিন্ন বয়ানের মধ্যে প্রতিদিন জানা যায়। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বাঁচানোর উপায় এই নির্বাচন নয়, বরং এর ফলে আওয়ামী লীগ মোরালি এম্পটি হয়ে যাচ্ছে।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২০১৮-র গান গাচ্ছে - “জিতবে এবার নৌকা”। তখন নৌকা জিতেছে ঠিক; হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১৮র নির্বাচনে যেমন আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্ধী ছিল আওয়ামী লীগের সততা, এবারেও তাই। আওয়ামী লীগ মূলত ২০১৮র নির্বাচনেই মোরালি এম্পটি হয়ে গিয়েছিল। তবে ২০১৮-র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিজেকে বোঝানোর মত সাংবিধানিকতাবাদ আসার আগের দুনিয়ার যুক্তি হিসেবে পাবলিক ওয়েলফেয়ার বা উন্নয়ন ছিল। আওয়ামী লীগ তার মেগা প্রজেক্টগুলো মোটামুটি শেষ করতে পেরেছে। এসব আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। কিন্তু এর বিপরীতে যে ব্যয় বাংলাদেশ রাষ্ট্র এবং তার জনগণকে বহন করতে হচ্ছে তাতে এই পাবলিক ওয়েলফেয়ারের রাজতান্ত্রিক যুক্তি কনভিন্সিং থাকে না।

এছাড়া নির্বাচন হলেই আওয়ামী লীগের লেজিটিমেসি ঠিক হয়ে যাবে এমনটা ভাববার কোন কারন নেই। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন সেটাই যেখানে আওয়ামী লীগ ছাড়াও অন্য কোন দলের জেতার সম্ভাবনা থাকে। আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে যেহেতু আওয়ামী লীগ ছাড়া আর সবগুলো দল মিলেও সরকার গঠনের কোন সম্ভাবনা নেই - তাই এই নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন নয়।

নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় অর্থের যে ব্যয় হচ্ছে - গণতান্ত্রিক নির্বাচন না হওয়ার কারনে সেসব ব্যয় অন্যায্য এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়। নির্বাচন উপলক্ষ্যে clientelism এর চুড়ান্ত চর্চা হিসেবে এ অপচয় / তছরূপ বহুগুণে বাড়ছে। দীর্ঘ মেয়াদে তা রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেরামতের অযোগ্য মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্থ করবে।

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International License.

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম

মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম পরষ্পরকে বিরোধী হিসেবে বয়ানের অন্তত দুইটা ধারা আছে। এই দুই ধারা একে অপরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। একদল মুক্তিযুদ্ধের দখল চায়...